খরস্রোতা চেঙ্গী নদী। বন্যা শেষ হলেই তার রুদ্রমূর্তি ফুটে উঠে! তেমনটাই শুরু হয়েছে সম্প্রতি। খাগড়াছড়ি শহর ঘেঁষা এই নদীর ভাঙনে ভীতি ধরেছে আশপাশের মানুষের। গত কয়েক বছরে তীরবর্তী বহু পরিবারের বসতি ভেঙেছে চেঙ্গী। বিপুল পরিমাণ ফসলিজমিও কেড়ে নিয়েছে। অন্যদিকে দুই যুগ আগে চেঙ্গী শাসন প্রকল্পের কাজ হলেও দীর্ঘ সময়ে সংস্কারকাজ না হওয়ায় বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এবারের বন্যার পরও ভাঙন আরো তীব্র হয়েছে। কিন্তু ভাঙনরোধে নেই কোনো উদ্যোগ।
খাগড়াছড়ির দুঃখ নামে পরিচিত চেঙ্গী নদী। এ কূল ভাঙে তো ও কূল গড়ে। কী বর্ষা, কী গ্রীষ্ম; একই দুর্ভোগ তীরবর্তী মানুষের। বর্ষা এলে দুকূল উপচে প্লাবন আর পানিতে টান ধরলে তীব্র ভাঙনে দিশাহারা এখানকার পাহাড়ি ও বাঙালি। বহু পরিবারের রাত কাটে আতঙ্কে। একমাত্র বসতি কখন যে তলিয়ে যায়-এ আশঙ্কায় তীরবর্তী মানুষগুলো। অনেকের ফসলি জমিও চেঙ্গী নিয়ে গেছে। বিশেষতঃ গোলাবাড়ি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা গঞ্জপাড়া, কালাডেবা, রাজ্যমনিপাড়া, মুসলিমপাড়া, শান্তিনগর এবং কমলছড়ি তীরের মানুষের কষ্টের সীমা নেই।
অপরদিকে দুই দশক আগে খাগড়াছড়ি শহর রক্ষায় চেঙ্গী নদীর ভাঙনরোধে ব্লক, পাথর ফেলা হলেও কোনো রক্ষণাবেক্ষণ কাজ হয়নি। ফলে নদী পাড়ের শান্তিনগর, গঞ্জপাড়া ও বাঙালকাঠি এলাকাগুলো আবারও হুমকির মুখে পড়েছে। অধিকাংশ স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নতুন করে উদ্বেগ আর আতঙ্কে তীরের মানুষেরা। এ ছাড়া চরম হুমকির মুখে বটতলা মিউনিসিপ্যািল হাইস্কুল ও তার মাঠ, গঞ্জপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, কেয়াং, শ্মশানঘাট ও দ্বিতীয় চেঙ্গী সেতুসহ আরো বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। এর আগে তীরবাসীকে রক্ষায় নদী শাসন প্রকল্প গ্রহণের দাবিতে মিছিল, মানববন্ধন ও সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসলেও কেউই এগিয়ে আসেনি। স্থানীয়রা প্রয়োজনে চেঙ্গী নদীর গতিপথ পরিবর্তনের দাবি করেছেন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাগড়াছড়িস্থ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নুরুল আবছার আজাদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে কয়েক কোটি টাকার একটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’ প্রকল্পটি পাস হলে চেঙ্গীর ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কেবল চেঙ্গী নদী নয়, মাইনী ও ফেনী নদীর ভাঙন প্রতিরোধেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি ভুক্তভোগীদের।