শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন এবং সেই আন্দোলনকে ঘিরে গত দুই দিন ঢাকার কয়েকটি স্থানে সহিংস ঘটনার পর চারদিকে শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে।
সকালে ঢাকার প্রগতি সরণি এলাকায় লোকাল বাস তেমন একটা দেখা যায়নি। সপ্তাহের কর্মদিবস হলেও রাস্তায় যানবাহন ছিল তুলনামূলক কম। এ কারণে রাস্তার দুই পাশেই ছিল অপেক্ষমাণ যাত্রীদের দীর্ঘ সারি।
যে কয়টি গাড়ি আসছে, তাতেই ঠেলাঠেলি করে উঠে পড়ছে যাত্রীরা। তবে সেখানে কোনভাবেই নিজেদের জায়গা করতে পারছেন না নারীরা। গণপরিবহনের অভাব, তার ওপর ভোর থেকেই মাঝারি মাত্রার বৃষ্টিপাতের কারণে কিছুটা জনদুর্ভোগ দেখা গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়তে দেখা যায় নারীদের।
নতুন বাজার এলাকায় শাহিনা আখতার নামের এক নারীকে দেখা যায় হাতে ভারি ব্যাগ নিয়ে ওভারব্রিজের নীচে দাঁড়িয়ে থাকতে। বৃষ্টির মধ্যে ২০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করলেও একটি বাসেও উঠতে পারেননি তিনি।
ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার এক আত্মীয় ভর্তি আছেন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গ্রাম থেকে থাকা আসা ওই আত্মীয়ের তিনি ছাড়া আর পরিচিত তেমন কেউ নেই। অথচ গত দুই দিনের সহিংসতার কারণে তিনি হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেননি।
এখন আবার পরিবহন সংকট সেইসঙ্গে বৃষ্টিপাতের কারণে তিনি কখন পৌঁছাতে পারবেন তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বাসে জায়গা করতে না পেরে অনেক গার্মেন্ট কর্মী বৃষ্টির মধ্যেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
হাতেগোনা যে কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোকেও স্বাভাবিকের চাইতে তিনগুণ বেশি ভাড়া হাঁকতে দেখা যায়। তবে গুলশান-বনানি রুটে চলাচল করা ঢাকা চাকা সার্ভিসের বাস যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও যাত্রীদের দীর্ঘ সারির কারণে অনেককেই লোকাল সিএনজিগুলোতে উঠতে দেখা যায়। এখানেও পুরুষ যাত্রীদের ভিড়ে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন নারীরা। এ অবস্থায় তারা বাধ্য হয়ে বাসের দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করেন। বৃষ্টির কারণে এত সকালে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাগুলোতেও কোনও গাড়ি বা মোটরসাইকেল পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া ফার্মগেট এলাকাও ছিল অন্য দিনগুলোর চেয়ে অনেকটাই ফাঁকা। সেখানে বিআরটিসিসহ হাতে গোনা কয়েকটি বাস দেখা যায় যার প্রতিটিতে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বাসে জায়গা করতে না পেরে বেশিরভাগ নারী যাত্রীদের পরের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে রাস্তায় হিউম্যান হলারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যাত্রীদের চাপ থাকায় একেকটি গাড়ি ভিড়তে না ভিড়তেই সেটা মুহূর্তেই পূর্ণ হয়ে যায়।
ধানমন্ডি এলাকার পরিস্থিতি ছিল প্রায় একই রকম। গণপরিবহনের এই সংকট আঁচ করতে পেরেই নগরীর বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের প্রাইভেট কার বের করেন। এ ছাড়া বৃষ্টি থামার পর মানুষকে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি বা মোটরসাইকেল ডাকতে দেখা যায়।