নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দেওয়া কোটা আন্দোলনকারীরা একাত্তরের গণহত্যা, মা-বোনের ওপর পাশবিক নির্যাতন এবং এদের সহায়তাকারী রাজাকারদের ভূমিকা সম্পর্কে জানে কি না সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। এখানে দুটো পক্ষ মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকার। ভাবতে অবাক লাগে রোকেয়া হলের মেয়েরাও বলে তারা রাজাকার। তারা কী শিক্ষা পেলো! তারা কী জানে ২৫ মার্চ কী হয়েছিলো! এসব তারা দেখেনি। তাই তারা রাজাকার পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধোর চেতনাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছে। লাখো মা-বোন নির্যাতিত। তাদের এই অবদান ভুললে চলবে না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনী যেভাবে এদেশের অত্যাচার করেছে, আমার খুব দুঃখ লাগে যখন রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও বলে তারা রাজাকার।’
তিনি বলেন, ‘তারা কি জানে একাত্তর সালের পচিশে মার্চ কি ঘটেছিল সেখানে? তিন’শ মেয়েকে হত্যা করেছিল, ৪০ জন মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল। পাকিস্তানি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। অনেক মেয়ে শাড়ি বা ওরনা নিয়ে ফাঁসি দিয়েছিল বলে তাদের সেগুলো পড়তে দেয়া হতো না। ওই এক কাপড়ে বসিয়ে রাখতো। দিনের পর দিন তাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করা হতো।’
এমন একজন মেয়েকে উদ্ধারের এক ঘটনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের মিত্র শক্তি ভারতীয় একজন শিখ সৈন্য তার মাথায় পাগড়ি খুলে ওই উদ্ধারকৃত মেয়েকে তার গায়ে পেঁচিয়ে নিয়ে আসে। এটি একটি ঘটনা মাত্র। এমন বহু ঘটনা আছে।’
এ সময় সরকার দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে চায় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলে পুরস্কৃত হবেন। সব মন্ত্রণালয়ে নিচের দিকেও অনিয়ম দুর্নীতি হয়। সেটি নজরদারিতে রাখতে হবে। কর্মক্ষেত্রে যে অর্থ ব্যয় হয় তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের কাজগুলোতে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
অনিয়ম-দুর্নীতি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি হলে সরকারের ওপর চাপানোর চেষ্টা হয়। দুর্নীতি করে খুব কম সংখ্যক মানুষ। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। অনেকে মনে করেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সরকারের গায়ে লাগে। কিন্তু দুর্নীতি যেই করুক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কেউ যেন চক্রান্ত করে দ্রব্যমূল্য বাড়াতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে, পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বাড়তে হবে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।