বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০০ চিন্তাবিদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদাপূর্ণ সাময়িকী ‘ফরেন পলিসি’ এ তালিকা প্রকাশ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ‘ডিসিশন মেকার’ হিসেবে এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে সাময়িকীটি।
রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের মতো রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি বাক্স্বাধীনতা, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান, পিতৃত্ব ছুটি চালুকরণে উদাহরণ তৈরি, পরিবেশ কূটনীতি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন, সাংস্কৃতিক সুরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী তরুণরাও এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।
ফরেন পলিসি সাময়িকী চলতি বছর সিদ্ধান্ত প্রণেতা (ডিসিশন মেকারস), প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সাফল্য অর্জনকারী (চ্যালেঞ্জার), উদ্ভাবক, (ইনোভেটর), পরামর্শদাতা (অ্যাডভোকেট), রূপকার (আর্টিস্ট), প্রশমনকারী (হিলার), তত্ত্বাবধায়ক (স্টুয়ার্ড), ইতিহাসবিষয়ক ভাষ্যকার (ক্রনিক্লার) ও ক্ষমতাধর কর্মকর্তা (মোগল) ক্যাটাগরিতে এই ১০০
চিন্তাবিদের তালিকা তৈরি করে। ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছরই প্রায় অভিন্ন ক্যাটাগরিতে শীর্ষ চিন্তাবিদদের তালিকা প্রকাশ করে আসছে সাময়িকীটি।
এবারের তালিকায় ‘ডিসিশন মেকারস’ ক্যাটাগরিতে ১৩ জনকে রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জলবায়ু ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ইস্যুতে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, নারীবাদী পররাষ্ট্রনীতির কারণে সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগোট ওয়ালস্ট্রোম, কিউবার সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে যুক্তরাষ্ট্রের চার কূটনীতিক বেন রোডস, রিকার্ডো জুনিগা, রবার্তো জ্যাকসন ও জোসেফিনা ভিদাল, বিজ্ঞানের সঙ্গে বিজ্ঞানের যুদ্ধের কারণে ইরানের আণবিক জ্বালানি সংস্থার প্রধান আলী আকবর সালেহি ও যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিবিষয়ক প্রধান আর্নেস্ট মনিজ, মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য পলিসি মেকার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, আঞ্চলিক শত্রুতা দমনে ভূমিকা পালনকারী সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান, উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কার্যকর করার জন্য মরিশাসের প্রেসিডেন্ট আমিনাহ গুরিব-ফাকিমকে নির্বাচিত করা হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তালিকায় রাখার ব্যাপারে ফরেন পলিসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, “বাংলাদেশ বিশ্বের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে মাত্র .০৩ শতাংশ পরিমাণে দায়ী থাকলেও ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে দেশটির এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা এবং ৩০ শতাংশ দারিদ্র্য হার থাকলেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে পরিবেশগত সুরক্ষা গ্রহণ করেছেন। এই প্রচেষ্টা তাঁকে জাতিসংঘের ‘চ্যাম্পিয়ন অব আর্থ’ পুরস্কারও এনে দিয়েছে।” এতে আরো বলা হয়, ২০০৯ সালে তাঁর নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশই প্রথম জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জাতীয় কৌশল গ্রহণ করেছে। এর পর থেকে দেশটির জাতীয় বাজেটের ৬ থেকে ৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এ খাতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের এ প্রচেষ্টাকে উন্নয়নশীল বিশ্বের উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করে আসছেন।
বিশ্বে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে আগের বছরের সুনির্দিষ্ট অবদান ও ধারণাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে এ তালিকা তৈরি করেন ফরেন পলিসির সম্পাদকরা। বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক, আইনজীবী, উদ্ভাবক, শিল্পী, সরকারি কর্মকর্তা ও স্বপ্নদ্রষ্টাদের নাম এতে স্থান পায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু কি ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের নাম বিভিন্ন বছর এই তালিকায় এসেছে।