Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

জবাই বিল ও পুর্ণভবা নদীতে অতিথি পাখি শিকারীর তৎপরতা বৃদ্ধি

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবাই বিল ও সীমান্তবর্তী পুর্ণভবা নদীতে খাবার খুঁজতে এসে প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি শিকারীদের হাতে ধরা পড়ছে। অবাধে পাখি শিকার করায় একদিকে যেমন বিলের সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে অন্য দিকে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে জবাই বিলের জীব-বৈচিত্র।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকার একদল শিকারী প্রতিদিন বিল ও নদী থেকে পাখি শিকার করে বিভিন্ন গ্রাম ও বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রয় করছে। পাখি শিকার যে দণ্ডনীয় অপরাধ তা জেনেও এক শ্রেণির মানুষ এই অসহায় পাখি গুলো শিকার করে চলেছে।

জবাইবিল জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ জানান, বর্ষার শেষ ভাগে বিলে পানি কমতে শুরু করার কারণে বিলের কিছু কিছু অংশে জমি জেগে ওঠেছে। ওই জমিগুলোতে অল্প পরিমাণে পানি থাকায় দু-একটি ছোট মাছ ও শামুক, পোকা মাকড় খাওয়ার লোভে অতিথি ও দেশীয় প্রজাতির পাখিরা দল বেঁধে বিলে ভিড় জমাচ্ছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু লোভী শিকারী বিল ও নদীর জলে ফাঁস জাল, বিশেষ ফাঁদ ও দানাদার বিষসহ বিভিন্ন কৌশলে নির্বিচারে পাখি শিকার করেচলেছে। এ ছাড়া ও বিলে এক শ্রেণির মৎস্যজীবি মাছের পাশা-পাশি ভোর রাতে কারেন্ট জাল বিছিয়ে বক, বালিহাস, চন্নিহাস, চাহা পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকার করছে।

তিনি আরও জানান, এবার শীতে অন্যান বছরের তুলনায় ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ দেখা গেছে। জবাই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বিল থেকে বিলুপ্ত ও হারানো প্রজাতীর পাখি পাতি সরালি উবহফৎড়পুমহধ লধাধহরপধ আবার বিলে ফিরতে শুরু করেছে।

জবাই বিল ও পূর্ণভবা নদীতে বর্তমানে এই পাখিরা দিন রাত বিচরণ করছে। জবাই বিল ও পূণৃভবা নদীর সৌন্দর্য্য বর্ধনে অতিথি পাখির বিচরন এবার নতুন রুপ দিয়েছে। দিনরাত পাখিদের কিচির মিচির আর কলতানে মুখরিত বিল ও নদী যা দেখে পাখি প্রেমিকদের মন সহজেই জুড়িয়ে যাবে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য এই সুন্দর পাখিগুলো বিভিন্ন সময়ে শিকারীর হাতে ধরা পড়ছে! রাতের আধারে শিকারীরা বিলে ও নদীর জলে জাল পেতে রেখে অবাধে ওই পাখি শিকার করে চলেছে। জবাই বিল জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সদস্যগণ সম্প্রতি একজন শিকারীকে হাতে নাতে ধরতে সক্ষম হন এবং শিকারীর নিকট থেকে পাখি ও জাল আটক করে পাখিগুলি মুক্ত করা হয়। পরে আটকৃত শিকারী তার ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে আর পাখি সিকার করবেনা মর্মে ক্ষমা চাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

জীব বৈচিত্র সংরক্ষনে পরিবেশ বাদী সংগঠনের তৎপরতা ও স্থানীয় বন বিভাগ সহ প্রশাসনের কড়া নজরদারী এবং জন সচেতনা মুলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলে অল্প সময়ে বন্য প্রাণী ও পাখি শিকার বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ দিকে তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার কলমুডাঙ্গা চৌমুহনী বাজারে প্রতিদিন সকালে প্রতি জোড়া চাহা পাখি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, বালিহাঁস প্রতিটি ৩০০ টাকা, বক ও কক পাখি ৩০০ টাকা জোড়া বিক্রি হচ্ছে।

জবাই বিল ও পুর্ণভবা নদী এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জবাই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরা অতিথি পাখি শিকার বন্ধে প্রচারণা চালালেও জনসচেতনতার অভাবে পাখি শিকার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

২০১২ সালে এই বিষয়ে আইন পাশ হলেও পাখি শিকার বন্ধে ওই আইনের প্রয়োগ নেই। সরকারিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জন প্রতিনিধিসহ সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় পাখি শিকার বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top