Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

করোনায় বিধ্বস্ত হোটেল জামান পরিবার

করোনায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে মৃত্যুর সংখ্যা এ পর্যন্ত ২৭১ জনে পৌঁছেছে। যাদের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। এদের মধ্যে কোন কোন পরিবারে একাধিক মৃত্যুও রয়েছে। এমন একটি পরিবার হোটেল জামান। যে পরিবারে লেগেই আছে শোকের মাতম। করোনা আক্রান্ত হয়ে এ পরিবারের ৪ সদস্য মারা গেছে এ পর্যন্ত। যা চট্টগ্রামে কোন একটি পরিবারে সর্বাধিক মৃত্যু। এসব মৃত্যুতে শোকের মাতম চলছে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের মাঝে।

এরপরও পরিবারটির পিছু ছাড়ছে না করোনা। ৪ সদস্যের পরিবারের ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন-মা-স্ত্রীসহ সবাই এখন করোনা পজিটিভ। ফলে তিল তিল করে গড়ে তোলা এ পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হোটেল জামান ও ক্যাফে জামানও পথে বসার উপক্রম। কারণ এই প্রতিষ্ঠানের সবশেষ হাল ধরা জামান পরিবারের বিজ্ঞ ব্যবসায়ী সেলিম জামানও করোনায় প্রাণ হারান গত ২৯শে আগস্ট। এর আগে ক্রমেই চাচা মোহাম্মদ জামান, নুরুজ্জামান ও বাবা মালেকুজ্জামানকে হারিয়ে আক্ষেপ করে সেলিম জামান বলেছিলেন, করোনায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে আমাদের পরিবার। আর তার মাত্র দুই মাসের মাথায় করোনায় মারা যান তিনি নিজেও। একটি পরিবারে করোনা কিভাবে এমনভাবে থাবা বসাল, যার কবলে পড়ে পরিবারের ৪ ব্যবসায়ী সদস্যকে প্রাণ দিতে হলো। তা নিয়ে পরিবারের ভেতরের সবাইকে যেমন ভাবাচ্ছে, তেমনি পরিবারের বাইরে প্রতিবেশী-স্বজনদেরও ভাবিয়ে তুলছে। জামান পরিবারের নিকটতম এক প্রতিবেশী এ বিষয়ে বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের মাঝেও চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হোটেল জামান অ্যান্ড বিরানী হাউসের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ জামান নিয়মিত বাজার করতে যেতেন। মসজিদেও যাওয়া-আসা ছিল তার। এই দুই জায়গা থেকে তাদের ঘরে করোনা ঢুকে থাকতে পারে। ওই প্রতিবেশী জানান, মো. জামানের একটু জ্বর হয়েছিল রমজান মাসের শেষের দিকে। একসময় জ্বর কমেও যায়। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছিলেন না তিনি। ঈদের পর নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হন তিনি। তখন নগরীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখান থেকে একটু সুস্থ হওয়ার পর তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুদিন পর হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে এক সপ্তাহ থাকার পর অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউ সাপোর্ট নিয়ে সার্জিস্কোপে ভর্তি করাই। ওখানে ৬ দিন থাকার পর আবার বাসায় নিয়ে যাই। কিন্তু ২৩ জুন আবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেও আইসিইউ না পেয়ে মারা যান তিনি। তিনি ক্যান্সারেও আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে যান তিনি। চট্টগ্রাম নগরীর আল ফালাহ গলির বাসিন্দা ছিলেন তিনি। এরপর করোনায় গত ২১ জুন ঢাকা আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ক্যাফে জামানের মালিক নুরুজ্জামান (৬৫)। তিনি ছিলেন ভাইদের মধ্যে সবার ছোট। লালখানবাজার বাঘঘোনার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। নুরুজ্জামানের ছেলে সাহেদ জামান জানান, ঈদের দিন বাসার পাশে একজন করোনা রোগী মারা যান। তার জানাজায় গিয়েছিলেন বাবা। আমাদের ধারণা, সেখান থেকেই আমাদের বাসায় হানা দিয়েছে করোনা। এখন আমার ছোট ভাই সাজিদ জামান ছাড়া সব ভাইবোন করোনা পজিটিভ। এরপর করোনার থাবায় মারা যান জামান পরিবারের বড় সন্তান মালেকুজ্জামান। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ খুলশী মুরগির ফার্ম এলাকায় জামান ভবনে বসবাস করতেন। মালেকুজ্জামানের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। এরা হলেন সেকান্দর জামান, সেলিম জামান, আলমগীর জামান, খোকন জামান, মামুন জামান এবং মেয়ে বেবী জামান। তারাও করোনা পজেটিভ। এর মধ্যে মারা গেলেন সেলিম জামানও। গত শনিবার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৯ বছর। তিনি মা, স্ত্রী এবং এক ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন। মৃত্যুর পর তাকে রাউজানে গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তার পরিবারিক সূত্র জানিয়েছে-সেলিম দীর্ঘদিন ধরে কিডনী ও থাইরয়েড রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তার শরীরের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। চট্টগ্রামে তার চিকিৎসায় খুব বেশি সুফল না মিলায় তাকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় আজগর আলী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। একইভাবে মৃত্যুর পর তার বাবা ও এক চাচা নুরুজ্জামানকে রাউজানের গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে চাচা মোহাম্মদ জামানকে দাফন করা হয় চট্টগ্রাম নগরীর চশমা হিল কবরস্থানে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top