হঠাৎ করেই পিয়াজের বাজারে আগুন! যদিও বাজারে পিয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। নতুন পিয়াজও ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে।
আমদানিও হচ্ছে দেদার। অথচ কমছে না দাম। প্রতিদিনই এ পণ্যটির দাম বাড়ছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজের দাম ১০০ টাকা ছুঁয়েছে। আর আমদানিকৃত পিয়াজের কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
বাজার বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোথাও একটা সমস্যা রয়েছে। বাজার যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, সেখানে কোনো সিন্ডিকেট থাকতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল মনে করে বাজারে নতুন পিয়াজ আসতে শুরু করেছে। ফলে খুব শিগগিরই দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
তবে সংকট না থাকা সত্ত্বেও কেন দাম বাড়ছে তা খুঁজে বের করতে এ সেলের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বাজারে পিয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। আমদানি ব্যয় বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এ জন্য তাদের প্রতি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দেশে বছরে পিয়াজের চাহিদা ২০ থেকে ২২ লাখ টন। এর মধ্যে দেশেই উৎপাদন হয় ১০ লাখ টনের ওপরে। আর আমদানি করতে হয় ১০ লাখ টনের মতো। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ৭ লাখ ৯০ হাজার টন পিয়াজ আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। এর বিপরীতে নিষ্পত্তি হয়েছে ৭ লাখ ছয় হাজার টনের এলসি। আর দেশে উৎপাদন হয়েছে কমবেশি ১০ লাখ টন। এদিকে, মৌসুমের শুরুতেই নতুন পিয়াজও আসা শুরু করেছে। এমনকি সরকারি-বেসরকারিভাবে বর্তমানে পাঁচ লাখ টনের মতো দেশি পিয়াজ মজুদ রয়েছে। ফলে দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। এতে অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটও দায়ী বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর এক বছর আগে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে দেশি পিয়াজের দাম বেড়েছে ১৬২ শতাংশ এবং মাসের হিসাবে বেড়েছে ৭৯ শতাংশ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১৭ লাখ টন পিয়াজ উৎপাদিত হয়। এর বাইরে ৫ থেকে ৬ লাখ টন আমদানি করা হয়। যার বেশির ভাগ আসে ভারত থেকে। বছরের শেষদিকে এসে প্রতিবারই পিয়াজের দাম বাড়ে। তবে এ বছর অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেন বলেন, বাজারে কোনো সিন্ডিকেট থাকতে পারে। এজন্য নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও সচেতন হতে হবে। অধিক মুনাফার মানসিকতা পরিহার করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে, বাজারের সংকট মেটাতে তুরস্ক থেকে এক লাখ টন পিয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। দু-এক দিনের মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে ১০ হাজার টন পিয়াজ আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে এক লাখ টন পিয়াজ আমদানি করবে এ গ্রুপটি।