বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। তারা বলেন, এই বাংলাদেশে তিনি সবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এক প্রস্ফুটিত গোলাপ। প্রজ্বলিত এক নক্ষত্র।
সোমবার বিকেলে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগের আয়োজিত এক শোক সভায় এ কথা বলেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা।সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ’৫৮-এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬-দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ’৭০-এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এ জন্য তাঁকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। তবুও বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে তিনি কখনো শাসকগোষ্ঠীর সাথে আপস করেননি। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রের সামনে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো ৭ মার্চের সেই ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২৬ মার্চ ১৯৭১ স্বাধীনতার ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয়মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ যেমন একই সূত্রে গাঁথা, তেমনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবও পরস্পর অবিচ্ছেদ্য নাম। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু যেমন সমার্থক, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাও তেমনি সমার্থক। তাঁরা ছিলেন একে অপরের পরিপূরক। বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রতিটি ঘটনার সাথে বঙ্গমাতা ওতোপ্রোভাবে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে ধাপে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী হিসেবে নয়, বরং একজন নীরব দক্ষ সংগঠক হিসেবে যিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকে হিমালয় সমআসনে অধিষ্ঠিত করেছেন তিনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণ উপদেষ্টা, পরামর্শদানকারী, একটি স্মরণীয় নাম, একটি ইতিহাস ও সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর শক্তি ও প্রেরণার উৎস। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন কোমলে কঠোরে মিশ্রিত একটি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন প্রতিভাবান নারী। অসীম সাহস, ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সাথে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে কখনো কার্পণ্য করেননি বঙ্গমাতা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ফ্রেন্ড, ফিলোসোফার এবং গাইড। বঙ্গবন্ধু বলতেন আমার জীবনে ২ টি অবলম্বন আছে একটি আমার আত্মবিশ্বাস, অপরটি আমার স্ত্রী।
আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, বঙ্গমাতা ছিলেন মননে- চিন্তায় আধুনিক নারী। রাজনৈতিক চেতনায় হৃদ্ধ। ছেলে শেখ কামাল সেতার বাদক ছিলেন, ক্রীড়ানুরাগী ছিলেন, কন্যা- পুত্রদের ছায়ানটেও ভর্তি করিয়েছিলেন। এসবই বঙ্গমাতার আধুনিক মনস্কামনা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারীর প্রমাণ। নীরবে নারী শিক্ষা বিস্তার এবং নারীজাগরণে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বাসায় সুবিধা বঞ্চিত মেয়েদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করেছিলেন, তাদের সেলাই মেশিনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার দীক্ষা দিয়েছিলেন। কন্যা দায়গ্রস্ত অসংখ্য পিতাকে আর্থিক সাহায্য করেছেন।
ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু, শেখ মুজিবুর রহমান থেকে জাতির পিতা হয়েছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অপরিসীম ত্যাগ, সীমাহীন বিশ্বাস, আস্থা আর অনুপ্রেরণায়। টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে মুজিব, মুজিব থেকে মুজিব ভাই, মুজিব ভাই থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে বাঙালি জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে যার অবদান অনস্বীকার্য, ইতিহাসের পাতায় চলমান, তিনি হচ্ছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। জাতির পিতার জীবনে যেমন বাংলাদেশে ও স্বাধীনতা শব্দটি মিশে আছে, তেমনি বঙ্গবন্ধুর জীবনে বঙ্গমাতা আলোকবর্তিতা ও অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। তিনিই ছিলেন পিতা মুজিবের friend, philosopher, guide. বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছিলেন, ”রেনু খুব কষ্ট করতো কিন্তু কিছুই বলতো না, নিজে খুব কষ্ট করে আমার জন্যে টাকা পয়সা জোগাড় করে রাখত। যাতে আমার কষ্ট না হয়।”
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পুরো রাজনৈতিক জীবনে ছায়ার মতো পাশে ছিলেন তিনি। সে কারণেই একটি জাতির মনে স্বাধীনতার স্বপ্ন বপণ করে এর স্বাদও এনে দিতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে পেছন থেকে কাজ করেছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ত্যাগে, মহানুভবতায়, মানবিকতায় অনন্য একজন নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব।
ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রামেও সঙ্গী হয়েছেন নীরবে নিভৃতে। আইয়ুব সরকার সামরিক শাসন জারি করে সংসদ ভেঙ্গে দিলে শুরু হয় বঙ্গমাতার কষ্ট নদীর অনিরুদ্ধ উপাখ্যান। স্বামী কারাগারে, কেউ বাড়িভাড়া দিতে চাইলো না। তিন দিনের নোটিশে সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছাড়তে হলেও তিনি থেকেছেন হিমালয়ের মতো অটল।
এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ১৯৬৬ সনের ছয় দফা আন্দোলনের পক্ষে জনসমর্থন আদায় ও জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করতে লিফলেট হাতে রাস্তায় নেমেছিলেন বঙ্গমাতা। এসময় তিনি নিজের অলংকার বিক্রি করে সংগঠনের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের নেপথ্যেও ছিল তার সঠিক দিক নির্দেশনা। আন্দোলনের উত্তাল সময়গুলোতে নিজ বাড়িতে পরম মমতায় নির্যাতিত নেতা-কর্মীর আত্নীয় স্বজনদের আপ্যায়ন করতেন, সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনে ব্যবস্থা নিতেন। আশাহত নেতাকর্মীরা খুঁজে পেতেন আশার-আলো, আন্দোলনের জ্বালানি আসতো বেগম মুজিবের আশাজাগানিয়া বক্তব্য থেকে। শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগতভাবে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংকটময় মূহুর্তে বঙ্গমাতা পরামর্শক ও দিক-নির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর প্রেরণাতেই বঙ্গবন্ধু কারাগারে থেকেও মহামূল্যবান দুটি বই লিখেছেন। বঙ্গমাতা সে সময় ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রেও ছিলেন অসীম প্রেরণার উৎস। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের পিছনে তাঁর সক্রিয় সমর্থন ছিল। ৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করতেন, মামলায় প্রতিটি বন্দি পরিবারের সদস্যদের খোঁজ খবর নেওয়া ও নিঃশর্ত মুক্তির সিদ্ধান্তে পাহাড়ের মত অঢল থেকে সংগ্রাম করে সফলতা ছিনিয়ে এনেছেন এই মহীয়সী নারী।
তিনি বলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পথ মসৃণ হয়েছিল। বঙ্গমাতার কারণেই বাংলার মানুষের মুক্তির পথ এত দীপ্তিময় হয়েছিল। আন্দোলনের সময়ও প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় সাক্ষাৎকারের সময় বঙ্গবন্ধুকে জানাতেন। কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ নিয়ে আসতেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সেই নির্দেশ জানাতেন। কারাগারে সাক্ষাৎকালে বঙ্গবন্ধুর মনোবল দৃঢ় রাখতেন। জাতির পিতার অবর্তমানে সংসার, সন্তানসহ দেশ সকল কিছুই তিনি চরম ধৈর্যের সাথে পরিচালনা করতেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহস ও অনুপ্রেরণার জায়গা। তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শকে ছায়ার মত অনুসরণ করেছেন।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশপ্রেমের অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, চেতনা, আন্দোলন ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে শক্তি, সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধুর কারাগারে থাকাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংকট দেখা দিলে বঙ্গমাতা পর্দার অন্তরালে থেকে দৃঢ়, কৌশলী এবং বলিষ্ঠ ভূমিকার মাধ্যমে সংগঠনের জন্য কাজ করতেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয়টি মাস অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল ও ধৈর্য নিয়ে বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কঠিন দিনগুলোর মোকাবিলা করেছেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৩ মার্চের পতাকা উত্তোলনে বঙ্গবন্ধুর প্রধান পরামর্শক হিসেবে ছিলেন বঙ্গমাতা। বঙ্গমাতার প্রেরণা থেকে রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু সূর্য্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে শুনিয়েছিলেন স্বাধীনতার অমোঘ মন্ত্র- “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
লেখক ভট্টাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার মতো ধীরস্থির, বুদ্ধিদীপ্ত, দূরদর্শী ও স্বামী অন্তঃপ্রাণ মহিলার আত্মত্যাগ, সাথে বলিষ্ঠ, নির্লোভ ও নিষ্ঠাবান ইতিবাচক ভূমিকা শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হতে সহায়তা করেছে। তাঁর আত্মত্যাগের ফলই বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রাম।
ছাত্রলীগের শীর্ষ এই নেতা বলেন, তিনি জীবনের শেষ দিনও জাতির পিতার পাশে ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সকলের সাথে মানবতার শত্রুরা বঙ্গমাতাকেও হত্যা করল। তাঁর সমগ্র জীবনে তিনি অকাতরে দুঃখ বরণ এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। তাইতো তিনি শুধুমাত্র বঙ্গমাতা নন তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি মহিয়সী নারী। যাঁর নাম ও অবদান বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তোমায় প্রণতি জানাই—‘মাগো তুমি ঘুমিয়ে আছ স্বাধীন বাংলাদেশে, আমরা মাথা করব নত তোমায় ভালবেসে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বরণের হৃদয় বিদারক, বর্বরতম এবং সভ্যতার নৃশংসতম ঘটনা শুধু বাঙালির নয়, এই ধরিত্রীর সকল বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে অব্যাহত রক্তক্ষরণ গভীর রেখাপাত করে আসছে। এই শোক কখনো ভুলবার নয়। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নবীন রাষ্ট্রের স্বাভাবিক ইতিহাসের যাত্রাপথ রুদ্ধ করা হয়।
তিনি বলেন, নতুন রাষ্ট্রের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ষড়যন্ত্রকারীরা সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাই কেবল বিনষ্ট করতে চায়নি, একই সঙ্গে তারা গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল বাঙালির ইতিহাসের অমর সব গৌরবগাথা; পাল্টে দিতে চেয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সব সাফল্য ও অর্জন। ওই হত্যা, অগণিত মৃত্যু দিয়ে কেনা স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছিল; ওই হত্যা স্বাধীনতার মাত্র কয়েক বছরের মাথায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিল পরিত্যক্ত সেই পাকিস্তানি রাজনীতি ধারা; আবারও সেই সংস্কৃতি, ধর্মের চাতুরী দিয়ে, অসাংবিধানিক শাসন দিয়ে, মুক্তচিন্তার সমাজ-প্রগতিকে বিনাশ করার সেই সর্বনাশা সংস্কৃতি- যাকে পরাস্ত করা হয়েছিল ১৯৭১ এর ঐতিহাসিক গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে!
লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ১৫ আগস্ট শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি মুজিব কিংবা শুধুমাত্র জাতির পিতার পরিবারকে নয়, বরং গোটা বাংলাদেশকে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালেও বাংলাদেশের শত্রুরা মুজিবের নীতি, আদর্শ ও স্বপ্নকে হত্যা করতে পারেনি, আগামীতেও কোনদিন সেটা পারবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকেরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর স্বপ্ন, নীতি ও আদর্শকে লালন ও বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কৃতঘ্ন ঘাতকের দল বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভয় পেতো, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ পুরো পরিবারকে হত্যা করে আদর্শকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু Ideas are bulletproof. মানুষের দৈহিক প্রস্থান হলেও আদর্শ রয়ে যায় অমলিন। ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে ঠিকই, কিন্তু জনগণের মন থেকে তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। তিনি বাংলাদেশের মানুষের অবিচ্ছিন্ন ধমনী-স্পন্দন। আমাদের হৃদয়ে, সত্তায়, চেতনায় চিরভাস্বর। তিনি অম্লান ও সূর্যের মতো দেদীপ্যমান। বঙ্গবন্ধু এক আদর্শের নাম। আদর্শের মৃত্যু নেই। তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, এক মহান আদর্শের নাম।
তিনি বলেন, চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ, প্রেরণায় বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করে জয় বাংলা স্লোগানে স্পন্দিত বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় উদ্দীপ্ত হয়েছে। তাঁর রক্তের উত্তরাধিকারবাহী সুযোগ্য কন্যা, বাংলাদেশের উন্নতি আর প্রগতির স্বপ্নসারথি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় এবং সাহসী সিদ্ধান্তে বাংলার মাটিতে একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার হয়েছে।
লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা বিশ্বাস করি শোকের মাসে প্রত্যয় ও শপথে শোককে শক্তিতে পরিণত করার অভয়মন্ত্রে উদ্দীপিত হবে বাঙালি। সেই শক্তিতেই আমরা বিশ্বমঞ্চে বাঙালি জাতি হিসেবে শির উঁচু করে দাঁড়াবো। বিশ্ব চিনবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলাদেশ। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন মুজিব আদর্শে শাণিত থাকবে বাংলার আকাশ-বাতাস জল-সমতল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিনাশী চেতনা ও আদর্শও চিরপ্রবাহমান থাকবে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজকের এই দিনে আমরা দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই, মুজিববাদই এই দেশের রক্ষাকবচ। বাংলাদেশ আজকে জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আত্মমর্যাদার সাথে পথ চলছে কারণ এদেশ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মুজিববাদ পাঠ করবে, ছড়িয়ে দিবে দেশ থেকে দেশান্তরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। ধারণ করবে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে। আমরা সেদিনের স্বপ্ন দেখি যেদিন সারা বিশ্বের শোষিত নিপীড়িত, মুক্তির নেশায় মানুষের মিছিলে বঙ্গবন্ধু ফিরে আসবে প্ল্যাকার্ডে, স্লোগানে।
লেখক ভট্টাচার্য বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় বঙ্গবন্ধু যেমন চিরঞ্জীব; অমর ও অক্ষয়, ঠিক একইভাবেই তাঁর নিরলস আত্মত্যাগ ও দুরূহ জীবনপ্রবাহের পিছনে বঙ্গমাতার যে অবদান তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ইতিহাসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল জাতির পিতার সহধর্মিণীই নন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম এক অনুপ্রেরণাদায়ী মহীয়সী নারী। এই মহান মহীয়সী নারী আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক কিংবদন্তি। ইতিহাসের পাতায় এই মহীয়সী নারীর অবদান জাতি কৃতজ্ঞভরে স্মরণ করবে। নারীর অবদান, গুরুত্ব ও ক্ষমতায়নে নানা জাতির পথিকৃৎ হয়ে রবে এই মহীয়সী নারীর কর্মযজ্ঞ। দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ করবে প্রতিটি নারীকে। বাংলার প্রতিটি মানুষের মনের মণিকোঠায় স্মরণীয় হয়ে রবে তাঁর কর্মময় জীবন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ ১৫ আগস্টের কালোরাতের নির্মম হত্যাকাণ্ডে নিহত সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেষ করছি।