বিরল ও জটিল ক্যান্সারে আক্রান্ত বাংলাদেশের দরিদ্র কিশোরী অঞ্জনা আক্তার এখন পুরোপুরি সুস্থ। বাংলাদেশের চিকিৎসক অধ্যাপক মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকী-এর উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের স্লোন ক্যাটারিং হাসপাতালে তার সফল চিকিৎসা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় তদারকির মাধ্যমে অঞ্জনার মতো বাংলাদেশেও ক্যান্সারে আক্রান্ত অনেক রোগীর জীবন রক্ষা সম্ভব মনে করেন চিকিৎসকরা।
মাত্র ৮ বছর বয়সে স্তন ও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় নোয়াখালির সেনবাগের দরিদ্র মুদি দোকানির মেয়ে অঞ্জনা। ৭ বার অপারেশন ১৯ বার কেমো থেরাপিতেও অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। তাই ওই কিশোরীকে নিয়ে নিউইয়র্কের বোষ্টনে ‘গ্লোবাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান পল গস-এর শরণাপন্ন হন ডাক্তার মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকী। জানা যায়, সারা বিশ্বে তার আগে আরও ৪ জন এমন বিরল ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
পরে যুক্তরাষ্ট্রের স্লোন ক্যাটারিং হাসপাতালে চিকিৎসা চলে অঞ্জনার। তার রোগ নিরাময়ের গবেষণায় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান লগজো’র মেডিসিন ব্যবহার করা পুরো খরচ বহন করে প্রতিষ্ঠানটি। ওষুধ সেবনের অল্প কিছুদিনেই সুস্থ বোধ করার কথা জানায় অঞ্জনা।
অঞ্জনা আক্তার বলেন, ‘আমার আরেকটা নতুন জন্ম হয়েছে। আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম। অনেক কষ্ট হতো। একটা মিনিটের জন্যও আমি ভালো থাকতাম না। আমি ভালো হয়েছি যে হসপিটালে থেকে, সেই হসপিটালের ডাক্তারদের মতোই আমি একজন ডাক্তার হতে চাই। আমার আব্বু-আম্মুর আশা পূরণ করতে চাই।’
জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণ থেকে মেয়ের বেঁচে ফেরায় কৃতজ্ঞতা ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তার মা।
অঞ্জনার মা বেয়াধান আক্তার বলেন, ‘আমি অনেক খুশি। আমাদের তো কোনো আয়-উন্নতি ছিলো না যে আমাদের মেয়েকে আমরা ভালো করবো।’
অঞ্জনা সুস্থ হয়ে ওঠায় বাংলাদেশেও ক্যান্সার নিরাময়ে নতুন সম্ভানার দ্বার উন্মাচন হয়েছে বলে জানান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যাপক মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকী। ক্যান্সারের ওষুধ অবিষ্কারের গবেষণায় অগ্রগতির কথা জানিয়ে আক্রান্তদের নিরাময়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকী বলেন, ‘একটা ইয়ং মেয়ে, যার আর্লি গ্রোইং এজে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ায় তার জীবনের আলো নিভে গিয়েছিলো। তার স্বপ্ন ছিলো যে সে বাঁচবে। ক্যান্সারের কিন্তু আগের সেই ভয়ঙ্কর অবস্থা নেই। ক্যান্সার হ্যাজ নো অ্যান্সার- কিন্তু এখন আর নেই। ৬০%-এর বেশি ক্যান্সার আমরা প্রিভেন্ট করতে পারি।’
এক হিসেবমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে মারা যান অন্তত দুই লাখ। উন্নত চিকিৎসা আর সঠিক পরিচর্যার ব্যবহারের মাধ্যমে, এই চিত্র পাল্টে দেয়া সম্ভব বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।