Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

তামিম ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছেন !

মুশফিকুর রহিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর সিনিয়র। মাহমুদউল্লাহ বয়সে বড় বিধায় সম্বোধন করেন ‘রিয়াদ ভাই’ বলে। সাকিব আল হাসান সমবয়সী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সার্কিটে এই তিনজনের সরব উপস্থিতি রয়েছে।

বয়সের বাধা পেরিয়ে একই ফ্রেমে থাকার কথা তামিম ইকবালের। কিন্তু তিনি নেই। তামিমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটহীন জীবন প্রায় এক বছর হতে চলল। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি।

সেই থেকে তামিম খেলবেন কি খেলবেন না, এই ধাঁধার উত্তর আজও মেলেনি। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তামিমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যতিচিহ্ন হয়ে গেছে!

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে আগেই সরে দাঁড়িয়েছেন তামিম ইকবাল। কোমরের চোট যে ধরনের, তাতে পাঁচ দিনের টেস্টের ধকল নেওয়ায় ঝুঁকি আছে। তাই লাল বলে বাঁহাতি ওপেনারের ফেরার অনিচ্ছার কথা গোপন কিছু নয়।

বাকি ছিল ওয়ানডে। আগামী বছর পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তাঁর বিদায় নেওয়ার ইচ্ছার কথাও কারো অজানা নয়। অভ্যুত্থান-পূর্ব বোর্ডের সবাই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। পরিকল্পনা ছিল, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে নভেম্বরের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডেতে ফিরবেন তামিম। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই সম্ভাবনাও দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে।

 সেই তাড়নাই সম্ভবত হারিয়ে ফেলেছেন তামিম। নইলে মাহমুদউল্লাহ যখন মাটি কামড়ে অনুশীলনে ব্যস্ত তখন মিরপুর থেকে দূরে থাকবেন কেন তিনি!

মিরপুরে তিনি গিয়েছিলেন। সর্বশেষ তামিমকে মিরপুরে দেখা গিয়েছিল যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নিয়ে হোম অব ক্রিকেটে ঘুরিয়ে দেখাতে। ক্রিকেট থেকে দীর্ঘ বিরতির কারণে শরীর বেশ ভারী। সেই মেদ ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব। অতীতে কঠোর অনুশীলনে ওজন কমিয়ে ঝরঝরে হয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের চিন্তা থেকেই নাকি জুলাই মাসে দুবাই গিয়েছিলেন ফিটনেস ট্রেইনারের সঙ্গে কাজ করতে। মাঝপথে মিশন অসমাপ্ত রেখে তামিমকে ফিরতে হয় অগ্রজ নাফিস ইকবালের অসুস্থতার কারণে। সেখানেই থেমে আছে তামিমের ফিটনেস ফিরে পাওয়ার লড়াই।

কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে গতকাল ফোন করেও তামিমকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে, তিনি দুবাই গেছেন, শিগগিরই ফিরবেন। তবে ফিরেই ওজন কমাতে জিমে ঝাঁপিয়ে পড়বেন, এমন সম্ভাবনা নেই। যদিও বোর্ড সভাপতি হিসেবে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ফারুক আহমেদ ক্রিকেটার তামিম ইকবালকে মাঠে দেখতে চেয়েছিলেন। মাহমুদউল্লাহ বিশ্বাস করেন, ‘তামিমের পক্ষে আরো দু-তিন বছর খেলা সম্ভব।’ একই ধারণা দলের আরো অনেকের। কিন্তু তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৫ হাজার ২৪৯ আন্তর্জাতিক রান করা তামিম ইকবাল যেন অন্য ভাবনায় ডুবে।

সেই ভাবনার প্রকাশ ঘটেছিল গত বছর। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তিনি তখন অধিনায়ক। সিরিজের মাঝপথে আচমকা সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সবিস্তার না বললেও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নিজের অবসর গ্রহণের পেছনের আসল কারণটি পরোক্ষে জানিয়েছিলেন তামিম। ড্রেসিংরুমে যথাযথ গুরুত্ব পাওয়ায়ই অবসর নিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফিরেছিলেন, নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু আবার সেই ‘উপেক্ষা’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরিয়ে দেয় তামিম ইকবালকে।

শতভাগ ফিট না হওয়ায় তামিমকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখা হয়নি। বলা ভালো, তৎকালীন বোর্ড সভাপতির একটি পরামর্শ ‘উদ্ভট’ মনে হওয়ায় নিজেই জানিয়ে দেন বিশ্বকাপ দলে না রাখার বিষয়টি। ফিটনেস ইস্যুতে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানেরও আপত্তি ছিল। অথচ বিশ্বকাপের সময় জানা গেল, খোদ অধিনায়কেরই চোখে সমস্যা! সেটি তাঁর পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেছিল। দলের পরিণতিও হতাশাজনক।

তত দিনে তামিম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে চন্দিকা হাতুরাসিংহের অধীনে আর জাতীয় দলে খেলবেন না। প্রধান কোচও তামিমকে ফেরানোর কোনো চেষ্টা করেননি। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর একবারের জন্যও তামিমের খোঁজ নেননি হাতুরাসিংহে। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সময় বর্তমান অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল তামিমের। তখন নাজমুল নাকি টেস্টে ফেরার অনুরোধ করেছিলেন বাঁহাতি ওপেনারকে। ওয়ানডের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি।

এরপর দিন গেছে, তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপটে ধুলো জমেছে। সেই ধুলো সরানোর ইচ্ছা সম্ভবত তাঁর নিজেরও নেই। ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু জমকালো জার্নির শেষটা তবে কি অনাড়ম্বরেই ঘটে গেছে ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর?

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top