ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সামিয়াতুস সাদেকা ইমাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনেছেন তার স্বজনরা। তাদের দাবি, হত্যার পর লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে আÍহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে। এছাড়া ক্যামব্রিয়ান কলেজের হোস্টেলে ইমার রুম থেকে যে চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে সেটি তার হাতের লেখা নয় বলেও দাবি স্বজনদের। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর নর্দা এলাকায় ক্যামব্রিয়ান কলেজের ১২ নম্বর আবাসিক হোস্টেল থেকে ইমার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে গুলশান থানা পুলিশ। শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে ইমার লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিন রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা হয়নি। এদিকে ইমার মৃত্যুর পর আতংকে অনেকেই হোস্টেল সামিয়াতুস সাদেকা ইমার বাবা ইব্রাহিম খলিল শুক্রবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে যুগান্তরকে বলেন, এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছিল তার মেয়ে। দুই মেয়ের মধ্যে বড় ইমাকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। অভাব-অনটনের মধ্যেও অনেক কষ্টে তিনি মেয়েকে ঢাকায় রেখে পড়ালেখা করাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে তিনি তার মেয়েকে ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের বারিধারা মূল শাখায় ভর্তি করেছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি মেয়েকে দেখতে চাঁদপুরের কচুয়া থেকে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা স্ত্রী সুরাইয়া আক্তারকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। ওইদিন বিকালে তারা বড় মেয়ে ইমার সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, আত্মহত্যা করার মতো কোনো কারণই তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। এছাড়া মোবাইল চুরি সংক্রান্ত অপবাদের কারণে ইমা আত্মহত্যা করেছে বলে যে কথা প্রচার করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।ইমার মামা এএফএম শাহজালাল শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সাংবাদিকদের বলেন, গত মাসে তিনি তার ভাগ্নিকে এক স্যামসং গ্যালাক্সি মোবাইল সেট কিনে দেন। কিন্তু হোস্টেলে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকায় ইমা সেটি ব্যবহার করতে পারেনি। তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, যেখানে হোস্টেলে মোবাইল ফোন ব্যবহারই নিষিদ্ধ সেখানে কার ফোন কে চুরি করবে? পরিকল্পিতভাবে তার ভাগ্নিকে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে চালানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নর্দায় ক্যামব্রিয়ান কলেজের ১২ নম্বর আবাসিক হোস্টেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট জালালউদ্দিন রুমি বলেন, হোস্টেলে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ এটা ঠিক। তবে কেউ চুরি করে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে শাস্তিও দেয়া হয়।শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ইমার লাশ গ্রহণ করেন তার মামা এএফএম শাহজালাল। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, লাশের শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া না গেলেও গলায় কালো দাগ রয়েছে। হত্যা নাকি আত্মহত্যা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে গলার দাগ থেকে টিস্যু নিয়ে তা পরীক্ষার জন্য হিস্ট্রোপ্যাথলজিতে পাঠানো হয়েছে।শুক্রবার ৫৮/১/এ নর্দায় ক্যামব্রিয়ান কলেজের ১২ নম্বর আবাসিক হোস্টেলে গিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে ওই ঘটনার পর বেশির ভাগ ছাত্রী হোস্টেল ছেড়ে চলে গেছে। যারা হোস্টেলে এখনও আছে তাদের চোখে-মুখে এক ধরনের আতংক। কথা বলার জন্য হোস্টেলের কর্মকর্তাদের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তাকর্মী আবদুস সাত্তার জানান, শুক্রবার কোনো কর্মকর্তা হোস্টেলে আসেননি।এদিকে শুক্রবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই ঘটনায় মামলা হয়নি। গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নিহতের স্বজনরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গেছেন। তারা ফিরে এসে মামলা করবেন। তাদের ফিরতে দেরি হলে পুলিশ বাদী হয়ে আপাতত অপমৃত্যু মামলা করবে।বৃহস্পতিবার রাতে নর্দায় ক্যামব্রিয়ান কলেজের ১২ নম্বর আবাসিক হোস্টেল থেকে ইমার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে গুলশান থানা পুলিশ। এর আগে গত বছরের (২০১৪ সাল) ১৭ অক্টোবর ভাটারা থানার খিলবাড়িরটেক এলাকায় ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের হোস্টেলে জাহিদুল ইসলাম রায়হান নামে এক ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই সময় দাবি করে জাহিদ আত্মহত্যা করেছে। ওইদিন কলেজের হোস্টেলের ৬০৮ নম্বর কক্ষ থেকে জাহিদের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। সে একাদশ বিজ্ঞানের ছাত্র ছিল। জাহিদের বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছিলেন তার ছেলেকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল না। পুলিশের দাবি ছিল, মানসিক নির্যাতনের কারণে জাহিদ আত্মহত্যা করেছে। ধূমপান করার কারণে হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক ওমর ফারুক ও সহকারী সুপার আশরাফ আলী তাকে কলেজ থেকে বের করার ভয় দেখায়। যার কারণে জাহিদ আত্মহত্যা করে। এর আগে ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট ক্যামব্রিয়ানের গুলশান শাখার ছাত্রী হোস্টেল থেকে নাঈমা বিনতে নাহিদ (১৪) নামে আরও এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তার কক্ষ থেকে পুলিশ একটি রহস্যজনক চিঠিও উদ্ধার করে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এখনও তদন্ত চলছে।
স্বজনদের দাবি চিরকুটের লেখা ইমার নয়
Share!