১৯৭১ সালে বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগে পৃথিবীর ইতিহাসে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। এবার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার উদ্যোগে বিশ্বের মসজিদের ইতিহাসে গৌরবের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে যাচ্ছে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে নির্মাণাধীন ২০১ গম্বুজ মসজিদ। নির্মাতাদের দাবি, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম্বুজবিশিষ্ট এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনারের মসজিদ হতে যাচ্ছে।
৫৭ তলা উচ্চতার বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইটের তৈরি মিনারের গৌরবময় মসজিদটি নির্মিত হচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে।
প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে ঝিনাই নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে। এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া খাতুন।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইটের তৈরি মিনার হলো ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত কুতুব মিনার। এর উচ্চতা ২৪০ ফুট (৭৩ মিটার)। কুতুব মিনারে সিঁড়ি রয়েছে ৩৭৯টি। আর বাংলাদেশে তৈরি ২০১ গম্বুজ মসজিদের মিনার হবে ৪৫১ ফুট।
১৫ বিঘা জমির ওপর নির্মাণাধীন মসজিদটি হবে একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স। এখানে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। মসজিদটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও তাতে সহস্রাধিক পাখা লাগানো হবে। মিহরাবের দুই পাশে থাকবে লাশ রাখার হিমাগার।
মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে আলাদা পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানে থাকবে দুস্থ নারীদের জন্য বিনা মূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।
পশ্চিমের ঝিনাই নদী থেকে মসজিদ পর্যন্ত সিঁড়ি করা হবে। মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। চারপাশে হবে দেশি-বিদেশি ফুলের বাগান। থাকবে হেলিপ্যাড।
এই মসজিদের ছাদের মাঝখানে তৈরি করা হচ্ছে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি বড় গম্বুজ। চারদিকে আছে ১৭ ফুট উচ্চতার ২০০টি গম্বুজ, যেগুলো এরই মধ্যে বিভিন্ন দামি পাথরে অলংকৃত করা হয়েছে। মূল মসজিদের চার কোনায় আছে ১০১ ফুট উচ্চতার চারটি মিনার। পাশাপাশি ৮১ ফুট উচ্চতার আরো চারটি মিনার তৈরি করা হয়েছে। ১৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪৪ ফুট প্রস্থের দ্বিতল এই মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।
মসজিদের দেয়ালের টাইলসে পিতলে অঙ্কিত করা হচ্ছে পূর্ণ কোরআন শরিফ, আল্লাহর নিরানব্বই নাম ইত্যাদি, যা অনেকখানি সম্পন্ন হয়ে গেছে। যে কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে মসজিদের দেয়ালে অঙ্কিত কোরআন শরিফ পড়তে পারবেন। মসজিদের প্রধান দরজা নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০ মণ পিতল, যা এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে; কিন্তু এখনো লাগানো হয়নি। আজান দেওয়ার জন্য মসজিদের সবচেয়ে উঁচু মিনারে বানানো হচ্ছে আলাদা রুম।
মসজিদের নির্মাণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনকে এক সাক্ষাৎকারে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিজের টাকা-পয়সা খরচ করে আমরা কত কিছুই তো করি। বিল্ডিং করি, ইন্ডাস্ট্রি করি। এগুলোর চেয়ে যদি আল্লাহর একটা ঘর আল্লাহ যদি আমাকে নির্মাণ করার শক্তি জোগান এবং আমাকে দিয়ে করান; সে আশা থেকেই আমি চিন্তা করলাম একটি মসজিদ করব। বর্তমান বিশ্বে ৬০ গম্বুজের ওপরে তো কোনো মসজিদ নেই। এ জন্য আমি চিন্তা করলাম, আল্লাহ যদি আমাকে তাওফিক দেন আমি আমার সব সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও মসজিদ নির্মাণ করব। সেই মসজিদের গম্বুজ হবে ২০১টি। আমার নিজের কাছেও আশ্চর্য লাগে, মসজিদের কাজ আজ পর্যন্ত অর্থের অভাবে এক ঘণ্টার জন্যও বন্ধ হয়নি। আল্লাহর অশেষ রহমতে মসজিদের কাজ অনেকটা শেষ হয়ে গেছে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম আশা করেন, মসজিদ নির্মাণ হয়ে গেলে এই মসজিদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন করে চিনবে বিশ্ববাসী। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আমাদের এই মসজিদকে স্বীকৃতি দিয়েছে গুগল। পূর্ণ কাজ শেষ হয়ে গেলে মসজিদটি গিনেস বুকেও স্থান পাবে ইনশাআল্লাহ।’
এ ছাড়া মসজিদটি নির্মাণে তিনি বাংলাদেশের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।