করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রবিবার অবশেষে খুলে দেয়া হচ্ছে। কোটি শিক্ষাথীর দেড় বছরের আক্ষেপ শেষ হচ্ছে আগামীকাল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় খুশিতে উচ্ছ্বসিত শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণায় সর্বত্র চলছে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন কাজ। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ধুলাবালি- ময়লা-আবর্জনা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের আঙিনা, চেয়ার, বেঞ্চ অকেজো হয়ে পড়েছে। পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে জেলা-উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিচ্ছন্নতার কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল সারাদেশে বেজে উঠবে স্কুলে ঘণ্ট।
কখন কোন ক্লাস নেয়া হবে: করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর তিন ফুট দূরত্ব রেখে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসানো হবে। ২০২১ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয় দিন এবং ২০২২ সালের পরীক্ষার্থীদের দুই দিন করে ক্লাস নেওয়া হবে। এছাড়া অন্যান্যস্তরের ক্লাস একদিন করে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে নেওয়া হবে।
শিক্ষকরা মৌলিক ক্লাস রুটিনকে অনুসরণ করে তারা ক্লাস করাতে সম্মতি প্রকাশ করেছেন।
নতুন ক্লাস রুটিনে দেখা গেছে, ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার দুটি বিষয়ের চারটি ক্লাস নেওয়া হবে। ২০২২ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শনিবার ও রোববার দুটি বিষয়ের চারটি ক্লাস হবে।
এছাড়া ৬ষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস সোমবার, ৭ম শ্রেণির মঙ্গলবার, ৮ম শ্রেণির বুধবার ও ৯ম শ্রেণির ক্লাস বৃহস্পতিবার নেওয়া হবে। মাধ্যমিকের সকল স্তরে প্রতিদিন দুটি বিষয়ের চারটি করে ক্লাস করানো হবে।
ক্লাস নেয়ার জন্য রুটিনে দুটি শিফট করা হয়েছে, সেখানে স্কুল-কলেজে প্রভাতী শিফট সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হয়ে বেলা ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ও দিবা শিফট দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়ে ৪টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সংক্রমণ থেকে রক্ষার্থে স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব মেনে শ্রেণি পাঠদান নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ১১ নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
নির্দেশনাগুলো হলো-
১. আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সব পর্যায়ের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মাদরাসাগুলোর শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক তদারকি করবে।
২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের লক্ষ্যে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।
৩. এ বছর ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের এবং প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। বাকি শ্রেণিগুলোর শিক্ষার্থীদের ক্লাস সপ্তাহে এক দিন করে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরে তা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে।
৪. এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস কিছু দিন পরেই শেষ হয়ে গেলে নবম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে।
৫. পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণির জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষার প্রস্তুতি থাকবে। পরিস্থিতি অনুকূল হলে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
৬. প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস আপাতত বন্ধ থাকবে।
৭. যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
৮. বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. কোন স্থানে করোনা সংক্রমণের অবনতি বা বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসন বা শিক্ষা বিভাগকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।
১০. বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার বিষয়ে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
১১. বারো বছরের বেশী বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদানের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এর আগে, ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠান শেষে দীপু মনি বলেন, সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছেঠ। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে।
এদিকে স্কুল না খুলতেই গতকাল শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্ব) এক বিবৃতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লে আবার বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকা দিতে এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে অনুমতি আসেনি। অনুমতি দিলে শিশুদের টিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিশুদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় অনেক কম।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ওই বছরের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি।
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে গতি আনতে নানা পদক্ষেপ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে তাতে তেমন গতি ফেরেনি। এর মধ্যেই বাতিল কিংবা স্থগিত হয়ে যায় নানা স্তরের পরীক্ষা। ২০২০ সালের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
গত বছরের পরীক্ষা না নিয়েই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ফল এ বছরের জানুয়ারিতে ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়। তবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আওয়াজ জোরালো হচ্ছিল। এরই মধ্যে গত রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সুখবর দিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি । তিনি জানালেন আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এ তথ্য জানান মন্ত্রী।