Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

মায়াবী মাকড়সা

মায়াবী মাকড়সা লিলির পাপড়ি নরম সাদা জালের মতো ধবধবে ও সুস্নিগ্ধ। তাই এই লিলি ফুলের নাম মাকড়সা লিলি। লিলি বললেই সুশ্রী, দীর্ঘাঙ্গী, লাবণ্যময়ী এক নারীর অবয়ব দু’চোখ পেতে বসতে পারে। পাতাগুলো লম্বায় ৩০-৬১ সেন্টিমিটার। চওড়াও তেমনি মানানসই। অনুকূল পরিবেশে আরো বাড়বাড়ন্ত হতে পারে। প্রায় ঘন সবুজ পাতার বিপরীতে সাদা ফুল মায়াবী জ্যোত্স্না বিস্তার করে। আনারসের পাতা থেকে সব দিকে বড় কিন্তু পাতার প্রান্ত খাঁজকাটা ও কর্কশ নয়। বরং কোমল ও পরিমিত মেদস্নিগ্ধ। সরু ফিতার চেয়েও সরু দীর্ঘ পাপড়ি ধ্বজার মতো সামান্য হাওয়ায়ও নৃত্যশীল হয়ে পড়ে। মাকড়সার মতো লম্বা হাত-পা হলেও সুগন্ধিতে গরবিনী। ছয়টি দীর্ঘ, সরু সরু খণ্ড তলদেশে পাতলা ঝিল্লিময় বা মুকুটযুক্ত থাকে পাপড়ি। সবুজ পাতার পটভূমিকায় দুগ্ধফেননিভ ফুল সহজেই নজর কেড়ে নেয়। তার কোমল পেলবতা ও স্পর্শ সুখৈশ্বর্য দূর থেকে অনুভবযোগ্য। দীর্ঘ গোলগাল বৃন্তের ওপর ছাতার মতো বা মাকড়সার জালের মতো ছড়ানো বিস্তারিত সৌন্দর্য নিয়ে ফোটে বিহ্বল বর্ষা ঋতুতে। বৃষ্টিস্নাত কোমল তরবারির মতো কম্পমান পাতা ও ফুলের শিহরণ ভালোবাসা বিলায়। এর গোত্র লিলিয়েসি।

দর্শনীয় ও বৃদ্ধির দিকে লক্ষ করে লিলির জন্য উপযুক্ত স্থান ঠিক করা উচিত। রাস্তার ধার ঘেঁষে, পানির উৎস অথবা জলা ও পুকুরের কাছে, পাড়ে বা

টবসুন্দরে রুয়ে। আবার কোনো জায়গায় ঝাড় আকারে বেড়ে উঠতে দিলেও তোফা আকর্ষণীয় হবে। আবার বেড়ার মতো লম্বা সারি করেও রোয়া যায় সড়কদ্বীপে। পাশে সুখদর্শন বা ক্রাইনাম বুলবিস্পার্মাম বর্ণবৈচিত্র্যের জন্য খুবই মানানসই। বৈচিত্র্যের জন্য অনুচ্চ টিলা করে বর্ষার রঙিন ফুল রোয়া যায় তার সঙ্গে। এর কন্দের চাষ করা হয় ফুল ফোটার সময় পূর্ণ হওয়ার পর। ভালো বাড়বাড়ন্ত হওয়ার জন্য দরকার পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা আছে তেমন স্থান বা মাটি। বাগানে জায়গা থাকলে একটি ছোট টিলা করে তার চারদিকে নিচে মাকড়সা লিলি ও সুখদর্শনের মায়াময় ঝাড় করা যায়। টিলার ঢালুতে লিলি পরিবারের গরবিনী সদস্যদের নিয়ে ছোট পল্লী গড়ে নিন। টিলার ঠিক ওপরে সারা বছর ফোটে তেমন শিউলি বসিয়ে দিন। শিউলির জন্য পানি জমে না তেমন আদর্শ জায়গা ওটি। শিউলির ছায়ায় লিলির বৃদ্ধি বাধা হবে না। আবার টবেও লিলি দুর্দান্ত সুশ্রী-সতেজ থাকে। আমি ওর টব-সৌন্দর্যে এখনো সকাতর আছি।

লিলি এসেছে সুদূর দক্ষিণ আমেরিকা থেকে। এসেই হালকা সুরভি ও কোমল মাধুরী দিয়ে মন জয় করে নিয়েছে। সবুজ পুষ্পদণ্ডের আগা থেকে সাদা সরু পেনসিলের মতো আট-দশটি দীর্ঘ কলি একটি-দুটি করে ক্রমান্বয়ে ফুটতে ফুটতে সুরভি বিলাবে। ঘুম থেকে উঠে ওর কাছে ছুটে গিয়ে সুপ্রভাত জানাব না কেন! তবু বলতে ইচ্ছে করে লিলি নামের আগে মাকড়সা মানানসই নয়। ধরাধামে এত রকম লিলি প্রজাতির ফুল আছে যে তার আগে টাইটার, জ্যাকোরিয়ান, অ্যারাম, গারনেস, প্যান্থার ইত্যাদি শব্দ কেমন যেন মানায় না। আবার লিলির শেষেও আছে অজস্র নামে কণিকা। তবে চীনা, ম্যাডোনা, গ্রিক, কমলা, কোরিয়া, সোনালি বা ইস্টার শব্দকণিকা মানানসই। ঢাকার নটর ডেম কলেজে এক ঝাড় লিলি আছে। কাকরাইলের গির্জা বা রমনা পার্ক ও বলধায় এই বর্ষায় ফুটফুট করছে বৃষ্টিস্নাত হয়ে। আমার বারান্দায় টবে ওকে সাজিয়েছিলাম একসময় নয়নাভিরাম করে। রাতে আদরের লিলিকে আপনিও অন্দরমহলে তুলে নিতে পারেন মরমিয়া হয়ে। ছবিতে দেখুন মাকড়সা লিলির ছয়টি মায়াবী আঙুল, কোনো কোনো ফুলে বেশিও হতে পারে। এক পাশে একটি সবুজ দণ্ডে কিছুদিন আগে ফুল ফুটেছিল এবং একটি সবুজ বীজ আছে দণ্ডের শীর্ষে। দ্বিতীয় দণ্ডে কোনো বীজ আসেনি। বর্ষার ফুল হলেও শরৎ গড়িয়ে হেমন্ত পর্যন্ত ফুল দিতে পারে আপনার গাছে, আপনি ভাগ্যবতী বা ভাগ্যবান হলে। বৃষ্টিস্নাত পাতা ও ফুল মায়ামায় কোমলতায় উদ্ভাসিত হয়। স্বপ্নও দেখাতে সক্ষম বলে লোকবিশ্বাস আছে। লোকবিশ্বাস বা গল্পগাথা তো অমনি অমনি সৃষ্টি হয় না।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top