তপু শাহিনঃ আগামী বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন বলে দাবি করেছিলেন। এবার তার সেই সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার মতে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলে ‘দ্রুতই শেষ’ হবে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাতে ইউক্রেনের একটি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ কথা জানায়।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে তার দেশের যুদ্ধ ‘দ্রুত শেষ’ হবে এবং এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। তার দাবি, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে যে আলাপ হয়েছে, তাতে তারা ‘গঠনমূলক মতবিনিময়’ করেছেন বলেও জানান তিনি।
বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে তার আলোচনার বিষয়ে কিছু বলেছেন কি-না সে বিষয়ে জেলেনস্কি কিছু বলেননি। তবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি এমন কিছু ট্রাম্পের কাছ থেকে শোনেননি যা ইউক্রেনের অবস্থানের বিপরীতে যায়।
এর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে বলে আসছিলেন, রাশিয়া-ইউক্রেনসহ বিশ্বব্যাপী চলমান যুদ্ধ শেষ করা হলো তার প্রথম অগ্রাধিকার। ট্রাম্পের মতে, কিয়েভকে সামরিক সহায়তার নামে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের অপচয় হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছর ইউক্রেনের জন্য মার্কিন কংগ্রেস ৬১ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করেছিল। পরাশক্তি এই দেশটি ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশও। এ বিষয়ে জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্যা ওয়ার্ল্ড ইকনমির তথ্য মতে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত কিয়েভকে সাড়ে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিংবা উপকরণ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে সমর্থন কমছে, বিশেষ করে রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে। আর নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্প বারবারই যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদিও কীভাবে সেটি করবেন তিনি তা বিস্তারিত বলেননি।
এমন অবস্থায় ইউক্রেনের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, এটা নিশ্চিত, হোয়াইট হাউসে যেই টিম নেতৃত্ব দিবে তাদের নীতি অনুযায়ী যুদ্ধ দ্রুতই বন্ধ হবে। এটাই তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও নাগরিকদের প্রতি তাদের অঙ্গীকার।
তিনি আরও বলেন, কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় আগামী বছর নাগাদ যুদ্ধ বন্ধ করতে ইউক্রেনকে সবকিছুই করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রুশ বাহিনী। এরপর থেকে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে প্রায় ১২ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আড়াই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া- চারটি প্রদেশের আংশিক দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী। এই চার প্রদেশের রাশিয়ার দখলে যাওয়া অংশের সম্মিলিত আয়তন ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের এক-পঞ্চমাংশ। এছাড়া গত শুক্রবার দেশটির পূর্বাঞ্চলের রণাঙ্গনেও অগ্রগতি অর্জন করেছে রাশিয়ান বাহিনী।