Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্রের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ মুসলিম বিশ্ব

ইসলামকে সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত করা এবং মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্রের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে মুসলিম দেশগুলোতে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। উত্তেজনা দেখা দিয়েছে তুরস্ক ও ফ্রান্সের মধ্যে। মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র অনুমোদনের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের নিন্দা জানানো হয়েছে তুরস্কের পার্লামেন্টে। ওদিকে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের পরবর্তী সামিটে তুরস্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স। ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন ও ‘ইসলাম সঙ্কটময় অবস্থায় আছে’- ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মুসল্লি। সৌদি আরবেও এর ঢেউ লেগেছে। ইসলাম ইস্যুতে তেহরানে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ইরান। অনলাইন আল জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ঢাকায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তারা ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন। এ সময় তারা প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুলিশ জানিয়েছে এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন কমপক্ষে ৪০ হাজার মানুষ। ফরাসি দূতাবাসমুখী তাদের বিক্ষোভকে এক পর্যায়ে পুলিশ বাধা দিয়ে থামিয়ে দেয়।

উল্লেখ্য, ফরাসি একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদেরকে মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করে শিক্ষা দিচ্ছিল ইতিহাসের শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি। এ জন্য ১৬ই অক্টোবর স্কুলের কাছে দিনের বেলায় তার শিরñেদ করে এক চেচেন যুবক। পরে পুলিশ তাকে হত্যা করে। ওই সময় থেকেই এটাকে ইসলামপন্থি সন্ত্রাস আখ্যা দিচ্ছেন ফরাসি কর্মকর্তারা। তারা ইসলামের সঙ্গে যুক্ত করে দিচ্ছেন সন্ত্রাস। এর বিরুদ্ধে প্রথমে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান। তারপর নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ইসলাম ইস্যুতে ইমানুয়েল ম্যাক্রনের অবস্থানের জন্য তার মানসিক রোগ চিকিৎসার তাগিদ দেন এরদোগান। সৌদি আরব ও ইরান সহ মুসলিম বিশ্ব, নেতারা ফ্রান্স এবং ম্যাক্রনের নিন্দা জানিয়ে আসছেন। দেশে দেশে ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও এমন ডাক দিয়েছেন মুসল্লিরা।

মালয়েশিয়ার নিন্দা
স্যামুয়েল প্যাটিকে হত্যার পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান শত্রুতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামুদ্দিন হোসেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, উস্কানিমুলক বক্তব্য ও প্ররোচণামুলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ধর্ম হিসেবে ইসলামকে অবমাননা করা হচ্ছে। নীতিগতভাবে আমরা কঠোরভাবে এর নিন্দা জানাই। উল্লেখ্য মালয়েশিয়ায় শতকরা ৬০ ভাগের বেশি মানুষ মুসলিম। এ ছাড়া এখানে বসবাস করেন বিভিন্ন ধর্ম, জাতির মানুষ। হিশামুদ্দিন বলেছেন, বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে যাবে মালয়েশিয়া।

উদ্ভূত সংঘাত নিরসনের আশা করে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র আশা প্রকাশ করেছে যে, ন্যাটোর মিত্র ফ্রান্স ও তুরস্ক উত্তেজনা নিরসন করবে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, মিত্রদের মধ্যে অপ্রয়োজনে সংঘাত শুধু আমাদের প্রতিপক্ষকেই সুবিধা দেবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যুক্তরাষ্ট্র।

আপনি সন্ত্রাসে যুক্ত হতে বাধ্য করছেন মানুষকে
চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ কড়া সমালোচনা করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের। বলেছেন, এর মাধ্যমে ম্যাক্রন মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করে মানুষকে উগ্রবাদী হতে অবদান রাখছেন। কারিদভ তার ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন, আপনি মানুষকে সন্ত্রাসে যুক্ত হতে বাধ্য করছেন। মানুষকে এদিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কারণ, তাদের সামনে কোনো বিকল্প রাখেন নি। এর মধ্য দিয়ে যুব সমাজের মাথায় আপনি উগ্রবাদ প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছেন। আপনার নিজের দেশে আপনি নিজেকে জোরালোভাবে সন্ত্রাসের নেতা এবং সন্ত্রাসে উৎসাহকারী হিসেবে ঘোষণা দিতে পারেন।

ফরাসি পণ্য বর্জন, সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র
কাতারের দোকানিরা বলছেন, ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাককে তারা সমর্থন করেন। দেশের একটি সবচেয়ে বড় সুপারমার্কেট চেইনের উল্লেখ করে জসিম ইব্রাহিম শাহবিক বলেছেন, আল মিরার সিদ্ধান্ত আমি সমর্থন করি। আশা করি দেশের অন্য কোম্পানিগুলোও এই উদাহরণ অনুসরণ করবে। কারণ, এটাই হলো আমাদের কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। দোহা’র বাসিন্দা ওমর মোবারক আল আলি বলেন, এই সিদ্ধান্তে জনগণের দৃষ্টি প্রতিফলিত হয়েছে। আশা করি এই বর্জনের ডাক ফরাসি নেতাদের কান পর্যন্ত পৌঁছাবে এবং তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবেন।

ফিলিস্তিনে বিক্ষোভ
বিক্ষোভ হয়েছে ফিলিস্তিনের জেরুজালেমের আল-রাম শহরে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের ইসলাম নিয়ে সমালোচনা এবং মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে মুসলিমদের অবমাননার নিন্দা জানানো হয় বিক্ষোভ থেকে। বিক্ষুব্ধ জনতা হাতে ব্যানার নিয়ে মহানবী (স.)-এর পক্ষ অবলম্বন করে স্লোগান দেন।
ওদিকে ম্যাক্রনের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে ইরানে নিযুক্ত ফরাসি চার্জ দ্য অ্যাফেযার্সকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। ‘ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাসের সম্পর্ক আছে’- ম্যাক্রনের এমন বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব। নিন্দা জানিয়েছে মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্রের। তবে মুসলিম বিশ্ব এক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা নিচ্ছে তার প্রতিধ্বনি শোনা যায়নি সৌদি আরব থেকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের নিন্দা জানায় সৌদি আরব, তা যে যেই ঘটাক না কেন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top