Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

একাকীত্ব যেভাবে হত্যা করবে আপনাকে

একাকীত্বের বিষয়টি আমরা অনেকেই স্বীকার করতে চাই না। স্বীকার করি আর না করি, কেউ কেউ অজান্তেই প্রতিনিয়ত নির্মাণ করে চলেছি একাকীত্বের সংস্কৃতি ও সমাজ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও একে অপরকে কাছে না এনে প্রকারান্তরে আমাদেরকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে।

ভারতের এজভেল ফাউন্ডেশনের মতানুসারে, দেশটিতে প্রত্যেক দুইজন ব্যক্তির মধ্যে একজন একাকীত্বে ভুগছে এবং প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মানসিক পরামর্শ প্রয়োজন।

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষ একাকীত্বে ভুগছে এবং এদের তিন-চতুর্থাংশই নারী।

হার্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, যারা একাকীত্বে জীবনযাপন করেন তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৪০ শতাংশ বেশি।

‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব রিটায়ার্ড পারসনস’ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, একাকীত্বের ফলে অকালমৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

গবেষকরা দেখেছেন, যারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন বা একাকী জীবনযাপন করেন তাদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে মৃত্যুর হার অন্যদের চেয়ে বেশি। তাঁরা আরো বলেন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা একাকীত্বের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। এটি হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায় বেশি।

এ ছাড়া, যারা বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করেন তাদের ভেতর সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রবণতাও বেশি। মানুষের ভেতর বসবাস করলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ এতে অন্যরা এগিয়ে আসে। কিন্তু বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করার ফলে সেই সহযোগিতা পাওয়া কঠিন। ফলে এ ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী স্থূলতার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক স্বাস্থ্যের চেয়ে আগে দরকার একাকীত্ব বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দূর করা। কেননা, এটিই আপনার সুস্থতা বা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে।

সাইকোলজিক্যাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, বয়স্কদের চেয়ে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা বেশি একাকীত্বে ভোগে।

দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ‘কিংস কলেজ, লন্ডন’র যৌথ গবেষকের একজন ডা.  টিমোথি ম্যাথিউস বলেন, ‘কেউ যদি তাদের বন্ধু বা পরিবারের কাছে প্রকাশ করেন যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে একাকী সময় কাটাচ্ছেন তাহলে বুঝতে হবে তিনি জীবনের অন্য ক্ষেত্রে লড়ছেন।’

সুতরাং, সুস্থ জীবনের জন্য একাকীত্বকে মোকাবেলা করতে হবে। এর একটি উপায় হতে পারে, আমাদেরকে সামাজিক অনুষ্ঠানাদি এবং দৈনন্দিন সামষ্টিক কাজের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানো।

বন্ধু, আত্মীয়, প্রিয় মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে, নিতে হবে শরীরের যত্ন। সবচেয়ে বড় বিষয়, জীবনকে ভালোবাসতে হবে। তাহলে জীবনও আপনার কাছে হয়ে উঠবে স্বর্গীয় বিষয়, আপনি নিজেই বেরিয়ে আসবেন একাকীত্ব থেকে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top