Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

৩ শ’ শিক্ষকের ৩০ মাস বেতন বন্ধ

রকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের তিন শতাধিক শিক্ষকের ৩০ মাস ধরে বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের আদেশের এক বছর পরেও বেতন ভাতা পাচ্ছেন না তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন দেশের ৬৪ টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ২০১৩ সালে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৫ জন করে মোট ৩২০ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ৩০ জুন শেষ হলে ওই ৩২০ জন শিক্ষকের বেতন-ভাতাদি বন্ধ হয়ে যায়। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক ওই শিক্ষকদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন এবং তাদের বেতন-ভাতাদি প্রদানের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এরপর গত ২০১৬ সালের ৭ জুলাই অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পরিচালনার জন্য নতুন করে ডেইলি বেসিসে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয় এবং প্রস্তাব আকারে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। এতে করে সমাপ্ত স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় নিয়োগকৃত শিক্ষকবৃন্দের বকেয়া বেতন-ভাতাদি ও চাকরির অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এর কোন সুরাহা না করায় শিক্ষকরা হাই কোর্টে ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর একটি রিট মামলা দায়ের করেন। পরে হাইকোর্ট শিক্ষকদের বকেয়া বেতন-ভাতাদি প্রদান এবং চাকরিসহ সকল সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য রুলনিশি জারি করেন। এর পরেও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর বকেয়া বেতন-ভাতাদি প্রদান না করে সুপ্রীম কোর্টে আপীল করেন। সুপ্রীম কোর্ট হাই কোর্টের রায় বহাল রেখে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি রায় দেয়। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে অদ্যাবধি বেতনভাতা প্রদান করেনি যা দেশের সুপ্রীম কোর্টের আদেশকে অসম্মান করা ও আদালত অবমাননার শামিল। এর ফলে তিন শতাধিক শিক্ষক ৩০ মাস ধরে বেতন-ভাতাদি না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বর্তমানেএসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬৬৪ টি পদ শূন্য রয়েছে। কিন্তু তার পরেও শিক্ষকদের স্থায়ী কোন নিয়োগের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
এদিকে এসব শিক্ষকদের অধিকার বঞ্চিত করে স্বয়ং অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাসের আত্মীয় স্বজনদের রংপুর ও মানিকগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে একজন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ভাতিজা সৌরভ দাস। তিনি রংপুর টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের খন্ডকালীন স্থায়ী শিক্ষক (ইংরেজি)।
এ প্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালক (ভোকেশনাল) এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন আদালত।
গত ৯ জানুয়ারি হাই কোর্টের বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি কে.এম. কামরুল কাদের এর বেন্চ এই রুল জারি করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন দোলন এই কনটেম্পট পিটিশন দায়ের করেন।
এসডিপি টিচার্স ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সামছুদ্দীন, সাধারন সম্পাদক রেদওয়ান চৌধুরী জানান, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের একগুয়েমি মনোভাবের কারণে কারিগরি শিক্ষা ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। তারা আরো জানান, সর্ব্বোচ আদালত তাদের স্থায়ী নিয়োগের নির্দেশ দিলেও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অশোক কুমার সেই রায় বাস্তবায়ন করছেন না। সেই সাথে কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তরে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি জেঁকে বসেছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top