Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

নয়া পল্টনে ছাত্রদল নেতা মিলনের জানাযা অনুষ্ঠিত

পুলিশী হেফাজতে থাকা অবস্থায় নিহত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি জাকির হোসেন মিলনের নামাজে জানাযা রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বাদ জোহর এই জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মোহাম্মদ শাহজাহান, আহমেদ আযম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আতাউর রহমান ঢালী, জয়নুল আবদীন ফারুক, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশিদ, এমরান সালের প্রিন্স, নজরুল ইসলাম মন্জু, শামীমুর রহমান শামীম, আব্দুল আউয়াল খান, তাইফুল ইসলাম টিপু , বেলাল আহমেদ, রফিক সিকদার, আমিনুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, বিল্লাল হোসেন তারেক, ছাত্রদলের মামুনুর রশিদ মামুন, আসাদুজ্জামান আসাদ, ঢাকা উত্তর ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাখাওয়াত, আলমগীর হাসান সোহান, ইখতিয়ার রহমান কবির, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, সাজ্জাদ হোসেন রুবেল, মিনহাজুল ইসলাম ভুইয়া, রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু প্রমুখ।

পরিবারের দাবি নির্যাতন করে হত্যা
পুলিশের হাতে গ্রেফতার ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি জাকির হোসেন মিলনের মৃত্যু হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে গত ৬ মার্চ সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। শাহবাগ থানার মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১১ মার্চ রোববার তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন ছাত্রদল নেতা মিলন। গতকাল সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক মিলনকে মৃত ঘোষণা করেন।

চিকিৎসকেরা জানান, হার্ট অ্যাটাকে মিলনের মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবারের দাবি গ্রেফতার করে পুলিশ মিলনকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করেছে। আর পুলিশ নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে।

এ দিকে ছাত্রদল নেতার এমন অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। তাদের অভিযোগ সুস্থ মিলন পুলিশের রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে অসুস্থ হলেও তার চিকিৎসা করানো হয়নি। স্বজনেরা অভিযোগ করেন, মৃত্যুর আগের দিন রোববার বিকেলে মিলন নিজেই তার ওপর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন।

নিহত মিলনের চাচা অলিউল্লাহ গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে সাংবাদিকদের জানান, গত ৬ মার্চ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নেন তার ভাতিজা তেজগাঁও থানা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের ছাত্রদলের সহসভাপতি জাকির হোসেন মিলন। তার সাথে ছিলেন ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন ফরাজি। কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয়ের সামনে থেকে মিলন ও আকতার হোসেন ফরাজিকে গ্রেফতার করে রমনা থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাদের শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। খবর পেয়ে তারা রমনা থানায় গিয়ে আটকের তালিকায় মিলন ও আকতারের নামও দেখতে পান। পরে তারা জানতে পারেন মিলন ও আকতারকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

শাহবাগ থানায় গেলে পুলিশ মিলনকে গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করে। এরপর ৭ মার্চ তারা জানতে পারেন শাহবাগ থানার একটি রাজনৈতিক মামলায় মিলন ও আকতারকে গ্রেফতার দেখিয়ে শাহবাগ থানার এসআই অমল কৃষ্ণ দে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। আদালত তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। ৭ মার্চ শাহবাগ থানায় গেলে পুলিশ মিলন ও আকতারের স্বজনদের থানায় ঢুকতে দেয়নি। তারা মিলন ও আকতার থানায় নেই বলেও জানান। পরে এসআই অমল কৃষ্ণ দে মিলনের স্বজনদের জানান মিলন ও আকতারকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খবর পেয়ে তারা ডিবি কার্যালয়ে গেলে সেখানেও মিলন ও আকতারের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়।

মিলনের চাচা আরো জানান, তিন দিনের রিমান্ডে থাকার পর ১১ মার্চ রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে মিলন ও আকতারকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। তাদেরকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। সেখান থেকে তাদের জেলে পাঠান আদালত। জেলে যাওয়ার আগে মিলনের সাথে তার সর্বশেষ কথা হয়। মিলন তাকে জানিয়েছেন রিমান্ডে থাকাবস্থায় তাকে (মিলন) ব্যাপক নির্যাতন করেছে পুলিশ। টানা তিন দিনের বেশি ধরে তাকে এমনভাবে মারধর করা হয়েছে এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি জানান, জেলে নেয়ার সময় মিলন বলেছে, চাচা আমি হয়তো আর বাঁচব না। আমাকে যেভাবে মারা হয়েছে এতে আমার বাঁচার উপায় নেই। এটি ছিল মিলনের সাথে তার শেষ কথা।

মিলনের সাথে থাকা ছাত্রদল নেতা আকতার হোসেন ফরাজির এক ঘনিষ্ঠ স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি মিলনের সাথে কথা বলেছেন, মিলন তার কাছে তার স্ত্রীর নম্বর নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। ওই সময় মিলন বলেছেন তোর ভাবিকে বলবি ডিবি পুলিশকে যেন কোনো টাকা-পয়সা না দেয়া হয়। ডিবি পুলিশ টাকা চাইলেও দিবি না। আমাকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে। আকতারকেও হয়তো বাঁচতে দেবে না।

গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে গিয়ে দেখা যায় ছাত্রদল নেতা মিলনের লাশ পড়ে আছে। মিলনের দুই হাত কালো বর্ণের ছিল। স্বজনেরা দাবি করেন মিলনকে এমনভাবে মারা হয়েছে যাতে শরীরে নির্যাতনের কোনো চিহ্ন না থাকে। মিলনের হাত দেখেই বোঝা যায় তার ওপর কী নির্যাতন করা হয়েছে। গ্রেফতারের সময় মিলন ছিল সম্পূর্ণ সুস্থ। রিমান্ডে নেয়ার পর সে কিভাবে অসুস্থ হলো।

মিলনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: মেহেদী হাসান নয়ন জানান, রোববার তারা মিলনের ও আকতার হোসেনের জামিনের আবেদন করেছেন। কিন্তু বিকেল ৫টায় মিলন ও আকতারকে জেলহাজতে পাঠান আদালত। তবে জামিন শুনানির সময় মিলনকে আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়নি। সকালে তার মৃত্যুর খবর পান তিনি। তিনি অভিযোগ করেন, মিলনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। আর এ কারণেই মৃত্যু হয়েছে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, মিলন ছিলেন দুই সন্তানের বাবা। তার বাবার নাম মরহুম ছানাউল্লাহ। পরিবারের সবাই গাজীপুরের টঙ্গীর মরকুন এলাকায় থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের সখিপুরে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মিলন ছিলেন বড়। মিলনের স্ত্রীর নাম শাহনাজ পারভীন তানিয়া। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মাহির বয়স ১০ বছর আর ছোট মেয়ে আয়শার বয়স ২ বছর। তার স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি টঙ্গীতে থাকতেন। মিলন ছোটবেলা থেকে তেজগাঁও এলাকায় থাকতেন। তেজগাঁওয়ে লেখাপড়া করেন। এ সময় তিনি ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ময়নাতদন্ত শেষে তাকে তার বাবার পাশে দাফন করার কথা রয়েছে।

এ দিকে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর সুস্থ অবস্থায় মিলনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তার ওপর কোনো নির্যাতন চালানো হয়নি। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, একজন তরতাজা মানুষকে ৬ তারিখ গ্রেফতার করা হলো। ৮ তারিখ তিন দিনের রিমান্ড শেষে অসুস্থ অবস্থায় কারাগারে পাঠানো হলে তার মৃত্যু হয়। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় রিমান্ডে অমানুষিক নির্যাতন করেই ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনকে রিমান্ডের নামে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top