Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

পোপ কোথাও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি

ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু পোপ ফ্রান্সিস আজ বিকেলে তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। তিনি মিয়ানমার থেকে এসে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন। ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে পোপকে বাংলাদেশে স্বাগত জানানো হবে।

পোপ এমন একটি সময়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করছেন, যখন রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা সারা বিশ্বেই তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। পোপ ফ্রান্সিসের এই সফর ছিল মিয়ানমারে প্রথম কোনো পোপের পদার্পণ। বাংলাদেশে অবশ্য ১৯৮৬ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল সফর করেছিলেন। পোপ গত সোমবার মিয়ানমারে তিন দিনের সফর শুরু করেন। সেখান থেকে আজ বিকেল ৩টায় তাঁর ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এর আগে থেকেই বাংলাদেশে রয়েছে আরো প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা। তাঁরা সবাই উপকূলের বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। সব মিলিয়ে এখানে এক মানবিক  বিপর্যয়কর অবস্থার তৈরি হয়েছে।

আগস্টের শেষে ভ্যাটিকান সিটির দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ভাইবোনদের ওপর অত্যাচার আর নিপীড়নের মন খারাপ করা প্রতিবেদন পড়ে পোপ ফ্রান্সিস ব্যথিত। তিনি অন্তরের অন্তস্তল থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নিপীড়ন অনুভব করতে পারছেন। এবং তাদের রক্ষায় পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করেছেন। এখন তিনি রোহিঙ্গা ভাইবোনদের প্রতি একাত্মতা জ্ঞাপনে এবং তাদের অধিকার রক্ষার দাবিতে সরব হয়ে তাদের দেখতে যাচ্ছেন।

কিন্তু মিয়ানমার সফরকালে পোপ ফ্রান্সিস ‘রাজনৈতিক সহনশীলতার কারণে’ যাতে কোনোভাবেই ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার না করেন, তার জন্য দেশটির খ্রিস্টান ধর্মের প্রধানের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়। একই পরামর্শ দেন রাখাইনের পরিস্থিতি নিরসনে গঠিত আন্তর্জাতিক কমিশনের প্রধান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। কারণ, মিয়ানমার সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের আলাদা জাতিসত্তা হিসেবে স্বীকার করে না। তারা মনে করে, রোহিঙ্গারা বহিরাগত; তারা ‘বাঙালি’। তিন দিনের সফরে পোপ মিয়ানমারে অনেক কর্মসূচিতে অংশ নিলেও কোথাও তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, পোপ ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ না করলেও তিনি এমন সব শব্দ ব্যবহার করেছেন, যাতে রোহিঙ্গাদের প্রতি তাঁর সহমর্মিতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

ফলে এখন প্রশ্ন উঠেছে, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এই প্রধান ধর্মগুরু ঢাকা সফরের সময় ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করবেন কি-না? যদিও তিন দিনের এই সফরের সময় সরকারি বা চার্চের কোনো কর্মসূচিতেই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পোপের কোনো আনুষ্ঠানিকতার কথা উল্লেখ করা নেই।

এ ব্যাপারে পোপ ফ্রান্সিস সংবর্ধনা কমিটির সমন্বয়ক ফাদার কমল কোড়াইয়া আজ বৃহস্পতিবার সকালে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সরাসরি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পোপ ফ্রান্সিস মহোদয়ের কোনো কর্মসূচি নেই। তবে আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় পোপ শান্তির জন্য আন্তধর্মীয় ও সর্বজনীন ঐক্য বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন। সেখানে অন্যান্য ধর্মের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত করা হয়েছে। কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।’

‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ না করার জন্য বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পরামর্শ পোপ ফ্রান্সিসকে দেওয়া হয়নি বলেও জানান ফাদার কমল কোড়াইয়া। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের বিষয়টি তাদের নিজেদের ব্যাপার। আমরা পোপকে এ ধরনের কোনো অনুরোধ করিনি বা পরামর্শ দিইনি। রোহিঙ্গাদের প্রতি এ দেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ সহমর্মিতা পোষণ করেন। পোপ মহোদয় তাদের প্রতি সহমর্মিতার কথা আগেই জানিয়েছেন।’

‘ফলে রোহিঙ্গা শব্দটি বলার বিষয়টি এখন পোপ মহোদয়ের নিজস্ব ব্যাপার। তিনি মনে করলে তা ব্যবহার করতেই পারেন। তিনি যদি রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেন, তাহলে আমরা খুশিই হব’, যোগ করেন ফাদার কমল কোড়াইয়া।

এদিকে বার্তা সংস্থা বাসসের এক প্রতিবেদনে পোপের সরকারি সফরসূচির বিস্তারিত কর্মসূচি প্রকাশ করা হয়েছে।  এতে বলা হয়েছে, বিকেল ৩টায় ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন পোপ ফ্রান্সিস। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে বরণ করে নেওয়া হবে।

সেখান থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে পোপ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন। সেখানে শ্রদ্ধা জানানো শেষে তিনি স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে। বিকেল সাড়ে ৫টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য বঙ্গভবনে যাবেন তিনি। সেখানেই সন্ধ্যা ৬টায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাদের সামনে বক্তব্য দেবেন পোপ ফ্রান্সিস।

সফরের দ্বিতীয় দিন পোপ শুক্রবার সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। সেখান থেকে বিকেল ৪টায় যাবেন প্রধান গির্জা পরিদর্শনে। সেখানে তিনি বিশপ ও জ্যেষ্ঠ যাজকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। শেষে সেখানে শান্তির জন্য আন্তধর্মীয় ও সর্বজনীন ঐক্য বিষয়ে বক্তব্য দেবেন।

সফরের তৃতীয় ও শেষ দিন শনিবার সকাল ১০টায় পোপ ফ্রান্সিস রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মাদার তেরেসার বাসভবন পরিদর্শনে যাবেন। সেখান থেকে হলি রোজারি গির্জার যাজক, ধর্মীয় নারী-পুরুষ এবং অন্যদের সামনে বক্তব্য দেবেন তিনি। এর পর সেখান থেকে প্যারিস কবরস্থান ও প্রাচীন গির্জা ঘুরে দেখবেন।

বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে নটর ডেম কলেজের তরুণদের সামনে বক্তব্য রাখবেন পোপ ফ্রান্সিস। বিকেল পৌনে ৫টায় তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top