প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের যা আছে তাই নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে, কারও কাছে মাথা নত করে নয়। জাতির পিতা আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মাতীরের রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমাণবিক চুল্লির জন্য কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণ কাজের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে বাংলাদেশকে বলা হতো গরিবের দেশ। কিন্তু আমরা সেই অবস্থার পরিবর্তন এনেছি। জাতির পিতা তার সাতই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না। সত্যি আমাদের দাবায়ে রাখা যায়নি, যাবে না। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, আমরাও পারি।
রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, পাকিস্তান সরকার আমাদের এখান থেকে সম্পদ নিয়ে যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। তাই পাকিস্তান আমলে আমাদের সামনে মুলা ঝোলানো হয়েছিল। ১৯৬১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এরপর সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয় পশ্চিম পাকিস্তানে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা ক্ষমতায় এসে আবারও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন। আমার বলতে দ্বিধা নেই, এ প্রকল্পের সঙ্গে ড. ওয়াজেদ মিয়াও যুক্ত ছিলেন। প্রকল্প যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায় এ জন্য তিনি যে মেয়ের জামাই এটা ভুলে গিয়েও সোচ্চার থাকতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এরপর ৯৬ সালে ক্ষমতায় আমার পর আমি আবার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজে হাত দিই। কিন্তু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরুর আগেই আমাদের সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, আমরা কয়লা, বায়ুসহ সব ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছি। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করেছি। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা। এ জন্য কোন কোন খাতে কী কী উন্নয়ন দরকার সে অনুযায়ী আমরা পরিকল্পনা করে এগোচ্ছি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনার শুরুতে আমি রাশিয়ার রোসাটমকে বলেছিলাম, আমাদের ছোট দেশ, জায়গা কম, তাই পারমাণবিক বর্জ্য আপনাদের দেশে নিয়ে যেতে হবে। তারা তাতে রাজি হয়েছে। আপনারা জানেন, এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তিও হয়েছে।
এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমালোচনাকারীদের ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাদের ভেতরে আত্মবিশ্বাস একটু কম। আর কারো কারো মধ্যে পরশ্রীকাতরতাও রয়েছে। আমরা কিভাবে, কী করে যাচ্ছি, আসলে তারা সেটা গভীরভাবে খতিয়ে দেখেন না। তাদের ধারণা অবাস্তব। আমি বলতে চাই, কারো চেয়ে আমার দেশপ্রেম কম নেই।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মাতীরের রূপপুরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১১টার দিকে প্রকল্প এলাকায় যে জায়গায় নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর তৈরি হবে, সেখানে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে কর্নিক দিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করেন তিনি।