বিচার-বহির্ভূত হত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, প্রতিদিনই বাসে ধর্ষণ হবে আর আইনের আশ্রয় নেবেন? এইভাবে চলতে পারে না। মানুষ দেখতে চায়- এই মুহূর্তে বিচার হবে কী, হবে না। ধর্ষণ মামলার সংক্ষিপ্ত বিচারে আইন সংশোধনের সুপারিশ জানিয়ে ফিরোজ রশীদ বলেন, এক মাসের মধ্যে সামারি ট্র্যায়াল করে বিচার করুন। না হয় তিন মাস দেন। ১২ বছর বসে কেন এদের বিচার করবেন। তিনি নারীদের অবাধ চলাচল নিরাপদ করতে রাষ্ট্রের উদ্যোগী ভূমিকা চেয়েছেন।
মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি দেশে সম্প্রতি ‘গণধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার’ বিষয়টি তুলে ধরে এই দাবি জানান।
গত মার্চ মাসে আশুলিয়ায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে ধর্ষণের আসামি নিহত হওয়ায় বিষয়টি তুলে ফিরোজ রশীদ বলেন, নয় বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে পালিয়ে গিয়েছিল- সেই ধর্ষণকারীর সাথে র্যাবের বন্দুক যুদ্ধ হয়েছে। এতে র্যাবের দুইজন আহত হয়েছে। ধর্ষক নিহত হয়েছে। এটাই জনগণ দেখতে চায়। সম্প্রতি ধামরাইয়ে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের অভিযোগে যে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের বিচার হবে না বলে মনে করেন তিনি।
সাবেক মন্ত্রী ফিরোজ রশীদ বলেন, টাঙ্গাইলে বাসে ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার জাকিয়া সুলতানা রূপার ঘটনায় বিচারে আসামিদের ফাঁসির রায় হলেও দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া পেরিয়ে সেই রায় কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। নিম্ন আদালতে ফাঁসি হয়েছে। উচ্চ আদালতে তারা আইনের আশ্রয় নেবে। সেখানে ল পয়েন্টে আলোচনা হবে। তারপর সর্বোচ্চ আদালত আছে। তারপর মহামান্য রাষ্ট্রপতি আছে। কবে ফাঁসি হবে? কোন জেলে কোন শেষ রাতে ফাঁসি হবে? তার খবর কেউ রাখবে না। এইভাবে সেদিন রূপা হত্যা মামলার একটা জলন্ত নিদর্শন আমরা দিতে পারতাম। তাহলে এইভাবে আরেকটি মেয়েকে পৈশাচিক ধর্ষণের শিকার হতে হয় না।
তিনি বলেন, রশু খাঁ যার নেশা ছিল, ধর্ষণ করে হত্যা করা। দুই-তিনটি মামলায় তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে। এই ফাঁসিতে কিন্তু গণধর্ষণ থামানো যাবে না। মানুষ চায় তাৎক্ষণিক একটা বিচার। জঙ্গি দমনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, জঙ্গি দমন করছেন কীভাবে? শিশু জঙ্গি, নারী জঙ্গি, কিশোর জঙ্গি, বয়স্ক জঙ্গি-সমস্ত জঙ্গি বন্দুকযুদ্ধে দমন করা হয়েছে। আইনের আশ্রয়ে কি জঙ্গি আনছেন? মিরপুরে যে ১০ জনকে গুলি করে মারা হয়েছে, তাদের আইনের আশ্রয় আনতে পারতেন? তাদের গ্রেপ্তার করে বিচার করতে পারতেন? বন্দুকযুদ্ধ যদি না হত, তাহলে জঙ্গি দমন করা যেত না।
ধর্ষণ মামলার সংক্ষিপ্ত বিচারে আইন সংশোধনের সুপারিশ জানিয়ে ফিরোজ রশীদ বলেন, আইনমন্ত্রী আছেন, আপনি আগামী সংসদে আইন নিয়ে আসেন। আমরা সংসদ থেকে পাস করে দিব। সামারি ট্রায়াল করেন। না হলে এই নারীদের সম্ভ্রম বাঁচানো যাবে না। আমাদের সময় (জাতীয় পার্টির আমলে) এসিড নিক্ষেপ ছিল। আমরা তিন মাসে চারজনকে ফাঁসি দিলাম। সব বন্ধ হয়ে গেল। আপনারা পারবেন না। কারণ অতি গণতান্ত্রিক হয়ে গেছেন তো এজন্য সম্ভব নয়।
সংসদে খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বিল পাস
নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে গতকাল খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বিল ও বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বিল নামে পৃথক দু’টি বিল কন্ঠভোটে পাস হয়েছে। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের পক্ষে বিল দুটি পাস করার প্রস্তাব করেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। এরআগে বিলের ওপর আনীত একাধিক সংশোধনী গৃহীত হয়। তবে অপরাপর সংশোধনী, জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণের প্রস্তাব কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
মঙ্গলবার ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের ২০তম অধিবেশনে বৈঠকে বিল দুটি পাস হয়।
বিলে বলা হয় খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ও বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্ট্র বোর্ড থাকবে। ধর্মমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান ও দুইজন এমপিকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, ধর্ম সচিবকে ট্রাস্টের সচিব ও সরকার মনোনিত সদস্যদের নিয়ে এই ট্রাস্টি বোর্ড গঠিত হবে। উভয় বিলে ট্রাস্টের কার্যাবলী, ট্রাস্টের তহবিল, বাজেট, হিসাব রক্ষণ ও নিরীক্ষা, পরিচালনা ও প্রশাসন, কর্মচারী নিয়োগ, বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ, বিধি ও প্রবিধি প্রণয়নের ক্ষমতাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বিলে-এর কার্যাবলী সম্পর্কে বলা হয়, খ্রিষ্টান ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও উন্নয়নে সহযোগিতা করা, খ্রিষ্টান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ও কবরস্থান প্রতিষ্ঠা, সংরক্ষণ, সংস্কার, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিকসহ সার্বিক কল্যাণ সাধন ইত্যাদি।
বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট-এর কার্যাবলী সম্পর্কে বলা হয়, বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারসহ বাংলাদেশে বসবাসরত সকল ধর্মাবলম্বীর মধ্যে সৌহার্দ ও সম্প্রীতিবোধ দৃঢ় করার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রাচীন বৌদ্ধ পুরাকীর্তি, ঐতিহ্যসমুহ চিহ্নিত করে তা সংরক্ষণে সহায়তা করা, বৌদ্ধ ধর্ম দর্শন, কৃষ্টি ও প্রাচীন ঐতিহ্য বিষয়ে গবেষাণা ও উপাসনালয় সংস্কার, সংরক্ষণ ও পবিত্রতা রক্ষা করা ইত্যাদি।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘খ্রিস্টিান রিলিজিয়ার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অধ্যাদেশ, ১৯৮৩’ রহিত করে সংশোধিত আকারে বাংলায় খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বিল ২০১৮ আনা হয়েছে। একইভাবে ‘বুদ্ধিস্ট রিলিজিয়ার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অধ্যাদেশ, ১৯৮৩’ রহিত করে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বিল, ২০১৮ আনা হয়েছে।