আন্তর্জাতিক ক্রিকেটআমিরাতকে গুঁড়িয়ে ফিরল বাংলাদেশ
তারেক মাহমুদ |এই বলটিতে উইকেট পাননি মাশরাফি। তবে মাশরাফির বাংলাদেশ কাল বোলিংয়েই গুঁড়িয়ে দিয়েছে আরব আমিরাতকে l শামসুল হকসংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষেও তাহলে কিছু পেল বাংলাদেশ!
ভ্রু কুঁচকে উঠছে? ভাবছেন, এমন একটা নবীন দলের বিপক্ষে জয়ে আবার প্রাপ্তি কী? রান তো করল মাত্র ১৩৩, সেটাও ব্যাটিংয়ের প্রতি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠিয়ে! এমন জয়ে কিছু পাওয়ার তৃপ্তি খোঁজা আদিখ্যেতার মতো দেখায়। আমিরাতের নির্বিষ বোলারদের সামনে কেন ব্যাটিংটা অমন দৃষ্টিকটু হলো, সেই প্রশ্নই বরং তোলা উচিত।
হ্যাঁ, সে প্রশ্ন তো আছেই। কাল ৫১ রানের জয় পাওয়ার পর সম্ভবত বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমেও প্রশ্নটা বেশ কড়া করে তুলেছেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কিন্তু ১৩৩ রানকেও জয়ের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ করতে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বোলার-ফিল্ডাররা মিলে যে নিবেদনটা ঢেলে দিলেন, সেটাকে উপেক্ষা করা কীভাবে! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখনো পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে উঠতে না পারা বাংলাদেশ দলের জন্য চাপের মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানো অবশ্যই নতুন অভিজ্ঞতা। প্রতিপক্ষ হোক আমিরাত কিংবা ক্রিকেটের কোনো ‘আমেরিকা’, এটাকে প্রাপ্তি বলায় দ্বিধা থাকা উচিত নয়।
তাসকিন আহমেদের প্রথম ওভারেই স্লিপে ওপেনার রোহান মুস্তফার সহজ ক্যাচ ফেলেছেন সৌম্য সরকার। ১৩৩ রানের পুঁজি নিয়ে এ ধরনের ব্যর্থতা সমালোচনার দাবিদার। তবে এই ব্যতিক্রমটি ছাড়া বাংলাদেশ দলের কালকের ফিল্ডিং নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। আর বোলিংটা যে হয়েছে তার চেয়েও দুর্দান্ত, তা তো আমিরাতের ৮২ রানে অলআউট হওয়া স্কোরকার্ডই বলে দিচ্ছে।বোলিংয়ে সবচেয়ে বড় স্বস্তি মুস্তাফিজুর রহমানের ‘প্রত্যাবর্তন’। ভারত ম্যাচে নিজেকে খুঁজে না পাওয়া এই তরুণ পেসার আমিরাতকেই গিনিপিগ বানালেন কাটারের ধার বাড়ানোর কাজে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে তুলে নিয়েছেন পরপর দুই উইকেট, দুটোই অফ কাটারে। রোহান মুস্তফার উইকেটটি অবশ্য তিনি পেয়ে যেতে পারতেন তার আগেই। কিন্তু নিজের বলে দৌড়ে গিয়ে মুস্তাফিজ নিজেই দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিলেও হাত মাটিতে ছুঁয়েছে বলে সেটাতে আউট দিলেন না থার্ড আম্পায়ার।দুই ওপেনারের পর শাইমান আনোয়ারকেও ফিরিয়ে আল আমিন আর মাশরাফি বিন মুর্তজা আগেই দিয়ে রেখেছিলেন তিন ধাক্কা। মুস্তাফিজের কাটারের ফলার সামনে আমিরাত গেল আরও পিছিয়ে। ৩৪ রানে ৫ উইকেট নেই, সেখান থেকে ১৩৪ রানের লক্ষ্য বরফ ঝড়ের মধ্যে হিমালয় টপকানোর মতোই দুরূহ।বোলিংয়ে সাকিব আল হাসানের পারফরম্যান্সকেও ‘ফেরা’ বলা যায়। ভারত ম্যাচে রোহিত শর্মার ক্যাচ ফেলে সমালোচনার তিরবিদ্ধ সাকিব ব্যাট হাতেও জ্বলে উঠতে পারছেন না। আগের ম্যাচে ৩, কাল ১৩। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অলরাউন্ডারদের সুবিধা হলো, তাঁরা কিছু একটা করে অন্তত নাকটাকে অক্সিজেন নেওয়ার মতো অবস্থায় ভাসিয়ে রাখতে পারেন। ২০ রানে ২ উইকেট নিয়ে সাকিব কাল সেই সুযোগটাই নিলেন। বোলিংয়েও যেন ফিরে এসেছে সাকিবসুলভ বুদ্ধিমত্তা।স্তুতি শোনা থেকে মাহমুদউল্লাহই বা কেন বাদ যাবেন? মাত্র ৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে আমিরাতের ওপর বোলারদের শুরু থেকে সৃষ্ট চাপটাকে ধরে রাখতে সাহায্য করলেন তিনিও। তা ছাড়া, ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে তিনিও তো প্রবল এক ব্যতিক্রম!মিঠুনকে নিয়ে অনেক আলোচনা ছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি কিছুটা হলেও দেখাতে পেরেছেন কেন তাঁকে টি-টোয়েন্টি দলে নেওয়া। ৪১ বলে ৪৭ টি-টোয়েন্টিতে এমন কোনো রান নয়। কিন্তু কাল তাঁর ব্যাট থেকে আসা কিছু শট ছিল চোখে আটকে থাকার মতো। ব্যক্তিগত ১০ রানে জীবন ফিরে পেয়ে আমজাদ জাভেদের ওই ওভারেই মিড অন দিয়ে দুর্দান্ত ছক্কা। পরের বলে ফিল্ডারদের বোকা বানিয়ে পয়েন্ট দিয়ে চার। মোহাম্মদ শাহজাদকে ফ্লিক শটে মারা ছক্কাটাকে তো চাইলে ম্যাচেরই সেরা শট বলে দেওয়া যায়।
টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং দেখার তৃষ্ণা মাহমুদউল্লাহও কিছুটা মিটিয়েছেন। মিঠুন-সৌম্যর ৪৬ রানের ওপেনিং জুটি ভালো কিছুর আশা জাগালেও ৮৩ রানের মধ্যে চার ব্যাটসম্যানের বিদায় শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। সেখান থেকে লড়াইটা বলতে গেলে একাই চালিয়ে গেছেন মাহমুদউল্লাহ। সাকিব আল হাসান আরেকটু সংগত দিতে পারলে বাংলাদেশ ইনিংস টেনশনমুক্ত হয়েই শেষ হতে পারত। কিন্তু ‘অপয়া’ ১৩ রানে সাকিব আউট হলেন অদ্ভুত এক বলে। আমজাদ জাভেদের ফুলটস ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে ভেঙে দিল স্টাম্প।মুশফিকুর রহিমের আউটের পর ১৩তম ওভারে উইকেটে এসে দ্বিতীয় স্কোরিং শটেই ছক্কা। ব্যাটিংয়ে এই আক্রমণের ধার মাহমুদউল্লাহ ধরে রাখলেন অপরাজিত ৩৬ রানের ইনিংসের শেষ পর্যন্ত। অফ স্পিনার রোহানের শেষ ওভারে আসা ১৭ রানের ১৭-ই তাঁর। আগের পাঁচ ওভারে মাত্র ২০ রান আসায় শেষ পাঁচ ওভারের জন্য বাংলাদেশ ইনিংসের ওপর যে লঘু চাপটা তৈরি হয়েছিল, মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং দূর করে দিল সেটা। সঙ্গী ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে খুব ভালো সমর্থন না পেলেও তাঁর কারণেই শেষ পাঁচ ওভারে যোগ হলো ৩৯, যার ২৭-ই মাহমুদউল্লাহর।
বলা বাহুল্য, ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটাও উঠল তাঁর হাতেই।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আমিরাতকে গুঁড়িয়ে ফিরল বাংলাদেশ
Share!