গত বছরের মে মাসের কথা। তলপেটের অস্ত্রোপচারের জন্য মাউন্ট সিনাই হসপিটাল নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন শাখায় ভর্তি হন একজন বয়স্ক মানুষ। রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায় তিনি এমন এক সংক্রমণে ভুগছেন যা একেবারেই নতুন।
জীবাণুটি ছিল যেমন মারাত্মক তেমনি রহস্যময়। তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে নেওয়া হয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে।
ওই ব্যক্তির শরীরে নতুন আবিষ্কৃত জীবাণুটি ছিল একটি ছত্রাক যার নাম ক্যান্ডিডা অরিস, সংক্ষেপে ‘কে অরিস’। এটি মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে। আতঙ্কের বিষয় হলো, জীবাণুটি দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। এর দ্বারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নিওনেটাল ইউনিট। গত পাঁচ বছরে আক্রান্ত হয়েছে ভেনিজুয়েলা ও স্পেনের একটি হাসপাতালের ওই ইউনিট। আর ব্রিটেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের নিওনেটাল ইউনিট তো বন্ধ করেই দিতে হয়েছে।
এখানেই থেমে থাকেনি রহস্যময় জীবাণু কে অরিস। ধাবমান হচ্ছে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে।
সম্প্রতি কে অরিস পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি এবং ইলিনয়ে। দেশটির ফেডারেল সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জীবাণুটিকে ‘ভীষণ হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করে জীবাণু তালিকায় যুক্ত করেছে একে।
মাউন্ট সিনাই হসপিটালে ভর্তি ওই ব্যক্তি মারা যান ৯০ দিন পর। কিন্তু মারা যায়নি কে অরিস। পরীক্ষা করে দেখা যায়, এটি ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো ঘরটিতে।
জীবাণুটি এত আক্রমণাত্মক ছিল যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ঘরটি পরিষ্কারের জন্য বিশেষ সরঞ্জাম কিনতে হয়েছিল। ঘরের সিলিং, মেঝের টাইল, দেয়াল- পরিষ্কার করতে হয়েছিল সবকিছুই।
চিকিৎসকদের মতে, ‘কে অরিস’ কিছু অংশে খুব অনমনীয়, কারণ এটি প্রধান ছত্রাকরোধী ওষুধে অভেদ্য। বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকির একটি হিসেবে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে জীবাণুটি।
গত কয়েক দশক ধরে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর অত্যধিক ব্যবহার ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস করেছে। এতে মারাত্মক জীবাণু সংক্রমণ নিরাময়ের মাধ্যমে জীবনকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে প্রতিরোধী ছত্রাকের বিস্ফোরণও ঘটেছে। এ অবস্থা আধুনিক ওষুধের ভিত্তিকে দুর্বল করে চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভয়ঙ্কর মাত্রা যোগ করেছে। একইসঙ্গে জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন ছত্রাক।
এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ প্রেসক্রিপশনে আরো সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন।
অনেক প্রতিরোধী জীবাণুকে ‘সুপারবাগস’ বলা হয়। তবে মাউন্ট সিনাই হসপিটালে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন যে জীবাণুতে তা সবাইকে হত্যা করে না। নবজাতক, বয়স্ক, ধূমপায়ী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং অটোইমিউন ডিসওর্ডারে আক্রান্তদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে বেশি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, যতক্ষণ না কার্যকর নতুন ওষুধ বিকশিত হয় এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বন্ধ হয়, ততক্ষণ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তে থাকবে। যদি এ ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে ২০৫০ সাল নাগাদ এই ধরনের সংক্রমণের মারা যেতে পারে ১০ মিলিয়ন মানুষ। তাই এখনি সতর্ক হতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।