সাফল্যের পাশাপাশি রবিউল ইসলামের ক্লান্তিহীন বোলিংও কখনো ভোলার নয়। ২০১৩-র জিম্বাবুয়ে সফরে দুই ম্যাচ মিলিয়ে ১১০ ওভার বোলিং করে এই পেসারের ১৫ উইকেট নেওয়া এখনো কোনো বাংলাদেশি বোলারের অন্যতম সেরা টেস্ট পারফরম্যান্স হয়ে আছে। অবশ্য তাঁর সঙ্গে আরেকটি নামও উচ্চারিত হওয়া জরুরি বলে মনে করেন হাবিবুল বাশার, ‘শিবলুর (রবিউলের ডাকনাম) বোলিং তো মনে আছেই। মনে আছে জিয়ার (জিয়াউর রহমান) বোলিংও। জিয়াও আমাদের একটি টেস্ট ম্যাচ জিতিয়েছিল।’
সেটি ছিল হারারেতে সফরের দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম ইনিংসে রবিউল নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। তাঁর মতোই ডানহাতি পেসার জিয়া পরের ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়ায় মুখরক্ষা হয়েছিল বাংলাদেশেরও। ১৪৩ রানের জয়ে সমতা নিয়ে দুই টেস্টের সিরিজ শেষ করে আসতে পেরেছিল। হারারেতে ঠিক আগের টেস্টেই ৩৩৫ রানে বিধ্বস্ত হয়েছিল সফরকারীরা। সেবার তবু দুই ম্যাচের সিরিজ ছিল। এর দুই বছর আগে (২০১১) সেই হারারেতেই একমাত্র টেস্টে ১৩০ রানের হার এখনো বাংলাদেশের জন্য দুঃসহ এক ক্ষতই হয়ে আছে। এবার যখন আট বছর পর আজ ভোরে আবার জিম্বাবুয়ে সফরে রওনা হয়ে গেল মমিনুল হকের দল, তখন নির্বাচক হাবিবুলের কণ্ঠে আকুতি, ‘আমি দেখতে চাই, বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচটি জিতছে। সেটি তাসকিন জেতাক বা সাকিব। ব্যাটসম্যান, পেসার বা স্পিনার—যে-ই জেতাক না কেন।’
বাংলাদেশের নিজেদের আঙিনায় জিম্বাবুয়ে সহজ শিকার হলেও তাদের ডেরায় ব্যাপারটি এত সহজ নয় বলেই একমাত্র টেস্টটি জিততে এত মরিয়া এই সাবেক অধিনায়ক। সম্প্রতি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পাকিস্তানকেও মাটিতে নামিয়েছে জিম্বাবুয়ে। টেস্টে রুখে দিয়েছে শ্রীলঙ্কাকেও। সেই দলের বিপক্ষে এবার সব খেলাই হারারেতে হওয়ায় কাজটি আরো কঠিন বলেই মনে হচ্ছে হাবিবুলের, ‘বিশেষ করে হারারে আমাদের জন্য কঠিন। বুলাওয়েতে খেলা হলে একটু সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু হারারে আমাদের সব সময়ই কঠিন সময় উপহার দেয়। যতবারই খেলতে গিয়েছি, হারারেতে আমাদের জন্য সহজ হয়নি।’
কেন এমন হয়? সে ব্যাখ্যাও আছে হাবিবুলের কথায়, ‘বাস্তবতার নিরিখে আমরা জিম্বাবুয়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা একটি দল। কিন্তু খেলা যখনই হয় হারারেতে, পার্থক্যটা কমে আসে। কন্ডিশন এবং ওদের নিজেদের মাঠ মিলিয়ে হারারেতে আমাদের কাজ ওরা সব সময়ই কঠিন করে তোলে। উইকেট-কন্ডিশন সব কিছু মিলিয়ে। বুলাওয়ের কন্ডিশন আমাদের সঙ্গে কিছুটা যায়, হারারের কন্ডিশন একদমই তা নয়।’ এ ক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা, ‘বুলাওয়ের উইকেট আমাদের দেশের মতোই। একটু রাফ থাকে। তবে হারারেতে উইকেট সিমিং। লেট মুভমেন্ট থাকে। সবাই বলে যে জিম্বাবুয়ে সহজ প্রতিপক্ষ। কিন্তু হারারেতে খেলা হলে ব্যাপারটি তা থাকে না। এবার সব খেলাই হারারেতে। টেস্টও একটিই।’ তা থেকে ভালো কিছু পেতে মাথা থেকে ‘নিজেদের মাঠে সহজ শিকার জিম্বাবুয়ে’ ভাবনাও ছেঁটে ফেলায় জোর দিচ্ছেন এই নির্বাচক, ‘জিম্বাবুয়েকে হালকাভাবে নিলে আমাদের জন্য কাজ আরো কঠিন হবে। জিততে এবং ভালো করতে চাইলে অবশ্যই আমাদের নিজেদের সেরাটি দিতে হবে।
এ রকম চিন্তার অবকাশ নেই যে আমরা যাব, খেলব এবং জিতে চলে আসব। জিততে গেলে আমাদের টপ অব দ্য গেম থাকতে হবে।’ সেটি শুধু টেস্টেই নয়, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। এ জন্যই মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে শুধু হারারে নয়, ২০১৩-র সফরে বুলাওয়েতেও গিয়েছে কঠিন সময়। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হারতে হয়েছিল ২-১-এ। সেবার দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ।