মস্তিষ্কের সব ধরনের কাজের একমাত্র জ্বালানি অক্সিজেন। মস্তিষ্কে যদি এই প্রাণবায়ু প্রবেশে বাধা দেওয়া হয় তাহলে কী ঘটতে পারে?
বলা হয়, মস্তিষ্কে অক্সিজেনের চালান কমে আসলে হেলুসিনেশন দেখা দিতে পারে। এ সময় উল্টা-পাল্টা দৃশ্য দেখতে শুরু করে মানুষ। আপনার দেহে মস্তিষ্কই সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করে। যদিও দেহের ওজনের মাত্র দুই শতাংশ দখল করে মগজ। এই ছোট যন্ত্রই কিন্তু দেহের উৎপাদিত শক্তির ২০ শতাংশ খেয়ে ফেলে।
মস্তিষ্কের অতি জরুরি অক্সিজেন বয়ে নিতে সদাব্যস্ত থাকে রক্তবাহী নালীগুলো। রক্তপ্রবাহের কোনো গোলোযোগ দেখা দিলেই অক্সিজেন সরবরাহে ঝামেলা বেঁধে যেতেই পারে। তেমনটাই হয়। এই অবস্থা কোনো অবস্থাতেই বেশিক্ষণ চলতে দেওয়া যাবে না। কারণ, অক্সিজেন সরবরাহ ৩০-১৮০ সেকেন্ডের মতো বাধাগ্রস্ত হলে আপনি জ্ঞান হারাতে পারেন। তখন যে অবস্থায় যাবেন তাকে বলে ‘হাইপোক্সিয়া’।
অক্সিজেনের অভাব চলতে থাকলে মাত্র এক মিনিটের মাথায় মস্তিষ্কের কোষগুলো মরতে শুরু করে। তিন মিনিটের মাথায় নিউরনগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ অবস্থায় মস্তিষ্ক দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির শিকার হতে পারে। আর মস্তিষ্ক যদি ৫ মিনিট অক্সিজেন ছাড়া থাকে, তাহলে মৃত্যু আসন্ন।
দেহকে টিকিয়ে রাখতে শক্তি সঞ্চয় ও তার ব্যবহারের ক্ষমতা মাত্র ৫ মিনিটের মাথায় ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনে ব্রেইন হাইপোক্সিয়া। অর্থাৎ, নিদারুণভাবে ক্ষতির শিকার হয় ‘এটিপি’। এটি বিশেষ এক মলিকিউল যা কোষে শক্তি সঞ্চয় করে এবং তার ব্যবহারে ক্রিয়াশীল হয়।
যদি ১০ মিনিট পরও মস্তিষ্ক জীবিত থাকে, তাহলে কী ঘটবে? কোমায় চলে যাবেন যেকোনো মানুষ। মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষতি অনিবার্য। ১৫ মিনিটের মাথায় বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব।
এমনিতেই মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না এলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা তৈরি হয়। সামান্য অভাবেই ব্যথা হতে থাকে মাথায়। এ সময় মাথায় তরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এটা ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এই চাপ সহ্য না করতে সক্ষম হলে অকার্যকর হবে মগজ।
গর্ভকালীন ব্রেইন হাইপোক্সিয়া শিশুর মস্তিষ্ক গঠনকে প্রভাবিত করে। মস্তিষ্কের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। তবে এই অবস্থা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাটিয়ে উঠতে পারার ক্ষমতাও আছে মগজের। ক্ষতি সামলানোর এই ক্ষমতাকে বলা হয় ‘হাইপোক্সিক টলারেন্স’।
অক্সিজেনের অভাবে আরো দেখা দেয় ‘সেরেব্রাল হেমারেজ’। এ অবস্থা মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
যদি মস্তিষ্কে আচমকা অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, সেক্ষেত্রে খুব জরুরি নয় এমন কাজগুলো প্রাথমিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। কিছু সময়ের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলতে থাকে। সেরেব্রাল হাইপোক্সিয়া মোটর স্কিল নষ্ট করে। ফলে চলাফেরায় সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। অক্সিজেনের অভাব খুব বেশি হলে অচেতন হয়ে পড়ে দেহ। ব্রেইন হাইপোক্সিয়া এবং আলঝেইমার্স ডিজিসের মধ্যে সংযোগও খুঁজে পাওয়া গেছে কিছু গবেষণায়।
সঠিক কাজের জন্যে আপনার মস্তিষ্কের তাই দরকার পর্যাপ্ত অক্সিজেন। গ্লুকোজের ব্যবহার নিশ্চিত করতে দরকার অক্সিজেন। এটা দেহের শক্তি উৎপাদনের মূল উৎস।