প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়াকে শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার লক্ষ্যে তিনি ভারতসহ অন্যান্য নিকট প্রতিবেশীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে চান।
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়াকে একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা ভারত ও অন্যান্য নিকট প্রতিবেশীর সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাই।
যাতে আমরা সুপ্রতিবেশী হিসেবে পাশাপাশি বাস করতে এবং জনগণের কল্যাণ আমরা করতে পারি। ’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যৌথভাবে খুলনা-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও কলকাতা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে সবুজ পতাকা নেড়ে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর নয়াদিল্লীর কার্যালয় থেকে সবুজ পতাকা নেড়ে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
তাঁরা একই সঙ্গে ঢাকার সঙ্গে সিলেট এবং চট্টগ্রামের মধ্যে সংযোগকারী দু’টি রেল সেতু এবং ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের উভয় প্রান্তের বহিরাগমন ও কাস্টমস কার্যক্রমও উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর- এমপি, গণভবন প্রান্তে এবং দ্বিতীয় ভৈরব সেতু এলাকায় অবস্থানরত রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধণ শ্রীংলা, এনবিআর-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নতুন দু’টি রেলসেতু হচ্ছে দ্বিতীয় ভৈরব এবং দ্বিতীয় তিতাস সেতু।
এই দু’টি সেতু ভারতের লাইন অব ক্রেডিটে (এলওসি) ভৈরব এবং তিতাস নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে।দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এই সম্পর্ক বজায় থাকা দু’দেশের উন্নয়নের জন্য জরুরি বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক এ অঞ্চলে এবং অঞ্চল ছাড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর নতুন উদাহারণ সৃষ্টি করেছে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, আমাদের দু’দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য আগামীতে এ ধরনের আরো অনেক আনন্দঘন মুহূর্ত অপেক্ষা করছে। আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমি সবসময় আপনাদের সঙ্গে কাজ করায় অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকবো। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এই বন্ধন শুধু রেলের বন্ধন নয়, এর মাধ্যমে যাতে দু’দেশের জনগণের মাঝে একটি বন্ধন সৃষ্টি করে দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেটাই আমাদের কাম্য। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সুষমা স্বরাজ এবং মমতা ব্যানার্জীসহ ভারতের জনগণকে বিজয়া এবং দিওয়ালীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের আরেকটি অনন্য দিন আজকে। আজ ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের উভয় প্রান্তের বহিরাগমন ও কাষ্টমস কার্যক্রম চালু, খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের ফ্লাগিং আমরা করলাম, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে এসব কার্যক্রম উদ্বোধন করতে পেরেছি এবং মমতাজি এখানে উপস্থিত আছেন, এটা যে আমরা সফলভাবে করতে পারলাম এজন্য সকলকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, উভয় কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের দু’দেশের জনগণেরই একটি দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। কলকাতার চিতপুরে নতুন আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনালসহ এসব উদ্যোগ ঢাকা-কলকাতা এবং খুলনা-কলকাতার মধ্যে আরামদায়ক ভ্রমণে সহায়ক হবে। বিশেষকরে যাত্রীরা খুবই সুবিধা পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং বন্ধন এক্সপ্রেসের সার্বিক সাফল্য কামনা করে বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়, পর্যটন উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই আরো উন্নত হবে এবং আজকে যে একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো সেজন্য আমাদের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। ’
দু’প্রতিবেশী দেশের মধ্যে অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা একান্তভাবে অপরিহার্য ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তিনি বলেন, রেলওয়ে খাতে দু’দেশের মধ্যে চমৎকার সহযোগিতা বিদ্যমান। ২০০৯ সাল থেকে এই সম্পর্ক আরো জোরদার হয়েছে এবং বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ১৯৬৫ সালের পূর্ব পর্যন্ত যে রেললাইনগুলো চালু ছিল, যা ১৯৬৫ সালের পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো সেগুলো পুণরায় চালু করার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বেশকিছু লাইন চালু হয়েছে এবং বাকীগুলোও পর্যায়ক্রমেক চালু হবে।
ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ইতোমধ্যে আমাদেরকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যে লাইন অব ক্রেডিট দেয়া হয়েছে তার মাধ্যমে আমরা রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারছি।
দু’দেশের বিদ্যমান সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার থাকার পূনরুল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই সম্পর্ক রেল, নদী বা আকাশ পথে সংযুক্তিই নয়, আমরা এখন ইন্টারনেট, ব্যান্ডউইথ, উপকূলীয় নৌপথ, বিদ্যুৎ গ্রীড ইত্যাদির মাধ্যমেও আজকে আমরা সংযুক্ত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই সংযুক্ত হওয়ার নতুন নতুন পথ সার্বিক যোগাযোগের কাঠামোতে বিচিত্র মাত্রা যোগ করেছে। সম্প্রতি আমাদের এই যোগাযোগ মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে আঞ্চলিক সহযোগিতার যে রূপকল্প দিয়েছিলেন তা সবসময়ই আমাদের পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আজকের এ সমস্ত উদ্যোগ এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণ আরো সফল হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক এ অঞ্চলে এবং অঞ্চল ছাড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর নতুর উদাহারণ সৃষ্টি করেছে। আমি নিশ্চিত যে, আমাদের দু’দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য আগামীতে এ ধরণের আরো অনেক আনন্দঘন মুহূর্ত অপেক্ষা করছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে মিলে এই উদ্বোধন করতে পারায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে বাংলাদেশ সফরেও আমন্ত্রণ জানান।
পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে ভৈরবে অবস্থানরত রেলমন্ত্রীসহ স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মত বিনিময়কালে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে রেল বন্ধে বিএনপি’র ষড়যন্ত্রের উল্লেখ করেন এবং স্থানীয় জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে ভৈরব দ্বিতীয় সেতুটির নামকরণ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের নামে নামকরণ করার কথাও উল্লেখ করেন।