উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসার বার্তা দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বললেন, তাঁরা পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে কথা বলতে রাজি।
এ জন্য ওয়াশিংটন কোনও পূবশর্তও রাখতে চায় না। যদিও এর আগে টিলারসনই বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি ত্যাগ না করলে তাঁরা কোনও আলোচনা করবেন না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বার্তাকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া।
কিম জং উন ঘোষণা করেছেন, তিনি উত্তর কোরিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করবেন। একের পর এক ছয়টি পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালিয়েছেন তাঁরা। শেষ যে আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা উত্তর কোরিয়া চালিয়েছে, সেটি ওয়াশিংটনকেও পাড়ি দিতে পারবে বলেও দাবি করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে পিয়ংইয়ংকে নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাথাব্যথা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তাই কিছুটা সুর নরম করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। অতীতে তিনি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা খারিজ করে বলেছিলেন, আগে তাদের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি ছাড়তে হবে।
এবার আর সেই পূর্বশর্ত রাখেননি টিলারসন।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি বলেছেন, নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। টিলারসনের ভাষায়, ‘কূটনৈতিক দিক থেকে বলতে পারি, উত্তর কোরিয়া আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে। সে জন্য কোনও পূর্বশর্ত পূরণ করতে হবে না। শুধুই সাক্ষাৎ হতে পারে। ’
পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক একটি আলোচনা সভায় টিলারসনের এই বার্তাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। টিলারসন বলেন, ‘একবার সাক্ষাৎ হলে আমরা আলোচনার রূপরেখা তৈরি করতে পারব। কোন পথে আমরা এগোতে পারি, সেটা ঠিক করা সম্ভব হবে। ’
উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা যদি ওয়াশিংটনের উদ্বেগ না বাড়িয়ে থাকে, তাহলে টিলারসন কেন বলবেন – ‘আগে উত্তর কোরিয়া অস্ত্র কর্মসূচি বাতিল করুক, তারপর আলোচনায় আসুক, এই শর্ত বাস্তবসম্মত নয়। ওরা এই কর্মসূচিতে বিপুল টাকা খরচ করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও এমনই মত। ’
তবে আলগোছে একটা শর্তের কথা পেড়েই ফেলেছেন টিলারসন। তাঁর মন্তব্য, ‘আলোচনা চলাকালীন কোনও অস্ত্র পরীক্ষা করা হবে না, এটা নিশ্চিত করা দরকার। না হলে আলোচনার অর্থই থাকবে না। ’ কিমকে নিয়ে যে ধাঁধাঁয় রয়েছে আমেরিকা, সেটাও টিলারসনের বক্তব্যে বেরিয়ে এসেছে। তাঁর ভাষায়, ‘উত্তর কোরিয়ার নতুন নেতার সঙ্গে আমাদের আলোচনা করতে হবে। তিনি তাঁর বাবা বা দাদার মতো নন। তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি ধারণাও আমাদের নেই। ’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার বার্তাকে সমর্থন করেছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘এই বার্তা ইতিবাচক। এতদিন যে টানাপোড়েন আমরা দেখে এসেছি, তার বদলে যুক্তরাষ্ট্রের এই বার্তা স্বাগত জানানোর মতো। কোরিয় উপদ্বীপের উত্তেজনা কমাতে এই পদক্ষেপ সদর্থক হবে। ’
কিন্তু, যাঁর প্রতি এই বার্তা তিনি কী ভাবছেন? উত্তর কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি। যদিও বিশেষজ্ঞদের মত, পরমাণু অস্ত্রের কর্মসূচি বাতিল করার পাত্র নন কিম। তাই এ ব্যাপারে আলোচনার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অন্য কোনও বিষয়ে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলতে উত্তর কোরিয়া রাজি হলেও হতে পারে, কিন্তু অস্ত্র নিয়ে তারা আপস করবে বলে মনে হয় না।