ব্রাজিল সুপারস্টার নেইমারের হ্যাটট্টিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথম জয়ের মুখ দেখলো ফ্রান্সের ক্লাব প্যারিস সেইন্ট-জার্মেই (পিএসজি)। গতরাতে ‘সি’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পিএসজি ৬-১ গোলে হারিয়েছে সার্বিয়ান ক্লাব রেড স্টার বেলগ্রেডকে। ম্যাচে তিন গোল করেন নেইমার। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে লিভারপুলের কাছে ৩-২ গোলে হেরেছিল পিএসজি।
লিভারপুলের কাছে হার দিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শুরু করতে হয় পিএসজিকে। তাই রেড স্টার বেলগ্রেডের বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছিল না তারা। তবে ম্যাচের আগে দলের সেরা তারকা নেইমার পুরোপুরিভাবে ফিট ছিলেন না। পায়ের ইনজুরিতে ভুগছেন তিনি। অথচ মাঠে নেমেই নিজের সেরাটা দিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার নেইমার। ২২ মিনিটের ব্যবধানে প্রতিপক্ষের জালে দুইবার বল পাঠান তিনি।
২০ মিনিটে নেইমারকে ডি-বক্সের বাইরে ফাউল করেন রেড স্টার বেলগ্রেডের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার ভুজাদিন সাবিচ। ফলে ২২ গজ দূর থেকে ফ্রি-কিক পায় পিএসজি। সেই ফ্রি-কিক থেকে গোল করেন নেইমার। প্রতিপক্ষের মানব দেয়ালের উপর থেকে গোল করে নিজের পারদর্শীতা আবারো দেখালেন নেইমার।
প্রথম গোলের রেশ কাটতে না কাটতে দ্রুতই পিএসজিকে গোলের স্বাদ দেন নেইমার। ২২ মিনিটে ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপেকে পাস দিয়ে অন্যপ্রান্ত দিয়ে রেড স্টার বেলগ্রেডের ডি-বক্সে ঢুকে যান নেইমার। তাকে দেখে বল এগিয়ে দেন এমবাপে। বল পেয়ে ডান পায়ের শটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন ব্রাজিলের অধিনায়ক নেইমার। ফলে ২২ মিনিটের মধ্যে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় পিএসজি।
এরপর প্রথমার্ধে আরও ২ গোল করেছে পিএসজি। তবে এই গোল দুটি ছিল উরুগুয়ের স্ট্রাইকার এডিনসন কাভানি ও আর্জেন্টিনার অ্যাঞ্জেলো ডি মারিয়ার। ৩৭ মিনিটে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক নিয়েছিলেন নেইমার। এবার আর গোল করতে পারেননি তিনি। তবে ডি-বক্সের ভেতর বল পেলে গোলমুখে শট নেন কাভানি। তার শট প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে জালে প্রবেশ করে। ফলে ৩-০ গোলে লিড নেয় পিএসজি।
বিরতির আগে ব্যবধান ৪-০ করেন ডি মারিয়া। বেলজিয়ামের রাইট ব্যাক থমাস মিউনিরের যোগান দেয়া বল থেকে গোল করেন ডি মারিয়া। এই গোলে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ করে পিএসজি।
বিরতির পর গোলের জন্য মরিয়া ছিল পিএসজি ও রেড স্টার বেলগ্রেড। কিন্তু গোলের দেখা পেতে ম্যাচের ৭০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পিএসজিকে। কাভানির কাছ থেকে বল পেয়ে ম্যাচে প্রথম গোলের স্বাদ নেন এমবাপে। এমবাপের গোলের কিছুক্ষণ পর পিএসজির জালে এ ম্যাচে প্রথমবারের মত বল পাঠায় রেড স্টার বেলগ্রেড। গোলটি করেন বসনিয়া এন্ড হার্জেগোভিনার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মার্কো মারিন। এতে ম্যাচের স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৫-১ ।
৮১ মিনিটে পিএসজির পক্ষে নিজের হ্যাটট্টিক পূর্ণ করেন নেইমার। এবারও ফ্রি-কিক থেকে গোল করেন নেইমার। রেড স্টার বেলগ্রেডের মানব দেয়াল ভেঙ্গে গোল আদায় করে হ্যাটট্টিক পূর্ণ করেন তিনি।
নেইমারের হ্যাটট্টিকে উচ্ছসিত পিএসজির কোচ থমাস টাচেল বলেন, ‘দলের পারফরমেন্সে আমি অনেক বেশি খুশি, কিন্তু নেইমারের প্রদর্শন ছিল রোমাঞ্চকর। আপনি যদি প্রতি ম্যাচে ক্ষুর্ধাত অনুভব করেন তবে আপনাকে চূড়ান্ত সিদ্বান্ত নিতে হবে। বল দখলে রাখতে হবে এবং হৃদয় দিয়ে খেলতে হবে। ইউরোপে সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন হলো নেইমার এবং আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
দলের জয়ে ভূমিকা রাখতে পেরে নিজেকে সুখী মনে করছেন নেইমার। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘আমার আসল লক্ষ্য থাকে দলের জয় নিশ্চিত করা। কিন্তু যখন আমি গোল করি, তখন নিজেকে অনেক বেশি সুখী মনে করি।’
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজির পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলি। আগামী ২৫ অক্টোবর নিজেদের মাঠে নাপোলির মুখোমুখি হবে পিএসজি। গতরাতে লিভারপুলকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল নাপোলি। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে রেড স্টার বেলগ্রেডের সাথে গোলশুন্য ড্র করেছিল নাপোলি। এখন পর্যন্ত ৩৪ ম্যাচে কোন হারের মুখ দেখেনি নাপোলি।