আবুল মাল আবদুল মুহিত এক সময় জাতীয় পার্টি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন এবং সংসদে দুবার বাজেট পেশ করেছেন- বিরোধীদলীয় সদস্যদের এমন বক্তব্যে বেজায় চটেছেন অর্থমন্ত্রী। কখনো জাতীয় পার্টি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন না দাবি করে তিনি আগামীতে এমন বক্তব্যের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
পাল্টা হুমকি দিয়েছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। তারা বলেন, ব্যাংক ডাকাতদের রক্ষা করায় আপনাকে (অর্থমন্ত্রী) আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে।
আজ সোমবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে সম্পূরক বাজেট নিয়ে আলোচনাকালে অনির্ধারিত ইস্যুতে দুপক্ষ কথা বলেন। এর আগে সংসদ অধিবেশনে সম্পূরক বাজেটের ওপর দুই দিনের আলোচনায় সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা ব্যাংক খাতে লুটপাট নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন। এক সময় এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী এখন ব্যাংক ডাকাতদের প্রটেকশন দিচ্ছেন বলে দাবি করেন তাঁরা। কিন্তু সমাপনী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ব্যাংক খাতের লুটপাট নিয়ে কোনো কথা না বললেও জাতীয় পার্টির সদস্যদের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন।
এ সময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার একটু বলা উচিত। কয়েকবারই বলেছি, কিন্তু জাতীয় পার্টির সদস্যরা সেটা অস্বীকার করে যান। আজও মিস্টার সেলিম (সেলিম উদ্দিন) সাহেব সেটা বলেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি কোনো দিন জাতীয় পার্টির সদস্যও ছিলাম না, কোনো দিন জাতীয় পার্টির মন্ত্রীও ছিলাম না, অনেকবার এটা বলেছি।’
ক্ষিপ্ত আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘জেনারেল এরশাদ যখন সামরিক শাসক ছিলেন সেই সময় আমি মন্ত্রী ছিলাম, জাতীয় পার্টির তখন জন্মও হয় নাই। সেই সময়টিতে মন্ত্রী ছিলাম। জাতীয় পার্টি জন্ম হওয়ার আগে আমি সেই সরকার থেকে পদত্যাগ করে চলে আসি। কাজেই আমার অনুরোধ হবে, ভবিষতে যেন জাতীয় পার্টির সদস্যরা মনে রাখেন। যদি না রাখেন তবে তাদের বিরুদ্ধে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।’
এরপর ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, জাতীয় পার্টি গঠনের পূর্বেই এরশাদ সাহেবের সামরিক সরকার যখন গঠিত হয়, তখন তাঁর অর্থমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন তিনি (আবুল মাল আবদুল মুহিত)। তিনি সামরিক সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে এই সংসদে বাজেট দিয়েছেন। উনি কখনো জাতীয় পার্টি করেননি। তিনি আরো বলেন, আমি তাঁকে আশ্বস্থ করতে চাই, ভবিষতে আপনার মতো এত জ্ঞানী, অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে জাতীয় পার্টি তাদের দলে স্থান দেবেন না। এ জন্য আপনাকে আদালতে যেতে হবে না। কিন্তু আপনি যে ব্যাংক ডাকতদের প্রটেকশন দিয়েছেন, তার জন্য আপনাকে আদালতে দাঁড়ানো লাগতে পারে।
একই আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর ধমকানোতে ক্ষোভ প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি তাকে (অর্থমন্ত্রী) জাতীয় পার্টির আমলের মন্ত্রী কথাটি বলিনি। তিনি খুবই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। ছেলে বড় হলে যেমন বাবা তাকে শাসন করতে পারেন না। তেমনি তিনি বয়স্ক হলেও অন্য সংসদ সদস্যদের ধমকানো তাঁর সঠিক হয়নি।
এ সময় সম্পূরক বাজেট সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, গতবার সম্পূরক বাজেট নিয়ে যে সকল আলোচনা হয়েছিল, তাতে আমার ইচ্ছা ছিল সম্পূরক বাজেটকে আরেকটু অর্থবহ করা। সেটা বিস্তৃত আলোচনার ব্যবস্থা করা। এটা এ বছর আমি করতে পারিনি সেজন্য খবুই দুঃখিত। আশা করছি ভবিষতে এ ধরনের একটা ব্যবস্থা হবে।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, সম্পূরক বাজেটে আমরা যে পরিবর্তন করেছি, সেটা খুবই সামান্য। মোটামুটিভাবে আগে বিভিন্ন বিভাগে যে ক্ষমতা এই সংসদ দিয়েছিল সেটা যতদূর সম্ভব রক্ষা করেছি। তবে কিছুটা আয়-ব্যয় এদিকে-সেদিক হয়েছে। সেটিজে জায়েজ করতে সম্পূরক বাজেট উত্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।