ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার্থীদের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় বসার আগে নানা ধরনের বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হয়। তবে অনেক কিছু করেও দেখা যায় কোনো কোনো শিক্ষার্থী আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। এর পেছনের সমস্যাগুলো কোথায়? পরবর্তীতে পরীক্ষায় বসার আগে সেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারা চাই। এ বিষয়ে ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষকতায় ২০বছরের অভিজ্ঞ দেবাশীষ সাহা টিপস দিয়েছেন যা শিক্ষার্থীদের কাজে লাগতে পারে। কালের কণ্ঠের পাঠক শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জন্য তার পরামর্শগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।
উত্তরপত্রে সীমিত জায়গা থাকবে: ইংলিশ মিডিয়ামে পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নের নিচে উত্তর লিখতে সীমিত জায়গা থাকে। তাই কাটাকাটি করে জয়গা নষ্ট করা যাবে না। অপ্রয়োজনীয় কথা বাদ দিয়ে সঠিক উত্তর লিখতে হবে। বার বার চর্চা থাকলে অথবা একই জাতীয় অংক বার বার করা থাকলে নির্ধারিত জায়গায় অংকটির সমাধান করা সম্ভব হবে।
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট প্রথমে লিখতে হবে: একটি প্রশ্নের উত্তরে অনেকগুলি পয়েন্ট থাকলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট প্রথমে লিখতে হবে। এরপর গুরুত্ব অনুসারে পর্যায়ক্রমে অন্য পয়েন্টগুলি লিখতে হবে। কম গুরুত্বপূর্ণ কথা লিখে জায়গা পূরণ করে ফেললে বেশি গুরুত্বপূর্ণ উত্তর বাদ পড়বে। এতে শিক্ষার্থী কম নম্বর পাবে।
শব্দ সংখ্যা বেশি হলে নম্বর কমবে: বাংলা ইংরাজিতে রচনা, চিঠি কত শব্দে উত্তর দিতে হবে তা আগে থেকে জেনে পরীক্ষার হলে যেতে হবে। দরকারের চেয়ে কম বা বেশি শব্দে উত্তর লিখলে অনেক সময় নম্বর কাটা হয়।
মনোযোগ দিয়ে প্রশ্ন পড়তে হবে: ইংলিশ মিডিয়ামের প্রশ্নে কথার মারপ্যাঁচ থাকে। অনেক সময় প্রশ্নের আকার বড় হয়। এতে শিক্ষার্থীরা সহজে পারা প্রশ্নের উত্তরও বুঝতে পারে না। এজন্য মনোযোগ দিয়ে প্রশ্ন পড়তে হবে। পরীক্ষার হলে বার বার প্রশ্ন পড়ার সময় পাওয়া যাবে না। প্রশ্ন ভালভাবে না পড়ার কারণে অনেক সময় জানা প্রশ্নও শিক্ষার্থীরা পারে না। স্বভাবে চঞ্চল শিক্ষার্থী অনেক সময় আশেপাশে মনোযোগ দেয়। তার বন্ধুরা কী করছে তা খেয়াল করতে চেষ্টা করে। এতে সময় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে জানা প্রশ্নের উত্তরও সময়ের অভাবে করতে পারে না।
বল পয়েন্ট কলম ব্যবহার: ইংলিশ মিডিয়ামে পরীক্ষার্থীর খাতা জমা দেয়ার পর স্ক্যান করা হবে। পরে খাতার সফট কপি পরীক্ষকের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাই উত্তর পরিস্কার করে লিখতে হবে। কাটাকুটি করা যাবে না। জেল পেন দিয়ে উত্তর লেখা যাবে না। কালো কালির সাধারণ বল পয়েন্ট দিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে: পরীক্ষার হলে অবশ্যই স্বচ্ছ ব্যাগে পাসপোর্ট, স্টেটমেন্ট অফ এন্ট্রি, সাধারণ বল পয়েন্ট কলম, স্কেল, ক্যালকুলেটর, পেন্সিল, রাবার আনতে হবে। প্রয়োজনে ক্যালকুলেটর, কলম, পেন্সিলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র একটির বেশি আনা যাবে। তবে লক্ষ্য রাখতে পাসপোর্ট ও স্টেটমেন্ট অফ এন্ট্রি ছাড়া কোনোভাবেই পরীক্ষা দিতে দেয়া হবে না। অংক ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন পরীক্ষায় জ্যামিতি বক্স আনতে হবে। তবে সূত্র লেখা জ্যামিতি বক্স আনা যাবে না।
প্রযুক্তি নির্ভরতা কমাতে হবে: ইংলিশ মিডিয়ামে পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে এবং ক্যালকুলেটর ছাড়া মেন্টালি- দুই ধরনের অংক করতে হয়। অংকে ভাল ফল করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে অবশ্যই ক্যালকুলেটর, কম্পিটার বা অন্য কোনো প্রযুক্তি ছাড়া মুখে মুখে হিসাব কষার অভ্যাস তৈরি করা। রাতারাতি এ অভ্যাস হয় না। এর জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি নিতে হবে। ফোর/ ফাইভ থেকেই এ চর্চা শুরু করতে হবে।
কোচিং নির্ভরতা কমাতে হবে: স্কুলে যেতে হবে। কোচিংয়ের নির্ধারিত কিছু অংক কষে ভাল ফল করা যায় না। এজন্য অবশ্যই বই পড়তে হবে। বিভিন্ন লেখকের বই থেকে অংক করতে হবে।
মুখস্ত করা যাবে না: ইংলিশ মিডিয়ামে ভাল ফল করতে হলে আগে বিষয়বস্তু বুঝতে হবে। নিজের ভাষায় গুছিয়ে লেখার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। পারিপার্শ্বিক ঘটনা লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ রাখতে হবে। অনেক সময় চারপাশের ঘটনা থেকেই রচনা, চিঠি লিখতে বলা হয়। প্রায়ই দেখা যায়, ইংলিশ মিডিয়ামের অনেক শিক্ষার্থী নিজের দেশ-জাতি সম্পর্কে অনেক সময় তেমন কিছু জানে না। যদিও এসব জানতে তেমন বড় ধরনের প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। একটি দৈনিক পত্রিকায় দিনের যে কোনো সময়ে অন লাইনেই হোক কিংবা হার্ড কপিতেই হোক- মোটামুটিভাবে নজর বুলাতে হবে। আর কল্পনা শক্তি বাড়াতে হবে।
বিগত দিনের প্রশ্নপত্রের বারবার সমাধান করতে হবে: দোকানে বিগত দিনের প্রশ্ন ও উত্তরপত্র কিনতে পাওয়া যায়। বিগত দশ বছরের প্রশ্নপত্র বারবার সমাধান করতে হবে। এতে প্রশ্নের ধরণ এবং গুছিয়ে উত্তর লেখা শেখা যাবে, বাড়বে দক্ষতাও।
এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি: এমআইটি, অক্সফোর্ড, টরোন্টোসহ নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভর্তির ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল-ই মূল বিষয় না। এখানে ভাল ফলাফলের পাশাপাশি শিক্ষার্থী সমাজকল্যাণমূলক কাজে অংশ নিয়েছে কি না তা দেখা হয়। এক্সট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটি অর্থাৎ নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলি, ক্রীড়াক্ষেত্রে অংশগ্রহণ আছে কিনা তা-ও যাচাই করা হয়। তাই ছোট থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি এসব কার্যক্রমে অংশ গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে।