Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

নাব্যতা হারাচ্ছে নাগর নদ

আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতা স্কুলজীবনে পা দিয়েই পড়েননি এমন মানুষ খুবই কম আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৈশাখ মাসে নাগর নদ দেখে কবিতাটি লিখেছিলেন। এখন আর ছোট নদ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাত হ্রাস ও দখলের কারণে বৈশাখ মাসেও নদে পানি থাকে না।

জানা গেছে, আজ নদের কূল আছে, কিনারা আছে, কিন্তু ঢেউ নেই। বহুদিন ধরে নদের বুকে পাল তুলে নৌকা আসা-যাওয়া করে না। দিন দিন ছোট হয়ে আসছে নদের আকার। নদের বুক থেকে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন করায় নদের রূপ আজ বিলীন হওয়ার পথে।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের নাগর নদে পানি না থাকায় নাব্যতা হারাচ্ছে। একদিকে নাগর নদে গভীর করে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন এবং আবার নদের দুই ধার দিয়ে অনেকেই কৃষি আবাদ করেছে। যার ফলে নদ হারাতে বসেছে তার নদ-রূপ। একসময় পানিতে থৈথৈ করত নাগর নদ। পানি না থাকায় শুকিয়ে মরছে এটি, যৌবন হারিয়ে এখন অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে।

উপজেলার সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিম প্রান্তে ভাটরা ইউনিয়নের নাগরকান্দি গ্রামের বুকচিরে অবস্থিত নাগর নদ। এই নদ বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার প্রবহমান করতোয়া (নীলফামারী) নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে নাটোরের সিংড়া নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নওগাঁর আত্রাই নদীর জলধারায় সম্পৃক্ত।

নাগরকান্দি গ্রামের সোলাইমান আলী বলেন, একসময় এই নদ-নদী-নালা, খাল-বিল, শাখা-প্রশাখাগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে বোয়াল, গজার, মাগুর, কৈসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন পানির অভাবে মাছ তো দূরের কথা নদই ‘মরা গাঙে’ পরিণত হওয়ার পথে। তাই নাগর নদ খনন করে নাব্যতা ফিরে আনার দাবি জানান তিনি।

মোক্কাবেল, মিন্টুসহ কয়েকজন জেলে জানান, আগে নদে অনেক মাছ পাওয়া যেত। সেই মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন নদে পানির অভাবে মাছও পাওয়া যায় না।

বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, এরই মধ্যে নাগর নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রজেক্ট ‘সবুজ পাতা’য় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সবুজ পাতায় অন্তর্ভুক্ত হলে আমরা প্রকল্প তৈরি করতে পারি। সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নদ তার পূর্বের অবস্থা ফিরে পাবে। সেই সঙ্গে পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে কৃষি ক্ষেত্রে সেচ সুবিধা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top