আইপিএলের এবারের আসরের শুরু থেকেই দুর্ধর্ষরূপে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার ঘূর্ণিতে কুপোকাত প্রতিপক্ষ। আর দলের প্রয়োজনে আছেন ব্যাট হাতেও। কালও এর ব্যতিক্রম হলো না। কোহলিদের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুকে কাল ৫ রানে হারিয়েছে হায়দরাবাদ। পাশাপাশি নিশ্চিত করেছে প্লে-অফের খেলা। এতে অন্যতম অবদান সাকিবের। প্রথমে ব্যাট এবং পরে বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন তিনি। ফলে তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হায়দরাবাদ মেন্টর ভিভিএস লক্ষ্মণ।
কাল প্রথম ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ছিলেন সাকিব। ৩২ বলে পাঁচ বাউন্ডারিতে ৩৫ রান করেছেন। পরে বল হাতেও দুর্ধর্ষ ছিলেন। বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বোলিং ফিগার ছিল তারই। তিনি চার ওভার বল করে দিয়েছেন ৩৬ রান। শিকার করেছেন দুটি উইকেট। দুটি উইকেটই ছিল টপ-অর্ডারের। শুরুতে তার শিকার হন ওপেনার পার্থিক পাটেল। এরপর সাজঘরে ফেরান অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে।
সাকিবের বোলিংয়ের প্রশংসা করে মেন্টর লক্ষ্মণ বলেন, ‘সাকিব প্রায়ই দুটি করে উইকেট নিচ্ছে, রান চেক দিচ্ছে। সে অনেক ঠাণ্ডা মেজাজের। আমি মনে করি আমাদের বোলারদের মধ্যে সেই সবচেয়ে আন্ডাররেটেড।’
কাল কোহলিদের হারিয়ে শীর্ষস্থানে দখল করেছে হায়দরাবাদ। ১০ ম্যাচের আটটিতে জিতে তাদের পয়েন্ট ১৬। এর মাধ্যমে প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে সাকিবরা। উল্টো অবস্থা কোহলির আরসিবি’র। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে তাদের পয়েন্ট মাত্র ৬। ফলে প্লে-অফে পৌঁছানো তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে।
সাকিবদের কাছে হেরে প্রায় বিদায় কোহলিরা
সাকিব আল হাসানের সানরাইজার্সের কাছে হেরে একাদশ আইপিএল থেকে কার্যত বিদায় নিলো বিরাটবাহিনী৷ আর ঘরের মাঠে সোমবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে হারিয়ে প্লে-অফে চলে গেল চারমিনারের শহর৷ ১০ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম দল হিসেবে একাদশ আইপিএলের প্লে-অফে পৌঁছে গেল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ৷ ব্যাট ও বল হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন সাকিব।
দেড় শে’র কম রান তাড়া করতে নেমেও শুরুটা ভালো হয়নি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের৷ পার্থিব প্যাটেল ও মনন ভোরা রয়্যাল ইনিংস শুরু করলেও মাত্র ২৪ রানে ডাগ-আউটে ফেরেন পার্থিব৷ ভোরা মাত্র ৮ রান করে আউট হন৷ বিরাট ক্রিজে এসেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলেও ইউসুফ পাঠানের দুরন্ত ক্যাচে ডাগ-আউটে ফেরেন রয়্যাাল ক্যাপ্টেন৷ ৩০ বলে পাঁচটি চার ও একটি ছক্কা-সহ ৩৯ রান করেন বিরাট কোহলি৷ বিরাটের পিছনে পিছনে ডাগ-আউটে ফেরেন এবি ডি’ভিলিয়ার্স (৫), মইন আলি (১০)৷ ১৪৬ রান তাড়া করতে গিয়ে মাত্র ৮৪ রানে ৫ উইকেট হারায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স৷ এখান থেকে মনদীপ-গ্র্যান্ডহোম লড়াই করলেও রয়্যালদের জেতাতে পারেনি৷ শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১২ রান করতে হতো বিরাটদের৷ কিন্তু ভুবনেশ্বর কুমারের ওভারে তা তুলতে ব্যর্থ গ্র্যান্ডহোম-মনদীপ৷ মাত্র ৭ রান করতে পারে তারা৷ ৬ উইকেটে ১৪১ রানে থেমে যায় রয়্যাল ইনিংস৷ সাকিব নেন দুই উইকেট।
এর আগে রয়্যালের আঁটোসাঁটো বোলিংয়ের বিরুদ্ধে মাত্র ১৪৬ রানে অল-আউট হয়ে যায় হায়দরাবাদ৷ লিগ শীর্ষে থাকা সানরাইজার্সের ব্যাটিং এদিন শুরু থেকে নড়বড়ে ছিল৷ হায়দরাবাদের হয়ে এদিন ইনিংস শুরু করেন অ্যালেক্স হ্যালস ও শিখর ধাওয়ান৷ কিন্ত তৃতীয় ওভারে হ্যালসকে ডাাগ-আউটে ফেরত পাঠান টিম সাউদি৷ মাত্র ১৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় সানরাইজার্স৷ ধাওয়ানের সঙ্গে ক্যাপ্টেন কেন উইলিয়ামসন বড় ইনিংসের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গেলেও এই পার্টনারশিপও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি৷ ব্যক্তিগত ১৩ রানে ধাওয়ানকে ডাগ-আউটে ফেরান মহম্মদ সিরাজ৷ এর পর মনীশ পাণ্ডে মাত্র ৫ রান করে আউট হন৷ তার পর উইলিয়ামসন-সাকিব আল হাসান দলকে এক শে’র গণ্ডি পার করলেও ৫৬ রানে ডাগ-আউটে ফেরেন সানরাইজার্স অধিবনায়ক৷ ৩৯ বলের ইনিংসে ৫টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকান উইলিয়ামসন৷ ৩২ বলে ৩৫ রান করেন সাকিব৷
বল হাতে দুরন্ত সিরাজ৷ ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ২৫ রান দিয়ে তিনটি উইকেট তুলে নেন ডানহাতি রয়্যাল পেসার৷ আইপিএল অভিষেকে বল হাতে দুরন্ত মইন আলি৷ ৩ ওভারে মাত্র ১৯ রান দেন ইংল্যান্ড অল-রাউন্ডার৷ দারুণ বোলিং করেন সাউদিও ও চাহাল৷ কিন্ত ব্যাটিং ব্যর্থতায় ফের হার হজম করে কার্যত একাদশ আইপিএল থেকে বিদায় নিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স৷ ১০ ম্যাচে বিরাটদের সংগ্রহ মাত্র ৬ পয়েন্ট৷ অর্থাৎ শেষ চারটি ম্যাচ জিতলেও ১৪ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফ নিশ্চিত নয় বিরাটবাহিনীর৷
উপলে এদিন টস জিতে প্রথমে সানরাইজার্সকে ব্যাট করতে পাঠান রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স অধিনায়ক কোহলি৷ সানরাইজার্সের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার আগে ৯ ম্যাচে মাত্র তিনটিতে জিতে লিগ টেবলে শেষ দিক থেকে তিন নম্বরে ছিল বিরাট অ্যান্ড কোং৷ আগে ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে হেরে মাঠে এদিন লিগ শীর্ষে থাকা নামে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স৷ দলে এদিন দু’টি পরিবর্তন করেন বিরাটবাহিনী৷ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম ও মরুগান অশ্বিনকে বাদ দিয়ে মইন আলি ও মনন ভোরাকে খেলায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স৷