Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

ঋণের টাকা নিয়ে পালানোদের শান্তিতে ঘুমাতে দেব না: দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, যারা জাল-জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে ঋণ নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন আমরা তাদের শান্তিতে ঘুমাতে দেব না। যারা জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করছেন তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাদের তাড়া করছি।

রোববার রাজধানীর বিসিএস কর একাডেমি মিলনায়তনে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের ‘আয়কর আইন ও বিধানাবলী’ সংক্রান্ত বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্স উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আয়কর বা যে কোনো করই হোক তা জনগণের অর্থ। জনগণের অর্থ পরিশোধ না করা আর্থিক আত্মসাতের শামিল বলে অনেকেই মনে করেন। কিভাবে তারা সরকারি পাওনা না দিয়ে, দম্ভ ভরে সমাজে মাথা উঁচু করার সাহস পান বোধগম্য নয়। এ আত্মসাৎ নিয়ন্ত্রণ করা দুদকের আইনি ম্যান্ডেট।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, গভীর রাতে এ রাজধানীতে যাদের ছেলেমেয়েরা বিলাসবহুল গাড়ি চালাচ্ছেন, শত কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে পালিয়েছেন, অথচ তাদের অনেকের আয়কর রিটার্নই নেই। এটা কিভাবে সম্ভব? আমরা এটা বন্ধ করতে চাই। এটা চলতে পারে না।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও খুবই হতাশাজনক। বাংলাদেশের মানুষ ১৬ কোটি। আমরা জেনেছি, আয়কর রিটার্ন জমা দেন ২০ লাখ। আর আয়কর প্রদান করেন ১২ লাখ।

যে সব সম্মানিত নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই ট্যাক্স রিটার্ন থাকা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। এতে প্রতিটি নাগরিক নিজেকে দেশের মালিক ভাবতে পারবেন। আর ট্যাক্স রিটার্ন থাকলেই আয়কর দিতে হবে বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়।

যার আয়করযোগ্য আয় নেই তাকে কোনো আয়কর পরিশোধ করতে হবে না। তবে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে। আমরা চাই আয়কর না বাড়িয়ে ট্যাক্সনেট বাড়ানো হোক। এতে প্রতিটি নাগরিকের সম্পত্তির একটি সঠিক হিসাবের ভিত্তিও পাওয়া যেতে পারে।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের পথও সঙ্কুচিত হয়। অনুপার্জিত আয় ভোগ করার প্রবণতা কমে আসবে। দুদকের তদন্ত ও অনুসন্ধানও কিছুটা সহজ হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে অনেক বিদেশি কাজ করছেন। তাদের অনেকেই আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন। অবৈধভাবে এ অর্থ পাচার করছেন বলেও প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যায়।

এক্ষেত্রে আয়কর বিভাগ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমন্বিতভাবে এদের চিহ্নিত করে আয়কর আদায় করতে পারে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারে।

তিনে বলেন, যারা ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দেয় আয়কর বিভাগের সন্দেহ হলে তাদের ক্ষেত্রে সার্চ করতে পারে কিনা তা আমাদের জানা নেই। তবে এটা আইনে থাকা উচিত। কমিশন চায় কোনো সৎ ব্যবসায়ী যেন হয়রানির শিকার না হন। কারণ প্রাইভেট সেক্টরই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি।

ইকবাল মাহমুদ আরও বলেন, কিভাবে আয়করের নামে স্ত্রীর কথিত মৎস্য খামার দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা বৈধ করা হয়। আমরা তদন্তে গিয়ে দেখেছি, একজন ব্যক্তির স্ত্রীর নামে দুই কোটি টাকা মৎস্য খামারের আয় দেখানো হয়েছে।

অথচ বাস্তবে কোনো মৎস্য খামারের অস্তিত্ব নেই। কথিত মৎস্য খামারের আয় যখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সঠিক মর্মে প্রত্যয়ন করে, তখন দুদকের তদন্তের বিষয়টা কিছুটা হলেও জটিল হয়ে যায়। তাই এ জাতীয় সার্টিফিকেট ইস্যু করার আগে সত্যতা যাচাই করা দরকার।

তিনি সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বলেন, দুদক সংবিধানের বাধ্যবাধকতা অনুসারে কাজ করছে। ঘুষ-দুর্নীতি বা যে কোনো প্রক্রিয়ায় অনুপার্জিত আয় হোক না কেন, তা ভোগ করার চেষ্টা করা হলে দুদক প্রতিরোধ করতে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অনুপার্জিত সম্পদ অর্জনকারীদের পেছনে দুদক সব সময় তাড়া করবে।

তিনি বলেন, দীর্ঘ কর্মজীবনে দেখেছি, কোনো মানুষই জোর করে কারও পকেটে ঘুষের টাকা দিয়ে যায় না। ঘুষ চাইতে হয়। একজন শিক্ষিত কর্মক্ষম মানুষ কিভাবে হাত পেতে ঘুষ চায়? তাই ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনি ক্ষমতার প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর প্রশাসন) আরিফা শাহানার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর নীতি) মো. আলমগীর হোসেন, দুদক মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও আইসিটি) একেএম সোহেল, বিসিএস কর একাডেমির মহাপরিচালক লুৎফুল আজিম প্রমুখ।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top