ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের সানজুয়ানে নিহত জওয়ানদের মধ্যে পাঁচজনই মুসলমান। এই মন্তব্যে এমনিতেই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এবার সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বেশ তিরস্কৃত হলেন সাংসদ ও মুসলমান নেতা আসাদউদ্দিন ওবেইসি।
সেনাবাহিনীর নর্দার্ন কমান্ড প্রধান জেনারেল দেবরাজ আনবু শহিদদের জাত-ধর্ম প্রসঙ্গ তোলায় আসাদউদ্দিন ওবেইসির উদ্দেশে স্পষ্ট করে বলেন, ‘নিহত জওয়ানদের নিয়ে জাতপাতের বিভেদ করবেন না। আমরা তাঁদের জাত-ধর্ম দেখি না। যাঁরা এই ধরনের মন্তব্য করছেন, তাঁরা সেনাবাহিনীর বিষয়ে কিছু জানেন না।’
সম্প্রতি কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের হামলায় নিহত হয়েছেন সাত জওয়ান। ওবেইসি ওই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘শনিবার জম্মুর সেনা ক্যাম্পে যে সাত জওয়ান নিহত হয়েছেন, তার মধ্যে পাঁচজনই মুসলমান। তাই যারা ভারতীয় মুসলমানদের পাকিস্তানি বলে, তাদের এই ঘটনায় শেখা উচিত, আমরা মুসলমানরা দেশের জন্য প্রাণ দিই।’
জম্মুতে সেনা ক্যাম্পে হামলা চালায় জইশ-ই-মোহম্মদ গোষ্ঠীর সন্ত্রাসবাদীরা।
এ-প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, শহীদ ইসলামী পরিভাষায় খুবই মর্যাদাবান ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি শব্দ। ইসলাম ধর্মমতে, শহীদ মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথেই বেহেশতের নেয়ামত ভোগ করতে থাকে। শহীদ শব্দের মূল আরবি। যার অর্থ সাক্ষ্য দানকারী। এই সম্মানসূচক শব্দটা কেবল সে সব মুসলমানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যাঁরা তাদের জীবন সম্পূর্ণরুপে ধর্মীয় নির্দেশনায় [যাঁরা সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মহানবী (সা.) আল্লাহর একমাত্র রাসুল] উৎসর্গ করেছেন অথবা তাদের দেশ অথবা পরিবারের জন্য জীবন দিয়েছেন।
সংখ্যালঘু নেতা ওবেইসি তার বক্তব্যে এই বিষয়টির দিকেই নির্দেশ করেছেন। আর এতেই জাত-ধর্মের প্রসঙ্গ তুলে তাঁকে তিরস্কার করেছেন নর্দান সেনা কমান্ড।
প্রসঙ্গত, শহীদ শব্দটির ব্যাপক অর্থবোধকতার কারণে ধর্ম-জাতের বাছবিচার ভুলে এর ব্যবহার অন্যরাও করে থাকেন। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে শহীদ শব্দটি নিত্য ব্যবহার্য মর্যাদাময় এক শব্দ। যে কোনো ক্ষেত্রে যে কেউ মহৎ বা পরার্থে কিছু করতে গিয়ে আত্মত্যাগ করলে, বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন ঘটনা ঘটলেই তাকে শহীদ আখ্যা দেওয়া হয়।
মূল ইসলামী আভিধানিক অর্থ ছাপিয়ে যুগে যুগে এর পারিভাষিক রূপ অন্যরা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন। ভাষাবিদদের মতে, খ্রিস্টান, সাউথ এশিয়ান হিন্দু, মারাঠি আর শিখরাও দরকার মতো শহীদ শব্দটি ব্যবহার করেন সমমানের শব্দ খুঁজে না পেয়ে।