Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

সংখ্যালঘুর বাড়ি দখলের নেপথ্যে সেই যুবলীগ নেতা মহব্বত

রাজধানীর শ্যামলী ২ নম্বর রোডে একটি সংখ্যালঘু  পরিবারের বাড়ি দখলের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন  আওয়ামী লীগ- যুবলীগের নেতারা। পরিবারটিকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে প্রায় ৯ কোটি টাকা মূল্যের বাড়িটি দখলে নেন ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা।

এক সপ্তাহ আগে অর্ধশত ক্যাডারের একটি বাহিনী নিয়ে পরিবারের সদস্যদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যান এবং বাড়ির মালামালসহ সর্বস্ব লুট করেন তারা। অভিযোগ উঠেছে, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক কামরান শহিদ প্রিন্স মহব্বত ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তৌফিকুর রহমান রেজা মিসলু, থানা সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক সামিউল আলিম চৌধুরী ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হাই ও তার ছেলে শেরে বাংলা নগর থানা তাঁতী  লীগের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক রাজন মাতব্বর, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ ইউসুফ শামীম ওরফে গরু শামীম, শেরে  বাংলা নগর থানা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক  শারমিন আক্তারসহ একটি সিন্ডিকেট বাড়িটি দখলে নেয়।

কিন্তু তেজগাঁও অঞ্চলের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়ি দখলের বিষয়টি জানতে পেরে কঠোর অবস্থান নেন তিনি। তাঁর নির্দেশেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের নেতা মিসলু ও তাঁতী লীগ নেতা রাজন মাতব্বরকে গ্রেপ্তার করে। ওই ঘটনায় মিহির বিশ্বাস বাদী হয়ে নুরুজ্জামানসহ অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে বাড়ি দখলের মামলা করেন শেরে বাংলা থানায়।

মামলার পর পুলিশের তদন্তে বেড়িয়ে আসে বাড়ি দখলের মূল হোতা কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা কামরান শহিদ প্রিন্স মহব্বতসহ ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের নাম। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারদের থানা পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাড়িটির মালিক মিহির বিশ্বাস বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক। তিনি স্ত্রী ও ১০ বছরের এক সন্তানসহ বাড়িটিতেই থাকেন।

ওই ঘটনার পর থেকেই মুসড়ে পড়েন মিহির বিশ্বাস ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাদের সবার চোখে মুখে অজানা এক আতঙ্কের ছাপ।

পরিবারটির অভিযোগ, প্রায় বছরখানেক ধরেই বাড়িটির দিকে নজর পড়ে যুবলীগ নেতা কামরান শহিদ প্রিন্স মহব্বতসহ একটি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের। অভিযোগ উঠেছে, কামরান শহিদ প্রিন্সকে সহযোগিতা করছেন থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হামিদা আক্তার মিতা, ওই মামলার আসামি থানা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন আক্তার হচ্ছেন থানা আওয়ামী লীগের নেত্রী হামিদা আক্তার মিতার খুবই ঘনিষ্ঠ। ওই সিন্ডিকেট তাদের বাড়িটি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য অনেকভাবে ভয়ভীতি দেখানো হলেও তারা যায়নি। শেষ পর্যন্ত জোরপূর্বক বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান এবং মালামাল লুট করে বাড়িটি দখলে নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডিসি বিপ্লব কুমারের সহায়তায় বাড়িটির দখল ফিরে পান মিহির বিশ্বাস।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় যুবলীগ মহব্বতকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

শাপলা হাউজিং এলাকায় চার কাঠার একটি বাড়ি এবং মোল্লা পাড়ার পশ্চিম কাফরুলের আমানউল্লাহর ১১২৪ নম্বর প্লটের প্রায় আট কাঠার বাড়ি দখলের অভিযোগ রয়েছে যুবলীগ নেতা মহব্বতের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়,  ঋণ জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে প্রিন্স মোহাব্বতের বিরুদ্ধে। ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে প্রায় ৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় মহব্বতের দুটি প্রতিষ্ঠান। বর্ষণ অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে ৪৪ কোটি ৩১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ও মেসার্স বীথি এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে ৩৫ কোটি টাকার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বর্ষণ অ্যাগ্রো ও মেসার্স বীথি এন্টারপ্রাইজের মালিক কামরান শহীদ প্রিন্স মহব্বত। বর্ষণ অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং এমডি মহব্বত ও তাঁর স্ত্রী শামিয়াজ আক্তার। ভুয়া কাগজপত্রে বেসিক ব্যাংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগে কামরান শহিদ প্রিন্স মহব্বত ও তার শামিয়াজ আক্তারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে দুদক।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top