তাবলিগ জামাতের মুরব্বি ভারতের দিল্লি মারকাজের আমির মাওলানা সাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করলেন হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা আহমদ শফী। ছয় নির্দেশনা জারি করে তিনি বলেছেন, মাওলানা সাদের সিদ্ধান্ত, ফয়সালা বা নির্দেশ কাকরাইল তথা বাংলাদেশে বাস্তবায়িত করা যাবে না। বাংলাদেশ থেকে তাবলিগের দাওয়াত নিতে ভারতের নিজামুদ্দিনে যাওয়া যাবে না; সেখান থেকে কেউ এলেও তাকে গ্রহণ করা হবে না। গতকাল শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তাবলিগ ও হেফাজতপন্থী কওমি আলেম-উলামা ও ছাত্র-শিক্ষকদের অংশগ্রহণে এক সমাবেশে আল্লামা শফী ছয়টি সিদ্ধান্ত জানান।
সিদ্ধান্তগুলো পড়ে শোনান মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি বলেন, বর্তমানে মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আলেমরা তিনটি মৌলিক কারণে এই অবস্থান নিয়েছেন বলে জানান তিনি। এগুলো হচ্ছে মাওলানা সাদের (ক) কোরআন ও হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা, (খ) তাবলিগের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে তাবলিগ ছাড়া দ্বীনের অন্যান্য মেহনতকে যথা দ্বীনি শিক্ষা ও তাসাউফ ইত্যাদিকে হেয় প্রতিপন্ন করা ও (গ) পূর্ববর্তী তিন মুরব্বি (হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.), হযরত মাওলানা ইউসুফ (রহ.) ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসানের (রহ.) উসুল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়া।
ছয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়ে সমাবেশে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের কোনো জামাত বা ব্যক্তিকে নিজামুদ্দিনে পাঠানো বা যাওয়া মুনাসিব হবে না। অনুরূপভাবে নিজামুদ্দিন থেকে আগত কোনো জামাতকে বাংলাদেশের কোনো জেলায়, থানায়, ইউনিয়নে কাজ করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।’
সমাবেশে আরো বলা হয়, হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.), হজরত মাওলানা ইউসুফ (রহ.) ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান (রহ.)-এর বাতানো পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ সারা দুনিয়াতে সমাদৃত ও গৃহীত হয়েছে। তাই বাংলাদেশের তাবলিগের কাজ পূর্ববর্তী এই তিন হজরতের পদ্ধতিতে এবং উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করা যাবে না। কাকরাইল, টঙ্গী ময়দান এবং জেলা মারকাজসহ সব মারকাজ এই নীতিতেই পরিচালিত হবে।
সমাবেশে আরো বলা হয়, কাকরাইল মসজিদের যেসব শুরা সদস্য আমরণ মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবের ভ্রান্ত আকিদা অনুসরণের হলফনামা করেছেন, যা শরিয়ত পরিপন্থী তাঁরা শুরার সদস্য থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। অতএব তাঁদেরকে তাবলিগের কাজে শুরা ও ফয়সালায় না রাখার আহ্বান জানানো হয়। ২০১৮ সালের টঙ্গী ইজতেমায় সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে আগামী ২০১৯-এর টঙ্গী ইজতেমার তারিখ প্রথম পর্ব ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারি ও দ্বিতীয় পর্ব ২৫, ২৬, ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ওই তারিখের পক্ষে সমাবেশে ঐকমত্য পোষণ করা হয়। ছয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং বর্তমানে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে বিশৃঙ্খলা বাঁধলে সরকারের সার্বিক সহযোগিতার কামনা করা হয়।