টাঙ্গাইলের মধুপুরে বন বিভাগের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী গারো সম্প্রদায়ের বাসন্তি রেমা নামের এক নারীর কলা বাগান কেটে ধ্বংস করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা রেঞ্জ অফিস ঘেরাও করে কয়েক ঘন্টা অবস্থান করে। এসময় ভাংচুর ও শ্রমিক পেটানোর ঘটনাও ঘটেছে। আগামী বুধবার এ নিয়ে মীমাংসা বৈঠকের প্রতিশ্রুতিতে অবশেষে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেয়। সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়ি ইউনিয়নের বন এলাকার পেগামারি ও দোখলা রেঞ্জ কার্যালয়ের সামনে এমন ঘটনা ঘটে। বাসন্তী স্থানীয় গেতিস জেত্রার স্ত্রী। বাসন্তি জানান, পূর্ব পুরুষরা গত এক শতাব্দি ধরে এ জমি চাষ করে আসছে। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি এখন ভোগ দখলকারি হিসেবে দেড় বিঘা জমিতে ঋণ করে ৫শ চারার সবরি কলার চাষ করেছেন।সদ্য সমাপ্ত বন রক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কর্মি বাহিনীর সদস্য (সিএফডব্লিউ) হিসেবে তিনি বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিষয়টি মোখিকভাবে জানিয়েছেন। কিন্তু বন বিভাগ দখলমুক্ত করার নামে সোমবার হঠাৎ তার করা বাগানের কলা গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। আর্থিক সংকটের এ সময়ে এমন আচমকা ঘটনায় তিনি দিশেহারা পড়েছেন। স্থানীয় গারো নেতা উইলিয়াম দাজেল জানান, বিনা নোটিশে বন বিভাগের এমন ধ্বংসাতœক পদক্ষেপ দুঃখজনক। বন বিভাগের সাথে কাজ করা লোকজন যদি এমন অবস্থার শিকার হন তবে বন রক্ষায় বন বিভাগের পাশে কেউ দাড়াতে চাইবেনা। বন বিভাগই বন ধ্বংসের নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন তিনি। এদিকে খবর শোনে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে কলা গাছ কাটা কর্মিদের ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে তারা দোখলা রেঞ্জ কার্যালয়ের কাছে ডাক বাংলোতে রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল আহাদসহ একাধিক কর্মকর্তা অবস্থান করে। এসময় বিক্ষুব্দরা স্থানীয় রেঞ্জ কার্যালয়ের সামনে গিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকে। রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল আহাদ জানান, বিক্ষোভকারিরা এক শ্রমিককে মারধর করে। তার বাসাসহ গার্ড রফিকের বাসায় ভাংচুর চালায়। রেঞ্জ কার্যালয়ের মোটরসাইকেল ভাংচুর করে।
খবর পেয়ে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করে। সহকারি বন সংরক্ষক জামাল উদ্দিন তালুকদার ছুটে আসেন। অবশেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় আগামী বুধবার মীমাংসা বৈঠকের প্রতিশ্রুতিতে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান তুলে নেয়।
সহকারি বন সংরক্ষক(এসিএফ) মো. জামাল উদ্দিন তালুকদার জানান, বন বিভাগের নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জবর দখল হওয়া বন ভূমি দখলমুক্ত করার কাজ চলছে। দখলমুক্ত করতে গিয়ে আজ এমন ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। ডিএফও’র উপস্থিতিতে গারোদের পরিস্থিতির কথা জানানোর দাবিতে আগামী বুধবারের বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক। মীমাংসা অনেকটাই হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট একই রেঞ্জ কার্যালয় আমলীতলা গ্রামের অন্তত ১০ দরিদ্র কৃষকের ৫ একর জমির আনারস, কলা, আদা, হলুদসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে ট্রাক্টর চালিলে বনভূমি দখলমুক্ত করার নামে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ফসল বিনা নোটিশে ধ্বংস করেছে। এ নিয়ে এলাকায় বন বিভাগের বেশ সমালোচনা করছে স্থানীয়রা। কোন বাধাই সেদিন তারা মানেনি বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।