কাশ্মীরের শ্রীনগরের গুলাম মুহাম্মদ শফির স্বাস্থ্য দেখলে যে কেউ হিংসা করত। সদা হাস্যোজ্জ্বল ও কাজ পাগল শফি একাই ১০ জনের কাজ করে ফেলতে পারতেন। বন্ধুরা ঠাট্টা করে তাকে বলতেন- ‘মানব রোবট’। কর্মে তার কোনো ক্লান্তি ছিল না।
কিন্তু গত বছরের জুনে তার সব কিছু উল্টে যায়। ৪৮ বছর বয়সী শফির ফুসফুসে ক্যান্সার বাসা বাধে। এর পর শুরু হয় তার চিকিৎসার ধকল, যা গত আট মাস ধরে চলছে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সব কিছু খুইয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে তার পরিবার।
শফির মতো বান্দিপোরা অঞ্চলের মুহাম্মদ মুখতার পারেই নামে আরেক কাশ্মীরির শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। তার শরীরে কোলন ক্যান্সার। মুখতার পারেই বলেন, তার দু-দুবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। ইতিমধ্যে তার আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, দিন চলে যায় আর আমার শরীর ভেঙে পড়ে।
ক্যান্সার সোসাইটি তার বাড়ি থেকে বেশ দূরে। সেখানে পৌঁছাতে তাকে চারটি গাড়িতে উঠতে হয়। তিনি চিকিৎসক দেখাতে যান, আর সবার কাছে নিজের জন্য দোয়া চান।
শফি কিংবা মুখতারের ঘটনা কাশ্মীরে বিচ্ছিন্ন কিছু না। অহরহ।
স্থানীয় ক্যান্সার সোসাইটিতে প্রতিদিন নতুন করে গড়ে ৪০ রোগী আসেন। ব্যয়বহুল হওয়ায় সবাই এ রোগের চিকিৎসা নিতেও পারেন না।
কাশ্মীরে যেন ক্যান্সারের বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেই অনুসারে এ প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি একেবারেই কম। ২০১১ সাল থেকে সেখানে ২৬ হাজার ২১৪ রোগী ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।
এত ব্যাপকভাবে ক্যান্সারের বিস্তার সত্ত্বেও চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুবিধা নেই বললেই চলে। ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসার ব্যবস্থা খুবই অপর্যাপ্ত। ওয়ার্ডে মাত্র তিনটি বেড আছে। বিপুলসংখ্যক ক্যান্সার রোগীর বিপরীতে চিকিৎসক ও কর্মকর্তার সংখ্যাও হাতেগোনা কয়েকজন।
সমস্যার কথা স্বীকার করে হাসপাতালের কর্মকর্তা আব্দুল খালেক বলেন, তারা যৎসামান্য বেতন পান। সরকার বেসরকারি চিকিৎসা খাতের উন্নয়নেও অনিচ্ছুক।
তিনি বলেন, সরকারের উচিত- ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা মাথায় নিয়ে সে অনুসারে চিকিৎসাব্যবস্থারও উন্নয়ন করা।
ক্যান্সার সোসাইটির চিকিৎসক ডা. সামির কৌল বলেন, ক্যান্সার কেবল রোগীকেই ভোগায় না। বরং পুরো একটি পরিবারের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।