মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনেও আদালতে উপস্থিত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আজকের মতো ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে আদালত তাকে অব্যাহতি দিলেও তিনি নিজে থেকে হাজির হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় তিনি পুরান ঢাকার বকশিবাজারে স্থাপিত ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে পৌঁছান।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে এ মামলার অন্য দুই আসামি কাজী সলিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও শরফুদ্দীন আহমেদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়।
আদালতের আদেশ অনুযায়ী গতকাল আদালতে উপস্থিত ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতে হাজির হন। আজ বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। এজন্য তার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বৃহস্পতিবার মামলা মুলতবি রাখার আবেদন করেন।
আদালত এ আবেদনের ওপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যেহেতু এটা ধর্মীয় ব্যাপার তাই খালেদা জিয়ার পক্ষে সময়ের আবেদন মঞ্জুর করলে আমার কোনো আপত্তি নেই। এরপর আদালত বলেন, আগামী ধার্য তারিখ পর্যন্ত তিনি (খালেদা জিয়া) জামিনে থাকবেন। আর অন্য আসামিদের পক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার যুক্তি উপস্থাপন চলবে।
আদালতের কার্যক্রম শেষ হলে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা বৃহস্পতিবারের যুক্তি উপস্থাপন মুলতবি রাখার জন্য আবেদন করেছি। আদালত তা নামঞ্জুর করে ওই দিনের জন্য শুধু খালেদার ব্যক্তিগত হাজিরা অব্যাহতি মঞ্জুর করেন। তাই আগামীকাল আদালতে উপস্থিত হবেন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার যেহেতু আদালত চলবে, সেহেতু খালেদা জিয়া আদালতে যাবেন।
গতকাল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি শরফুদ্দিন আহমেদের পক্ষে আইনজীবী আহসান উল্লাহ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী কাজী মুনিরুল হুদা।
১৯ ডিসেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। এ দিন রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। এরপর ২০, ২১, ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর এবং ৩ , ৪, ১০ ও ১১ জানুয়ারি খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা।
মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার পক্ষে সর্বশেষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় একটি মামলা করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।