রাবি সংবাদদাতা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা আবাসিক হলের নিরাপত্তাকর্মী ও হল সুপারের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং তাঁদের নিয়ে ‘অশালীন মন্তব্য’ করার অভিযোগ উঠেছে।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের ফটকে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী ও হল সুপার তাঁদের সঙ্গে প্রায়ই খারাপ আচরণ করেন। এ ছাড়া ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করেন।
ছাত্রীরা বিভিন্ন সময়ে হল প্রশাসনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানালেও হল প্রশাসন তা না করে উল্টো ছাত্রীদের ওপরেই চটেন বলেও অভিযোগ ছাত্রীদের।
ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, হলের ফটকে কর্তব্যরত গার্ড মোস্তাক প্রায়ই ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করেন। এমনকি মোস্তাক ছাত্রীদের পোশাক নিয়েও অশালীন মন্তব্য করেন। এ ছাড়া হল সুপার মোহসিনা পারভীন ছাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ করে থাকেন।
কোনো ছাত্রী হলে দেরিতে এলে হল সুপার মোহসিনা তাঁদের বকাঝকা ও অশালীন মন্তব্য করেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে মোহসিনা তাঁদের হল থেকে বের করে দেওয়ারও হুমকি দেন।
হল সূত্রে জানা যায়, ছাত্রীরা অভিযুক্ত দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে গতকাল রোববার রাতে হলের ভেতর আন্দোলন শুরু করেন। পরে সেখানে হল প্রাধ্যক্ষ ফাহিমা খাতুন গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা সমস্যা সমাধান চেয়ে চার দফা দাবিতে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত আবেদন জানালে হল প্রাধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানের জন্য সাত দিনের সময় নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই হলের এক ছাত্রী বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হতাম। ওই সময় আশপাশে কেউ না থাকায় গেটে দায়িত্বরত গার্ড মোস্তাক আমাকে প্রতিদিনই বিরক্ত করত। এমনকি আমার পোশাক নিয়ে একদিন সে খুবই বাজে মন্তব্য করে। বাধ্য হয়ে আমি সকালে বের হওয়াই বন্ধ করে দিই। আর হলে নতুন হওয়ায় আমি কাউকে এ বিষয়ে কিছু জানাতেও পারিনি।’
হলের আরেক ছাত্রী বলেন, “হলের কর্মচারীরা আমাদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই আচরণ করে। টিউশনের কারণে অনেক সময় রাতে হলে ফিরতে দেরি হলে গার্ডরা উল্টাপাল্টা কথা বলে। হল সুপার মোহসিনা ছাত্রীরা হলে দেরিতে ঢুকলে খুবই ‘বাজে মন্তব্য’ করে। হল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বললে উল্টো তারা আমাদের ওপর চটে যান।”
হলের কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হলের রিডিং রুমে (অধ্যয়ন কক্ষ) বসার জন্য কোনো চেয়ার-টেবিল না থাকায় তাঁদের মেঝেতে বসে পড়ালেখা করতে হয়। হলের পানির সমস্যা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানির সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন কাজ সারতে বেগ পেতে হয়। তা ছাড়া হলের শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। হলের ডাইনিং চলছে মাত্র তিনজন কর্মচারী দিয়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনেছি। হলের প্রাধ্যক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
জানতে চাইলে হল সুপার মোহসিনা পারভীন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। অভিযোগগুলো ষড়যন্ত্রমূলক ও ভিত্তিহীন। হল থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়, আমি সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি। কেউ দেরিতে আসলে খাতায় স্বাক্ষর করে হলে ঢুকতে দেওয়া হয়। কাউকে হয়রানি করা হয় না।’
এ বিষয়ে নিরাপত্তাকর্মী মোস্তাকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেন, ‘আমি হলে গিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অভিযোগ শুনেছি। আমাদের হলটি নতুন। তাই আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধানে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।