Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

গ্রেনেডে উড়ে গেলো মালবিকার দু’হাত, তারপর

জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃসময় কাটিয়ে উঠে বিজয়ীর বেশে ফেরার উদাহরণ যদি কেউ দেখতে চান, তবে মালবিকা আইয়ারের কথা বলতেই হয়। মুম্বাইয়ের এই তরুণী এখন জনপ্রিয় মোটিভেশনাল স্পিকার। বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম ও আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী হিসেবেও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। তার মর্মস্পর্শী গল্প প্রকাশ পেয়েছে ‘হিউম্যান্স অব বম্বে’র ফেসবুক পেজে।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে এক ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটে তার জীবনে। সেই গা শিউরে ওঠা ঘটনায় তিনি কেবল বেঁচেই গেছেন তা নয়, সব বাধা কাটিয়ে জীবনযুদ্ধে সফল সৈনিকের সীমাহীন সাহসিকতা দেখিয়েছেন।

মালবিকা নিজেই জানালেন সেই গল্প। বললেন, সেই দুর্ঘটনা আসলে তার জীবনটাই আজ বদলে দিয়েছে। স্মৃতিচারণ করলেন, বাড়ির কাছাকাছিই ছিলো এক অস্ত্রাগার। সেখানে আগুন লেগে গেলো। কিন্তু তার রেশ ছড়ালো আশপাশে। আমাদের গ্যারেজে একটি গ্রেনেড এসে পড়ল। ওটা আমি হাতে নিলাম। আর ঠিক তখনই তা বিস্ফোরিত হয়। আমার ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু কীভাবে যেন বেঁচে গেলাম। আমার দুহাতের কব্জি অবধি উড়ে গেলো। দেহে, পায়ে আর স্নায়ুতন্ত্রে মারাত্মক আঘাত নিয়ে হাতপাতালে ভর্তি করা হলো আমাকে।

শঙ্কামুক্ত হওয়ার পর তাকে ঠাঁই নিতে হলো হুইলচেয়ারে। কিন্তু ধীরে ধীরে আবারো দুই পায়ে দাঁড়ানো শিখলেন। ‘প্রস্থেটিক হ্যান্ড’ লাগিয়ে হাত দুটোর উড়ে যাওয়া অংশে যান্ত্রিক রূপ দেওয়া হলো। পিছে ফিরে না তাকানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। লেখাপড়া করলেন। পরীক্ষা দিলেন একজন লিখিয়ের সহায়তায়। শেষ অবধি পিএইচডি সম্পন্ন করলেন তিনি। প্রমাণ করলেন, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

একটা পর্যায়ে নিজেকে ভালোবাসতে শুরু করলেন তিনি। সবাই যেমন করে। কিন্তু এ দুর্ঘটনার পর নিজেকে কেমন যেন মৃত বলেই মনে হতো, জানালেন মালবিকা। ২০১২ সালে সেই ঘটনার একটা বার্ষিকী পূর্ণ হবে। সেদিন আমি নিজের সফলতাকে উপভোগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এ সময়ের মধ্যে লাখ লাখ সিঁড়ি বেয়েছি আমি, হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। এখন নিজের কাহিনী ফেসবুকে তুলে ধরার সিন্ধান্ত নিলাম। দেখলাম, গল্পটা ভাইরাল হয়ে পড়েছে।

তিনি প্রথমবারের মতো টেড টকে কথা বলার স্মৃতির কথাও জানালেন। সেখান থেকেই শুরু। মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে জনপ্রিয় হলেন তিনি। গত বছর জাতিসংঘের সদরদপ্তর থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো কিছু বলার জন্যে, জানালেন মালবিকা। নয়া দিল্লির ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক্স ফোরামের ইন্ডিয়া ইকোনোমিক সামিটে কো-চেয়ার হিসেবেও আমন্ত্রণ পান তিনি।

জীবনের অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়েছেন তিনি। মালবিকা আসলে দেখিয়ে দিয়েছেন, মানুষ কতটা বৈপরিত্য জয় করতে পারে। তার গল্পটা যেকোনো মানুষকে নতুন করে তার ভেতরের অদম্য মানসিকতাকে জাগিয়ে তুলতে পারে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top