দুর্নীতির অভিযোগে আটকের তিন সপ্তাহের বেশি সময় পর মুক্তি পেলেন সৌদি প্রিন্স মিতেব বিন আবদুল্লাহ। তবে এর বিনিময়ে নাকি সরকারের সঙ্গে এক বিলিয়নের বেশি মার্কিন ডলারের এক ‘সমঝোতামূলক নিষ্পত্তি’ চুক্তিতে রাজি হতে হয়েছে তাঁকে। সমঝোতার মাধ্যমে আটকদের মুক্তির বিষয়টি অনেক দিন ধরেই আলোচনায় থাকলেও এবার তা বাস্তবে সামনে এলো।
স্থানীয় সময় বুধবার সৌদি সরকারের এক মুখপাত্র এ কথা জানান। মঙ্গলবার সকালে মিতেবকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি। ৬৪ বছর বয়সী মিতেব সাবেক সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর ছেলে।
গত ৪ নভেম্বর দুর্নীতির অভিযোগ এনে প্রিন্স মিতেবসহ ২০০ জনের বেশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ব্যবসায়ীকে আটক করে সৌদি প্রশাসন। তাঁদের সৌদি আরবের বিলাসবহুল রিজ-কার্লটন হোটেলে রাখা হয়েছে। মিতেবসহ আরো তিনজন সরকারের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে মুক্তির সমঝোতা চুক্তিতে রাজি হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সৌদি আরবের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, প্রিন্স মিতেবের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, ভুয়া কর্মী নিয়োগ, ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের একটি চুক্তিসহ বিভিন্ন কাজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের চাচাতো ভাই মিতেব দেশটির এলিট ন্যাশনাল গার্ডের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। তবে দুর্নীতির অভিযোগ আনার পর তাঁকে দায়িত্বচ্যুত করেন সৌদি বাদশাহ সালমান।
বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সৌদি সরকারের নির্দেশে চালানো অভিযানে দেশটির ২০৮ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব ও ব্যবসায়িক লেনদেন তিন বছর ধরে তদন্ত করার পর এ পদক্ষেপ নেয় সরকার। তবে এঁদের সাতজনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বাকি ২০১ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় অর্থ তছরুপের তথ্য পাওয়া যায়।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে গঠিত এক দুর্নীতিবিরোধী কমিটি এ অনুসন্ধান চালায়। আটকদের মধ্যে ১১ রাজপুত্র, চারজন বর্তমান মন্ত্রী, বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও ব্যবসায়ী রয়েছেন। আটক ব্যক্তিরা সরকারি অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত বিমানে কেউ দেশত্যাগ করতে পারবেন না বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয় সরকার।
এ ধরনের অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে দুর্নীতিবিরোধী কমিটির সুস্পষ্ট আইনি ভিত্তি রয়েছে বলে জানান সৌদি অ্যাটর্নি জেনারেল। পাশাপাশি যাঁরা আটক হয়েছেন, তাঁরা সৌদি আইন অনুযায়ী সব ধরনের আইনগত সহায়তাও পাবেন বলে জানানো হয়।
তবে সৌদি আরবের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আটকদের মধ্যে অধিকাংশই সমঝোতার মাধ্যমে মুক্তি পেতে চান। তাঁরা তাঁদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে দেবেন বলেও জানিয়েছেন।