এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া নাটকগুলোর মধ্যে আলোচনার শীর্ষ তালিকায় রয়েছে ‘আপন।’ এখন পর্যন্ত নাটকটি দেখেছেন ৩০ লাখের বেশি মানুষ। শুধু ইউটিউবে দর্শক উন্মাদনায় রীতিমতো মুগ্ধ নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি।
নির্মাতা এই নাটকের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত। তার ব্যাচেলর পয়েন্ট ধারাবাহিক নিয়ে দর্শক উন্মাদনা নিয়ে কমতি নেই। অবশ্য সমালোচকরা অমিকে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ধারাতেই সফল মনে করে পভিমত জানানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সমালোচকদের চিন্তাকে ভুল প্রমাণ করেছেন অমি। কেননা এবার ঈদে অমি একদম ভিন্ন ধারার দুটি নাটক বানিয়েছিলেন। যেটা অমির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
যে সকল সংস্কৃতি গণমাধ্যমকর্মী নিয়মিত নাটকপাড়া খেয়াল রাখেন, তারা নজর রেখেছিলেন অমির ওপর। কেননা একটা জনপ্রিয় সিরিজ শেষ করে সম্পুর্ণ আলাদা স্রোতে ঢুকে পড়েছিলেন অমি। এখানে মুখ থুবড়ে পড়ার চান্স থাকে। ‘এক পাড়ার মাস্তান আরেকপাড়ায় গিয়ে মাস্তানি করতে পারে না’ এই তত্ত্বকে অমি যেন নিমিষেই ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলেন। কর্পূরের মতো মিশে গেল শূন্যে।
এবারের ঈদে অমি নির্মাণ করেছিলেন পারিবারিক আবহের গল্প নিয়ে ‘আপন’ আর ভৌতিক গল্প নিয়ে নির্মাণ করেছেন। এই চ্যালেঞ্জ উৎরে গেছেন অমি শুধু সফল নয় বেশ ভালোভাবেই। দর্শকেরা দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন নাটক দুটি। অদ্ভুত নাটকটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ দেখেছেন।
আপন নাটক নিয়ে একটা আবেগের গল্প ছিল অমির। সেটিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। নাটকের প্রতিটি চরিত্রকে বিশ্লেষণ করে ধন্যবাদ দিয়েছেন। যেমন অমি বলেন, আপন এর গল্পটা মাথায় আসার পর ঠিক যাদের মুখ প্রথম চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল, আমি ভাগ্যবান যে, কাজটা করার জন্য তাদের সহযোগীতাই পেয়েছি। তারিক আনাম স্যারকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমাকে বিশ্বাস করার জন্য। বৃষ্টি এবং অন্যান্য জটিলতায় আমাদের ভোর পর্যন্ত শুটিং করতে হয়েছে। উনি অসুস্থ শরীর নিয়েও আমাদের সহযোগীতা করেছেন, এত বড় মাপের একজন গুণী অভিনেতার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে একদমই প্রেশার ফিল করিনি, মনে হয়েছে আমরা খুব কাছের। যখন যেভাবে চেয়েছি, ঠিক সেভাবেই পেয়েছি।
মনিরা মিঠুকে নিয়ে বলেন, ‘মিঠু আপা আমাকে এত বেশি বিশ্বাস করে এবং ভালোবাসে, তার সাথে কাজ করতে গেলে আমি প্রেশার ফিল করি। সবসময় মনে হয়, ডিরেক্টর হিসেবে আমি তাকে কি দিচ্ছি ! তাকে কিভাবে অন্য সবার চেয়ে আলাদা ভাবে প্রেজেন্ট করা যায়। আমার কল্পনার চরিত্রকে ছাড়িয়ে অভিনয় করে যান তিনি সব সময়ই, আমাদের মিঠু আপা।’
তিনি বলেন, শামীমা আপা আমার খুবই পছন্দের একজন অভিনেত্রী। খুবই বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় করেন তিনি। ধন্যবাদ আপা এতটা পরিশ্রমের জন্য। ফারিন, ‘X-Boyfriend’ থেকে ‘আপন’ , ওকে দেখে সত্যি মনটা ভরে যায়। মানুষ কষ্ট করলে সত্যি তার কেষ্ট মেলে। ফারিনকে দেখে আমি শিখি, কিভাবে মানুষ পরিশ্রম করে নিজের অবস্থান তৈরি করে। অসংখ্য ভালবাসা তোমাকে, আমার চরিত্রটি জীবন্ত করার জন্য। তুমি অনেক দূর যাবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
পাভেল একজন বাধ্যগত ছাত্র। প্রচুর পরিমানে শেখার চেষ্টা রয়েছে ওর। এই চেষ্টাই একদিন পাভেলকে সাফল্যের চূড়ায় পৌছে দেবে, আমার বিশ্বাস।
পলাশের চরিত্রটি ছোট, কিন্তু যতক্ষন স্ক্রিনে থাকে ততক্ষন সবাইকে মাতিয়ে রাখে। ও কখনো ভাবেনি, আমার চরিত্র কি! আমার নায়িকা কে! আমার দৃশ্য কয়টি! ও শুধু ভাবে অমি ভাই কি বলেছে! একজন সহকারী পরিচালক থেকে আজকে জিয়াউল হক পলাশ। ও আসলে আমার গর্ব ।
অমির সবচেয়ে বড় সমালোচক আফ্রান নিশো। অন্তত নির্মাতা তাই মনে করেন। অমি বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় সমালোচক। আমার যেকোন কাজের ভুলত্রুটি বের করে আমার রাতের ঘুম হারাম করে দেয়া মানুষ তিনি। নিশো ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুন তিনি আমার গল্পের লু-ফল খুজে বের করেন। আমরা যখন কোন গল্প ভাবি, তারপর স্ক্রিপ্ট করি, গল্পটার সাথে বসবাস করতে করতে গল্পটার এতটাই কাছে চলে যাই যে গল্পের দূর্বলতা গুলো আমাদের চোখে পড়ে না। নিশো ভাই সবসময় আমার সেই দূর্বলতা গুলোকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে। একটা দৃশ্য খুব ভাল হবার পর নিশো ভাইকে হাগ দিয়েছি কিন্তু ‘আপন’-এ মিঠু আপার সাথে দৃশ্যটি শেষ করার পর নিশো ভাই আমাকে জরিয়ে ধরে দোয়া করে দেয়। এটা অন্যরকম এক অনুভূতি। আমার যে কোন কাজ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করা মানুষটা যখন আমার কাজের প্রশংসা করে তখন সত্যিই নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়। মনে হয়, হয়তো আমার পরিশ্রম, চেষ্টা সফল হয়েছে। নিশো ভাই তোমাকে কখনো মিস করতে চাই না, সবসময় এভাবেই পাশে চাই, তোমার সমালোচনাই আমার আশীর্বাদ।
ব্যাচেলর পয়েন্টের একেকটি এপিসোড টেলিভিশনে প্রচারের পরেও মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ দেখতেন। এখনো দর্শকেরা দাবি করছেন সিজন ৪ কবে দেখতে পারবেন। আদতে সিজন ৪ আসবে কি না, এখনো ঝেড়ে কাশছেন না নির্মাতা।