Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

রিমান্ডে নারীকে যৌন নির্যাতন বরিশালে : অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ আদালতের

বরিশালে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে তাকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এক নারী আসামি। তার এই অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বরিশালের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩ আদালতের বিচারক মাহফুজুর রহমান।  গত শুক্রবার আসামির অভিযোগ আমলে নিয়ে এ আদেশ দেন তিনি।
তিনি নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নির্যাতনের চিহ্ন ও নির্যাতনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। আদালতে প্রতিবেদন দিতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে বলা হয়েছে।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর বেঞ্চ সহকারী নাহিদা খানম বিষয়টি গতকাল গণমাধ্যমকে জানান. ওই নারী আসামি বরিশালের উজিরপুর থানায় রিমান্ডে নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ আনলে বিচারক ঘটনাটি তদন্তের আদেশ দেন। একই সঙ্গে বরিশালের পুলিশ সুপারকে হত্যা মামলাটি তদন্ত করতে বলেন আদালত।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন গতকাল শনিবার আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবেদন দিয়েছি। ওই নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল তিনি কারাগারে ফিরে গেছেন।’
আদালত সূত্র জানায়, গত ২৮শে জুন ওই নারীকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে উজিরপুর থানায় নিয়ে যাওয়ার পরপরই এক নারী পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে তাঁর ওপর নির্যাতন চালান।

পরে উপস্থিত অন্য পুলিশ সদস্যরাও তাঁকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন। তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয় এবং ২৯ জুন তাঁকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
আদালতে ওই নারী আসামি অভিযোগ করেন, ২৯ জুন রিমান্ডে নেওয়ার পর তাঁকে মারধর না করা হলেও পরের দিন সকালে তাঁকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কক্ষে পাঠানো হয়। সেখানে তাঁর ওপর যৌন নিপীড়ন চালানো হয়। এরপর এক নারী পুলিশ সদস্যকে ডেকে নিয়ে তাঁকে আবার লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই তাঁকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে পেটান। তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর তিনি নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় দেখতে পান।

তবে এই হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উজিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক মাইনুল হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ২৬শে জুন উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি গ্রামে একটি ডোবা থেকে বাসুদেব চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বাসুদেবের ভাই পরের দিন ওই ডোবাসংলগ্ন বাড়ির এক নারীকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় ২৮ জুন ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ জুন তাঁকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। রিমান্ড শেষে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়।
মাইনুল হোসেন দাবি করেন, রিমান্ডে নিয়ে ওই নারীকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। এসব অভিযোগ একবারেই মিথ্যা।
হত্যা মামলার বাদী বরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘আসামি আদালতে নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন বলে শুনেছি। তবে বিস্তারিত কিছু জানি না।’
প্রসঙ্গত, এক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে গত ২৫ জুন শুক্রবার গভীর রাতে বরিশালের উজিরপুরের জামবাড়ি এলাকায় বাসুদেবকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। উজিরপুর মডেল থানার পুলিশ পরের দিন তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top