বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আইএসের দায় স্বীকারকে সতর্কতার সঙ্গে দেখছে পশ্চিমা দেশগুলো। বৃহস্পতিবার বগুড়ায় শিয়া মসজিদে গুলিতে হতাহতের দায়ও নেয় আন্তর্জাতিক এ জঙ্গি সংগঠনটি। এরপর শুক্রবার আবারও নিজ দেশের নাগরিকদের ভ্রমণে উচ্চমাত্রার সতর্কতা জারি করে অস্ট্রেলিয়া। পাশাপাশি আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজেদের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের ফিরিয়ে নেবে দেশটি। অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেইন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়।এদিন এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডব্লিউ গিবসন মসজিদে গুলিবর্ষণের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের উচিত আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়ে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মূলোৎপাটন করা।এক প্রতিবেদনে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিকরা চরম আতংকের মধ্যে আছেন। তারা এখন আর আগের মতো হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে কাজে যাচ্ছেন না। সকালে জগিং করতে বের হতেও ভয় পাচ্ছেন তারা।অস্ট্রেলিয়ার ফরেইন অ্যাফেয়ার্সের ওয়েবসাইটে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া সরকার বাংলাদেশে অবস্থানরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের স্বেচ্ছায় অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি খরচে নিজেদের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রত্যাহার করে নেবে তারা। পাশাপাশি নাগরিকদের চলাচলে আগের সতর্কতা নবায়ন করে দেশটি। তাদের সর্বশেষ সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়েছে, ২৭ নভেম্বর আইএসআইএল (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ত) বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি শিয়া মসজিদে আরেকটি হামলা চালানোর দাবি করেছে।এতে দেশটির নাগরিকদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, সতর্কতার পরামর্শের মাত্রা পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশে আপনাদের উচ্চমাত্রার সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিভাগ (ডিফ্যাট) বাংলাদেশ সম্পর্কে জানিয়েছিল, এখানে (বাংলাদেশে) অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য ঝুঁকি আছে। এ বিষয়ে ডিফ্যাটের কাছে নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য আছে বলে জানিয়েছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড। তাই সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে না আসার ঘোষণা দেয়।সন্ত্রাসীদের রুখতে আন্তর্জাতিক সহায়তা নেয়ার আহ্বান : বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মসজিদে গুলিবর্ষণের ঘটনায় একজন নিহত ও দুজন আহত হওয়ার ঘটনায় শোক ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডব্লিউ গিবসন।এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মসজিদে নামাজের সময় বর্বর হামলার কথা শুনে আমি নিজেই হতভম্ব হয়েছি। মানুষের বিশ্বাসের ওপর এই রকমের আঘাত হানা কখনোই কাম্য নয়। আমি হতাহতের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে অবিলম্বে হামলাকারীদের সমূলে নিপাত করার আহ্বান করছি।তিনি আরও বলেন, এই হামলা বাংলাদেশে চরমপন্থী জঙ্গিদের সর্বশেষ হামলা। সাম্প্রতিক সময়ে প্যারিস, মালি, বৈরুতে একই ধরনের হামলা ও হত্যাযজ্ঞ হয়েছে।বিদেশীরা আতংকে- দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট : ফরেনার্স রেসট্রিক্ট মুভমেন্টস ইন বাংলাদেশ আফটার আইএসআইএস ক্লেইমড কিলিংস প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে বিদেশীরা আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তারা আগের মতো যখন তখন বাসা বা অফিস থেকে বের হচ্ছেন না। হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে কোথাও যাচ্ছেন না। সকালে জগিংয়ে বের হতেও ভয় পাচ্ছেন তারা। অথচ কিছুদিন আগেও ব্যস্ততম ঢাকার অলিগলি ও বস্তিতে ঘুরে বেড়াত বিদেশী বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা।প্রতিবেদনে বলা হয়, এরই মধ্যে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক এইডস সম্মেলনসহ কয়েকটি ইভেন্ট বাতিল করা হয়েছে। জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার এইড সংস্থাগুলো নীরবে তাদের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যাচ্ছে। যারা আছেন তারা ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরছেন। মার্কিন দূতাবাস তাদের নাগরিকদের জনবহুল স্থান, রাস্তা, ফুটপাত ইত্যাদি স্থানে চলাচলে সতর্কতা জারি করেছে।প্রতিবেদনে এনি মার্টন নামে এক অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের বাংলাদেশে অবস্থানের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কিছুদিন আগেও তিনি ঢাকার বিভিন্ন বস্তি ও জনবহুল জায়গায় নিঃসংকোচে যাতায়াত করতেন। কিন্তু এখন তিনি ঘর থেকে বের হতেই ভয় পাচ্ছেন। ৬১ বছর বয়সী মার্টন বলেন, আমি আমার অ্যাপার্টমেন্টে বন্দি হয়ে আছি। আমি বের হতে নিরাপদ বোধ করছি না। তিনি জানান, তিনি ও তার স্বামী দেশে ফিরে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন।প্রতিবেদনে ব্লগার অভিজিৎ রায় ও তার প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার প্রসঙ্গও তুলে ধরে হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবীদের ফিরিয়ে নেবে অস্ট্রেলিয়া
Share!