যশোরের মণিরামপুরে পূর্ণিমা দাস (৪৫) নামে এক গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গ্রাম্য সালিসে বিচার না পেয়ে লজ্জায় ওই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের। সোমবার (৭ মার্চ) নিজ বাড়িতে বিষপানে আত্মহত্যা করেন তিনি।
পূর্ণিমা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর ঋষিপলির সনজিৎ দাসের স্ত্রী।
ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
এদিকে, ধর্ষণচেষ্টার ঘটনার সালিস করতে গিয়ে ফেঁসেছেন মনোহরপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ফকির, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গোলাম মোস্তফা ও মনোহরপুর গ্রামের স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহায়ক আবুল সরদারসহ চারজন। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।
অন্যদিকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে মেম্বর সিরাজুল ফকিরের ভাই মিজানুর ফকিরের বিরুদ্ধে। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে গৃহবধূর স্বামী সনজিৎ দাস বাদী হয়ে ৫ জনের নামে থানায় মামলা করেন।
সোমবার রাতে সিরাজুল ফকির, আবুল সরদার ও আসাদুজ্জামান আসাদ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে হেফাজতে নেয় থানা পুলিশ। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় আজ দুপুরে পুলিশ আসাদুজ্জামান আসাদকে ছেড়ে দিয়েছে। সিরাজুল ও আবুল সরদারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।
জানা যায়, গত শনিবার রাতে মনোহরপুর ঋষিপলির বাসিন্দা পূর্ণিমা দাসকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় স্থানীয় মিজানুর ফকির। পরদিন রবিবার স্বামী সনজিৎ দাসকে নিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে আসেন পূর্ণিমা। অভিযোগপত্র লেখার পর সনজিৎ দাসের কাছে এলাকা থেকে ফোন করেন মনোহরপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ফকির। মোস্তফা পূর্ণিমা দাসের ওয়ার্ডের মেম্বর আর সিরাজুল ফকির ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত মিজানুর ফকিরের ভাই। তারা সনজিৎ ও তার স্ত্রীকে এলাকায় ডেকে নিয়ে স্থানীয়ভাবে সমাধানের কথা বলে অভিযোগপত্রটি ছিঁড়ে ফেলেন।
পূর্ণিমার স্বামী সনজিৎ দাস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ফিরে গেলে অভিযুক্ত মিজানুর ফকিরকে বাদে রবিবার (৬ মার্চ) রাতে সালিসে বসেন সিরাজুল মেম্বার, মোস্তফা মেম্বার ও আবুল সরদারসহ কয়েকজন। সালিসে তারা পূর্ণিমাকে অপমানজনক নানা কথা বলেন। অভিযুক্ত মিজানুর উপস্থিত না থাকায় সালিস হয়নি।
এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে পরদিন এলাকায় হইচই পড়ে যায়। বিচার না পেয়ে সোমবার বেলা ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে কীটনাশক পান করেন পূর্ণিমা। পরে তাকে স্থানীয় এক চিকিৎকের কাছে নিলে তিনি পূর্ণিমাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে সোমবার বিকেলে পুলিশ পূর্ণিমার লাশ হেফাজতে নেয়। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন পূর্ণিমার স্বামী সনজিৎ।
গ্রেপ্তার সিরাজুল ফকিরের স্ত্রী দিলরুবা খাতুন বলেন, অভিযুক্ত মিজানুর আমার স্বামীর চাচাতো ভাই। ঘটনার পর থেকে মিজানুর পলাতক। সেদিনের সালিসে আমার স্বামী যেতে চাননি। মিজানুরের ছেলে আল আমীন এসে হাত-পা জড়িয়ে ধরে আমার তাকে সালিসে নেছে। তিনি এ সব ঘটনার সাথে জড়িত না।
মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর-ই-আলম সিদ্দীকি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।