জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উৎযাপন উপলক্ষ্যে সারাদেশে ১০ লাখ ঔষধি গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ নিম ফাউন্ডেশন।
সারাদেশের আঞ্চলিক সড়ক, মহাসড়ক, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এলাকায় এসব গাছ রোপণ করা হবে।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ নিম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. এম এ হাকিম। ১০ লাখ ঔষুধি গাছ রোপণের এই উদ্যোগের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রযেছে মাল্টিমিডিয়া ওযেব পোর্টাল আগামীনিউজ ডটকম।
এসময় নিম অর্গানিকের ডিরেক্টর অপারেশন লেফটেনেন্ট কর্ণেল (অব) সাঈদুল আলম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকুসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মুজিব বর্ষে নিম ফাউন্ডেশন কেন এই উদ্যোগ নিয়েছে এই প্রশ্নের জবাবে ড. হাকিম বলেন, “আমরা হঠাৎ করে নয় ১৯৮৬ সাল থেকে এই সংগঠনের কার্যক্রম চলছে। শুধু নিম গাছ নয় ‘পঞ্চ ঔষধি গাছ আন্দোলন’ও এ ফাউন্ডেশন চালিয়ে আসছে। কর্মসূচির বিষয়ে বলবো- যিনি এদেশ আমাকে আপনাকে দিয়ে গেছেন। তাকে স্মরণ করতে এবং স্মরণিয় রাখতে এ উদ্যোগ নিয়েছি। সরকারের থেকে বিশেষ সুবিধা গ্রহণের জন্য নয়। আমি সাধারণ মানুষ ছিলাম, তাই মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এ উদ্যোগ সফল হলে আজীবন দেশের মানুষকে সুফল দিয়ে যাবে। এর মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে স্মরণিয় হয়ে থাকবেন।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “১০ লাখ নয়, ১০ কোটি ঔষধি গাছ রোপণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব। দেশের ৮৪ হাজার নার্সারি রয়েছে। তাদের সংগঠনের সভাপতি আমি ড. হাকিম। তাই বলবো এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন আমাদের জন্য কোন চ্যালেঞ্চ হবে না।”
তিনি জানান, ২১ মার্চ রাজবাড়ির বহরপুরের শান্তি মিশনের বৃক্ষ রোপন করার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হবে। এতে শেখ মুজিব পরিবারের সদস্য ছাড়াও জেলা প্রশাসক উপস্থিত থাকবেন।
উদ্বোধনের পরবর্তি এক বছররে মধ্যে সারাদেশের কোথায় কোথায় গাছ রোপণ করা হয়েছে সেই পরিসংখ্যান উল্লেখ করে আবারো সংবাদ সম্মেলন করা হবে।
বক্তব্যে তিনি বলেন, যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ থাকবে। এ দেশের দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে তিনি আজীবন কাজ করে গেছে। সেই দরিদ্র মানুষের কল্যানে নিম ফাউন্ডেশন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সুস্থ জীবনের লক্ষ্যে ঔষধি গাছ ও এর পন্য উৎপাদন করে সমাজের সব শ্রেণি পেষার মাষের কাছে পৌছে দিচ্ছে।”
ড. নিম হাকিম আরো বলেন, ‘এই বৃক্ষগুলো যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বহন করবে। পাশাপাশি এই গাছগুলো থেকে দরিদ্র মানুষের একটি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি, দেশের পরিবেশে রক্ষা, জৈব প্রসাধনী, খাদ্য ও নিরাপদ কৃষিপণ্য পাবে বাংলাদেশ। বিদেশে রফতানি করেও আয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা, যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।
ড. নিম হাকিম বলেন, ‘নিম ও অন্যান্য ঔষধি উদ্ভিদ যার অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ নিম ডাউন্ডেশন জন্মলগ্ন থেকেই এ ধরণের ঔষধি উদ্ভিদ রোপনের জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার কাজ করে যাচ্ছে।
ড. নিম হাকিম বলেন, ‘ইতোমধ্যেই নিম গাছের গুনাগুন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ রাস্তার পাশে এবং বসতবাড়িতে ব্যাপকভাবে নিম চারা লাগানো হয়েছে। যা বর্তমানে ফুল ও ফলে শোভা পাচ্ছে। এসব গাছের পাতা, ফল, বীজ ও ছাল থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব কিট বিতারক, জৈব সার ও জৈব প্রসাধনী, যা বিক্রি হচ্ছে দেশের সকল ক্যান্টনমেন্টের সিএসডি, সিআইডি কল্যাণ স্টোর, লাজফার্মা ও অন্যান্য সুপার শপে। এছাড়া দেশের গন্ডি পেরিয়ে রফতানি হচ্ছে বিদেশেও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিম গাছের গুনাগুন, পরিবেশ রক্ষা, কৃষিতে এর ব্যবহার এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে নিমকে একুশ শতকের বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
মুজিববর্ষে এই ১০ লাখ ঔষধি গাছ রোপনে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ নিম ফাউন্ডেশনের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান তিনি।
নিম ফাউন্ডেশনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, ব্যতিক্রমি এ উদ্যোগই হবে মুজিব বর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার। যা দেশ জাতিকে সারাজীবন সুফল দিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, গ্রামের তুলনায় নগর বাসি প্রকৃতি থেকে বেশি বঞ্চিত। আশা করছি নিম ফাউন্ডেশন তাদের কর্মসূচিতে নগরিকে বিশেষ গুরুত্ব দিবেন।
ক্র্যাব সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকু বলেন, ঔষধি গাছকে বলা হয় গ্রামের ডাক্তার খানা। আধুনিকতার নামে আজ বাংলাদেশে ঔষধি গাছ বিলপ্তির পথে। নিম ফাউন্ডেশন যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তা প্রকৃতি ও জীবনের জন্য যুগান্তকারি ভূমিকা রাখবে।
Share!