Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

সৌদি যুবরাজ সালমানের ব্রিটেন সফর কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ?

সৌদি আরবের তরুণ যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমান দেশটির প্রধান নন, দায়িত্বও নিয়েছেন মাত্র ৯ মাস হলো। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর তার এই প্রথম বিশ্ব সফরে তিনি ব্রিটেনে লালগালিচা সংবর্ধনাই পেতে চলেছেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও বাকিংহ্যাম প্যালেসে রানীর সঙ্গে দুপুরের খাবার, প্রিন্স অফ ওয়েলস আর ডিউক অফ কেমব্রিজের সঙ্গে রাতের খাবারও রয়েছে তার কর্মসূচির তালিকায়।

কিন্তু কেন এতোটা গুরুত্ব পাচ্ছেন বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন আসা এই যুবরাজ?

এর কারণ শুধুমাত্র এটা নয় যে, তিনি সৌদি আরবের নেপথ্য শাসক। আরেকটি বড় কারণ ব্রেক্সিটের পর সৌদি আরবের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক অন্য মাত্রা পেতে যাচ্ছে।

এর বাইরে আরো কয়েকটি কারণও রয়েছে।

সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তাগত কারণে ব্রিটেনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ব্রিটেনে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে গোপন তথ্য দিয়েছে সৌদি আরব। আবার ইরানের হুমকি মোকাবেলায় সাইবার বিশেষজ্ঞের সহায়তা চাইছে সৌদিরা।

মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির কাছে কয়েক বিলিয়ন পাউন্ডের অস্ত্রও বিক্রি করছে ব্রিটেন, যার উপর হাজার হাজার ব্রিটিশের চাকরি টিকে রয়েছে বলে মন্ত্রীরা মন্তব্য করেছেন।

কিন্তু সৌদি যুবরাজের এই সফর হয়তো তারচেয়েও বেশি কিছু।

সৌদি আরবে যে অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু করেছেন যুবরাজ সালমান, সেই সংস্কারের দিকে তিনি আন্তর্জাতিক সমর্থনও আদায় করতে চাইছেন। বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করাও তার অন্যতম উদ্দেশ্য।

২০৩০ সালের মধ্যে তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বাজার নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাইছেন সৌদি যুবরাজ।

আর এখানেই ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের অনেক সুযোগ রয়ে গেছে। শিক্ষা, বিনোদন, পর্যটন, স্বাস্থ্য- সব খাতেই ব্রিটিশদের দক্ষতা রয়েছে, যা তাদের দেশটিতেও নতুন বাজারে অনেকটা এগিয়ে রাখবে।

আবার সৌদি আরব থেকেও বিনিয়োগ পেতে চায় যুক্তরাজ্য। বিশেষ করে সৌদি রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি, আরামকোকে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে পেতে চাইছে ব্রিটিশরা।

অন্য কথায় বলতে গেলে, ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনের নতুন বন্ধু, নতুন বাজার আর অর্থের যোগান দরকার হবে। আর এসবের জন্য সৌদিরা ব্রিটেনের তালিকার একেবারে উপরের সাড়িতেই রয়েছে। বিবিসি।

 

ইসরাইলের সাথে কিছু আরব দেশের ‘গোপন মৈত্রী’?

ইসরাইলের সাথে কি বেশ কয়েকটি আরব দেশের এক গোপন মৈত্রী গড়ে উঠছে?

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার আলোকে সাংবাদিক-বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব মোকাবিলা করতে বেশ কিছু মধ্যপন্থী সুন্নি আরব দেশগুলোর সাথে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠছে।

ব্যাপারটা নিয়ে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে সম্প্রতি রিপোর্ট করেছে মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস। ‘গোপন আঁতাত : কায়রোর সম্মতি নিয়ে মিসরের ভেতরে বিমান হামলা চালালো ইসরাইল’ – এই শিরোনামে রিপোর্টটি লিখেছেন ডেভিড ডি ফিটজপ্যাট্রিক।

এতে তিনি ‘বিস্ময়কর এবং অতিশয় গোপন এক সামরিক সম্পর্কের’ খুঁটিনাটি তুলে ধরেছেন।

তিনি লিখছেন, গত দু বছরে ইসরায়েলের অচিহ্নিত ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং জেট বিমানগুলো শতাধিক হামলা চালিয়েছে মিসরের সিনাই এলাকাতে।

কখনো কখনো এমনও হয়েছে যে এক সপ্তাহেই একাধিক বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এবং এগুলো চালানো হচ্ছে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসির সম্মতি নিয়েই।

এসব হামলা চালানো হচ্ছে সিনাইতে সক্রিয় ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের ওপর।

মিসরীয় বাহিনীও এদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, সবশেষ অভিযানে ১৬ জন বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। মি. আল-সিসি এ মাসের মধ্যেই সিনাই থেকে বিদ্রোহীদের নির্মূল করার ওপর জোর দিয়েছেন।

মিসরের সাথে ইসরাইলের শান্তিচুক্তি রয়েছে ১৯৭৯ থেকেই, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো রকম সহযোগিতার কথা খুব কমই স্বীকার করা হয়, বিমান হামলার তো বহু দূরের কথা।

ডেভিড ফিটজপ্যাট্রিকের রিপোর্টের মূল কথা হলো, সিনাইয়ের বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে মিশরীয় বাহিনী এবং এ জন্য তারা ইসরাইলের সাহায্য চেয়েছে।

সিনাইকে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রণমুক্ত করাটা দু’পক্ষের জন্যেই লাভজনক – কারণ এতে ওই এলাকায় মিসরের নিয়ন্ত্রণ ফিরে আসবে – আর ইসরাইলেরও সীমান্ত নিরাপদ হবে।

বিবিসির বিশ্লেষক জোনাথন মার্কাস লিখছেন, নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টটি বের হবার পর মিসরের ভাষ্যকাররা অবশ্য একে ‘ফেক নিউজ’ এবং ‘অপেশাদার সাংবাদিকতা’ বলে আখ্যায়িত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মিসরের সামরিক মুখপাত্রও ইসরাইলি সহযোগিতার কথা অস্বীকার করেছেন।

এটা বোধগম্য যে ব্যাপারটা সত্যি হলে তা মিসরের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর ব্যাপার হবে।

তবে এখন যদি মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে একে দেখা হয় – তাহলে দেখা যায় এগুলোর সাথে আরব-ইসরাইলি গোপন সহযোগিতার এই খবরটা বেশ মিলে যাচ্ছে।

ইরান-বিরোধী জোট?
ইরানের উত্থান, উপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত পুরো অঞ্চল জুড়ে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি, এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে বিশেষ করে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে সৌদি আরব, মিসর এবং জর্ডান।

জোনাথন মার্কাস লিখছেন, এ পরিস্থিতির চাপে মধ্যপন্থী সুন্নি আরব কিছু দেশ ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে।

কূটনৈতিক ইঙ্গিত এবং কিছু ব্রিফিং থেকে এর আভাস পাওয়া যায়। এর কিছু লক্ষণও দেখা যাচ্ছে – যার কোনো কোনোটি বেশ স্পষ্ট।

কিছুদিন আগে সৌদিভিত্তিক মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের মহাসচিব ড. মোহাম্মদ আল-ইসা ওয়াশিংটনের হলোকস্ট মিউজিয়ামে (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ইহুদি নিধনযজ্ঞের স্মারক জাদুঘর) এক খোলা চিঠি দিয়েছেন।

তিনি ইহুদি নিধনযজ্ঞের শিকারদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন, এবং যারা ‘হলোকস্ট আদৌ ঘটেনি’ বলে একে অস্বীকার করে – তাদের নিন্দা করেছেন।

আরব অঞ্চল থেকে এরকম একটি বিবৃতি আসা খুবই বিস্ময়কর।

আরব বিশ্বে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে – যা জোড়া দিলে পরিবর্তনটা আরো স্পষ্ট হয়। সিরিয়ায় এখন যে শুধু মার্কিন, রুশ, তুর্কি ও ইরানী সৈন্যরাই তৎপরতা চালাচ্ছে তা নয় – তৎপর রয়েছে ইসরাইলও।

গত কয়েকদিনে সিরিয়ার ভেতরে ইসরাইলি বিমান গুলি করে নামানোর পর ‘ইরানী লক্ষ্যবস্তুর ওপর’ ইসরাইলি বিমান হামলা বিশেষভাবে পর্যবেক্ষকদের নজর কাড়ছে।

ইসরাইল স্বীকার করেছে যে ২০১১ সাল থেকে তারা সিরিয়ার ভেতরে অন্তত ১০০টি গোপন বিমান হামলা চালিয়েছে।

সবশেষ বিবৃতিতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে, তারা ‘ইরান-সংশ্লিষ্ট’ লক্ষ্যবস্তুর ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।

অন্যদিকে ইসরাইলি দিকে এটা নিয়ে আজকাল অত রাখঢাক করা হচ্ছে না।

ইসরাইলি কর্মকর্তারা এখন প্রকাশ্যে এবং অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংগুলোতেও মধ্যপন্থী সুন্নি দেশগুলোর সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নত হবার কথা তুলে ধরছেন।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কয়েক মাস আগেই লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ইরানের আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য’ তারা মধ্যপন্থী সুন্নি দেশগুলোর সাথে একটা ‘কার্যকর জোট’ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন।

তার মতে, আরব দেশগুলোর ইসরাইলের প্রতি মনোভাবও ‘নরম’ হচ্ছে।

কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টটি বলছে, মি. নেতানিয়াহু যাই বলুন, বৃহত্তর আরব সমাজের জনগণ ও বুদ্ধিজীবী কারো মধ্যেই এখনো ইসরাইলের প্রতি মনোভাব নরম হবার কোনো লক্ষণই নেই।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top