Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

ওয়ানডে ক্রিকেট এখন ঘোর সংকটে?

এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের সময় ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক বেন স্টোকস কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা গাড়ি নই, যে পেট্রোল দিলেই চলব’। এই সময় তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচিকে ‘অস্থির’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, শারীরিক ও মানসিক ধকল কাটাতে ৫০ ওভারের ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। এরপরও ব্যস্ত সূচি সংস্কারের সম্ভবনা কম।

ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) স্কাই টিভির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির আলোকে আন্তর্জাতিক সূচির সম্প্রচার থেকেই আয় করে বছরে ২২৯ মিলিয়ন পাউন্ড। শুধু ইংল্যান্ড নয়, এই খেলার বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত হচ্ছে এই সূচি। ২০১৭ সালের শুরু থেকে ইংল্যান্ড এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে, যা তাদেরকে ভারেতর চেয়ে এগিয়ে রেখেছে। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতের ম্যাচ সংখ্যা ৪৭২।

তবে সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে করোনা মহামারির কারণে স্থগিত ম্যাচগুলোও এই বছরের নতুন সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার নিজের হোম গ্রাউন্ড ডারহামে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ইংল্যান্ড পরাজিত হওয়ার পর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন স্টোকস। ম্যাচে ৩১ বছর বয়সী এই অল-রাউন্ডার ৪৪ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। ব্যাট হাতে করেছেন মাত্র ৫ রান। ওয়ানডে থেকে অবসর নিলেও টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন স্টোকস।

চলতি মাসে ২৫ দিনের মধ্যে ইংল্যান্ডের ১২টি ম্যাচের সূচি আছে। এছাড়া ২০২২ সালের ঘরোয়া মৌসুমে সাতটি ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ডের টেস্ট দল। ইংল্যান্ডের সাদা বলের অধিনায়ক জশ বাটলার স্টোকসের এই অবসর গ্রহনের ঘটনাকে ‘সতর্কবার্তা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই ধারণা করা হচ্ছে যে অন্য ফরম্যাটে লোভনীয় অর্থের দাপটে শেষ পর্যন্ত ছিটকে যাবে ওয়ানডে ক্রিকেট। তারপরও চুড়ান্ত হয়ে আছে ২০২৩, ২০২৭ ও ২০৩১ সালের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ।

একইসঙ্গে ২০২৫ ও ২০২৯ সালে নির্ধারিত হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সূচি। এমতাবস্থায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ। ইতোমধ্যে ঘরোয়া টি-২০ সিরিজের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আগামী জানুয়ারির পূর্ব নির্ধারিত সিরিজ থেকে সরে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অথচ এই কারণে আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিয়ে তাদের ঝুঁকিতে থাকতে হবে।

আগের দিনে ক্রিকেটাররা একসঙ্গে সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই অবসর নিতেন। কিন্তু বর্তমানে স্টোকসের মতো এই ধরনের অবসর গ্রহণের ঘটনা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। আইপিএল ও অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতার কারণে এখন শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটাররা আয়ের জন্য জাতীয় দলের হয়ে খেলার উপর নির্ভরশীল নয়। ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা দুই পেসার জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রড অনেক আগেই সাদা বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। জো রুট দীর্ঘদিন ধরেই কোনো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলছেন না।

তারপরও লাভজনক সূচি কমাতে অনীহা দেখাচ্ছেন ক্রিকেট কর্তারা। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, ইংল্যান্ড ১৮ সদস্যের একটি স্কোয়াড গঠন করেছিল যে দলের ৯ জন খেলোয়াড়েরই এর আগে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না। ইংল্যান্ডে সাধারণত আন্তর্জাতিক ম্যাচের টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্টোকস ও অন্য শীর্ষ তারকাদের অনুপস্থিতিতে দর্শকরা কি দূরে চলে যাবেন? আর কর্মকর্তরা কি অনুপস্থিতি কমানোর জন্য কাজের চাপ কমাবেন?

পরিবর্তনের পথ আদৌ আছে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল আথারটন। তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের মনোযোগ শুধু আরো বেশি ক্রিকেট আয়োজনের মাধ্যমে বেশি অর্থ আয় করার দিকে। তিনি টাইমসে লিখেছেন, ‘উদ্বিগ্ন হবেন না। বিশ্বকাপের এক বছর আগে ৫০ ওভারের ক্রিকেট থেকে স্টোকসের এই অবসর গ্রহন তাদের জন্য পুনর্বিবেচনার একটি অংশও হতে পারে। ‘

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top